গত তিনদিনের মতো গতকালও গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এতে মহাসড়কের গাজীপুর অংশের অনেক স্থানেই যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেখা গেছে। আর মহাসড়কে যাত্রীর তুলনায় যানবাহন সংকটে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। অনেকেই বাস, ট্রাক, পিকআপ ও ভ্যানের ছাদে করে এবং হালকা যানবাহনে চড়ে যাচ্ছেন দূর-দূরান্তে। এতে বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। গাজীপুর মহানগর ও জেলার কয়েক হাজার কারখানা ছুটি হওয়ায় অনেকটাই ফাঁকা এখন শ্রমিক অধ্যুষিত গাজীপুর। নেই চিরচেনা কোলাহল। সড়ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ, আনসার ও কমিউনিটি পুলিশ একযোগে কাজ করছে। সব মিলিয়ে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় কম ভোগান্তিতে গাজীপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দু’টি মহাসড়ক পাড়ি দিচ্ছেন ঈদের ঘরমুখো মানুষ।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে ট্রাকচালক মারা যান। এতে ওই মহাসড়কে প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ফলে গাড়ির চাপ থাকায় সকাল থেকেই ওই মহাসড়কের কালিয়াকৈর বাইপাস, সূত্রাপুর ও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, মির্জাপুর অংশে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় যানবাহনের চাপ থাকলেও থেমে নেই কোনো যানবাহন। কিন্তু চন্দ্রা ও চান্দনা চৌরাস্তায় যাত্রী ওঠানামা করায় মাঝেমধ্যে জটলা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া ঘরমুখো মানুষের রিজার্ভ করা গাড়ির লম্বা লাইন রয়েছে দু’টি পয়েন্টেই।
বাড়তি মানুষের তুলনায় যানবাহন কম থাকায় যান সংকটে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। অনেকেই বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানের ছাদে করে এবং হালকা যানবাহনে চড়ে যাচ্ছেন দূর-দূরান্তে। এতে বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
যাত্রীদের অভিযোগ, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে কোনাবাড়ির ভাড়া মাত্র ১০ টাকা। কিন্তু এবারের ঈদে সেই ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ ভাড়া যানবাহন ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা হলেও সে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে পোশাক শ্রমিকরা বাড়তি ভাড়া গুনে হিমশিম খাচ্ছেন বাড়ি ফিরতে। তবে যানবাহন চালক ও সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা থেকে যাত্রী বোঝাই করে গন্তব্যে গেলেও ফেরার পথে খালি গাড়ি নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। একারণে একটু বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
ঈদুল ফিতরে টানা ছুটির কারণে ইতিমধ্যে ফাঁকা হতে শুরু করেছে শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর। প্রায় তিন হাজার কারখানা সমৃদ্ধ শিল্প নগরী গাজীপুরের বেশির ভাগ কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিকের অধিকাংশ গ্রামের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এতে ফাঁকা হয়ে গেছে চির চেনা গাজীপুরের দৃশ্যপট।
এবারের ঈদে মহাসড়কে তেমন যানজট না থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। বর্ষাকাল হলেও তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মহাসড়কের কোথাও পানি জমে নেই। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ছোট-বড় খানাখন্দ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করায় যানবাহন চলাচলে নেই তেমন প্রতিবন্ধকতা। ফলে গাড়ির চাপ থাকলেও থেমে নেই গাড়ি। আর এতে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে স্বস্তি প্রকাশ করছেন যাত্রীরা।
তবে পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে যানজট নিরসনে কাজ করছে। গাজীপুরের পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারাও রয়েছেন সড়কে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলছেন, জনদুর্ভোগ কমাতে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, আনসার ও কমিউনিটি পুলিশ কাজ করছে। এতে যানজট সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। বাড়তি ভাড়া নিয়ে কেউ অভিযোগ করেন নি জানিয়ে পুলিশ সুপার জানান, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিমুলিয়ায় যানজটের দুর্ভোগ থাকলেও স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের হাজারও নারী-পুরুষ
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, নৌ-পুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ ৫ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকা। সঙ্গে কাজ করছেন ৪-৫টি মোবাইল টিমও। এবার ঈদযাত্রায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৪ জেলার হাজারও নারী-পুরুষ নির্বিঘ্নে ও স্বস্তিতে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাট দিয়ে বাড়ি ফিরছেন। ঈদের আর মাত্র ২-৩ দিন বাকি রয়েছে। কিন্তু এবার শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় চুরি, ছিনতাই, অজ্ঞানপার্টিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনীয় রয়েছে। কিছু সময় পরপর যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়ছেন। তারপরও এবার শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় স্পিডবোট, লঞ্চ ও ফেরিতে কোনো রকম অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে না যাত্রীদের। এদিকে, ঈদ যতোই ঘনিয়ে আসছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় বাড়ছে। গতকাল শনিবার ভোর থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিমুলিয়া প্রান্তে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এরপর ধীরে ধীরে যানবাহনের সংখ্যা কমতে থাকে।
বিআইডব্লিউটিসির মাওয়াঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. খালেদ নেওয়াজ জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র শিমুলিয়া প্রান্তের ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন পার হয়েছে প্রায় ৫ হাজার।
এদিকে, স্পিডবোট, লঞ্চ ও ফেরিতে করে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা ঈদমুখো হচ্ছেন। আশেপাশের জেলার যাত্রীরা লোকাল যানবাহনে চড়ে শিমুলিয়া নেমে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিতে করে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে কাঠালবাড়ি ঘাট হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এসব যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে ঢাকার বাস সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও শিমুলিয়া
শিমুলিয়াঘাটে লৌহজং উপজেলার ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানিয়েছেন, জনগণ কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সে জন্য তারা সজাগ রয়েছেন। সবার সহযোগিতা নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরিঘাট স্বাভাবিক, চাপ নেই
স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, শনিবার সকাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ঈদে ঘরমুখো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী ও যানবাহনগুলো স্বাভাবিক গতিতেই ফেরি পার হচ্ছে। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ নেই। তবে ছোট গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের চাপ কিছুটা বেশি রয়েছে। ছোট গাড়িকে ফেরি পার হতে ঘাট এলাকায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আর যাত্রীবাহী কোচ-বাসগুলো ধীরগতিতে ফেরি পার হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি এজিএম জিল্লুর রহমান জানান, ঈদ উপলক্ষে দুইটি বড় ফেরি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে এই নৌরুটে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। নদীর দুই পাড়েই চারটি করে আটটি ঘাট সচল রয়েছে। যার কারণে শনিবার সকাল থেকে পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ একেবারেই কম। ঘরমুখো যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যেই যে যার গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, যাত্রীবাহী বাসের চাপ কমে যাওয়ায় কিছু কিছু ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফেরিতে যানবাহন পারাপারে কোনো ধরনের বিড়ম্বনা থাকবে না।