সৌদি আরবের মক্কায় মুসলিম উম্মাহর কেবলা পবিত্র কাবাঘরকে টার্গেট করে আত্মঘাতী হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সৌদি আরবের নিরাপত্তারক্ষীরা সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে। সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র মেজর জেনারেল মানসুর আল তুরকি মিডিয়ার কাছে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, পবিত্র কাবা’কে টার্গেট করে শুক্রবার সন্ত্রাসী হামলা চালানোর চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। এ খবর দিয়েছে সৌদি আরবের সরকারি মিডিয়া অনলাইন সৌদি গেজেট। মেজর জেনারেল মানসুর আল তুরকি বলেছেন, এই সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্রে অংশ নেয় তিন সন্ত্রাসীর একটি গ্রুপ। এর মধ্যে দু’জন মক্কায় অবস্থান করছিল। তৃতীয় জন জেদ্দায় অবস্থান করছিল। তারা কাবা শরীফে নামাজ আদায় করতে যাওয়া মুসলিমদের টার্গেট করেছিল। কিন্তু তাদের সেই ষড়যন্ত্র বানচাল করে দেয়া হয়েছে। তাদের প্রথম অপারেশন নস্যাৎ করে দেয়া হয় মক্কার আসিলাহ এলাকায়। দ্বিতীয়টি পাশেই আজইয়াদ আল মাসাফি এলাকায় নস্যাৎ করা হয়েছে। এ স্থান দুটি পবিত্র মক্কা শহরের কেন্দ্রীয় স্থানে অবস্থিত। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আজইয়াদ আল মাসাফি এলাকায় একজন আত্মঘাতী হামলাকারী তিন তলা একটি ভবনে আত্মগোপন করেছিল। নিরাপত্তা রক্ষীরা তাকে আত্মসমর্পণ করতে বললে সে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে নিরাপত্তা রক্ষীরা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাকে । তখন উপায় না পেয়ে সে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেয়। বোমা বিস্ফোরণে এ সময় ওই ভবনটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ৬ জন বিদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন। তাদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫ সদস্য সামান্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছে একজন নারী। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের জন্য আটক ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হচ্ছে না। ওদিকে অনলাইন বিবিসি জানায়, মুসলিমদের পবিত্র স্থান, মক্কার গ্রান্ড মসজিদে একটি সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে বলে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এখানেই মুসলমানদের পবিত্র ঘর কাবা অবস্থিত। একটি ভবন ঘিরে পুলিশের অভিযানের সময় একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিজেকে বোমায় উড়িয়ে দিয়েছে। সৌদি স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলছে, এ সময় ওই ভবনটি বিধ্বস্ত হয়ে ১১ জন আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কিভাবে বা কারা ওই হামলার পরিকল্পনা করছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু এখনো জানায়নি সৌদি কর্মকর্তারা। রমজান মাসের শেষের দিকে সারা বিশ্ব থেকে এখন মক্কায় সমবেত হয়েছেন লাখ লাখ মুসলমান। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে মদিনায় মসজিদে নববী’র কাছে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় চারজন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছিলেন। সমপ্রতি সৌদি আরবে বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার বেশ কয়েকটি নিজেদের চালানো বলে দাবি করেছে ইসলামিক স্টেট। যদিও এর বেশিরভাগ হামলাই চালানো হয়েছে দেশটির শিয়া সংখ্যালঘু আর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্য করে। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জোটে রয়েছে সৌদি আরব এবং সিরিয়া ও ইরাকের অন্য জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধেও দেশটি লড়াই করছে।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়, সৌদি আরবে সংবেদনশীল এক সময়ে এ হামলার চেষ্টা চালানো হলো। এ সপ্তাহের শুরুতে বাদশাহ সালমান তার পুত্র এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানকে নতুন ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ঘোষণা দেন। ৩১ বছর বয়সী সালমানের নেতৃত্বেই ইয়েমেনে শিয়া বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চলছে সৌদি আরবের লড়াই। এছাড়া শিয়া মুসলিম প্রধান ক্ষমতাধর দেশ ইরানকে নিয়েও আগ্রাসী মন্তব্য করেছেন তিনি। এদিকে, মক্কায় হামলা চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটি বলেছে, তারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় অন্য দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।