বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের দখল থেকে মুক্ত করা বাড়িটি পুলিশের জন্য প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেয়া হতে পারে। ঢাকা শহরে কর্মরত পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন ও মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা নিরসনে গুলশানের জমিটি চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠির ভিত্তিতে বরাদ্দ প্রক্রিয়া গত কয়েক দিনে বেশ এগিয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, ১৫৯ গুলশান এভিনিউ পুলিশকে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের চিঠি আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের করণীয় যতটুকু ততটুকু আমরা করছি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠির ভিত্তিতে ঢাকার ১৫৯, গুলশান এভিনিউ’র পরিত্যক্ত বাড়িটি পুলিশের অনুকূলে প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-কে চিঠি দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ২২শে জুন আরেকটি চিঠি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডে পাঠানো হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদের স্বাক্ষরে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ড থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠির জবাব এসেছে। পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ড থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠির সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ১৫৯, গুলশান এভিনিউর পরিত্যক্ত বাড়িটি বাংলাদেশ পুলিশের অনুকূলে প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কোনো আপত্তি নেই। সরকার বিষয়টি সদয় বিবেচনা করতে পারে। এতে বলা হয়, ঢাকা শহরে কর্মরত পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন ও মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা কিছুটা নিরসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাড়িটি প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে। এ বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি সংক্রান্ত ১৯৮৬ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর প্রকাশিত পরিত্যক্ত সম্পত্তির গেজেটের ‘ক’ তালিকাভুক্ত সম্পত্তি। বাড়িটি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আপিল ও রিভিউ মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে সরকার নিজস্ব দখল ও নিয়ন্ত্রণে এনেছে। বাড়িটি বর্তমানে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিজস্ব দখল ও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এ পরিত্যক্ত বাড়ির মূল নথি ১৯৯৫ সালের ১৯শে মার্চ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলে পাঠানো হয়। এরপর থেকে নথিটি পাওয়া যায়নি। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিত্যক্ত বাড়ির বিষয় নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দুটি আইনের বিধান প্রযোজ্য। পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ১৯৭২ সালের আদেশের ৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই আদেশের বিধানগুলো কার্যকর, হস্তান্তর বা অন্য কোনোভাবে পরিত্যক্ত সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের উদ্দেশ্যে সরকার যা প্রয়োজন বা সমীচীন মনে করবে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় বা আনুষঙ্গিক ব্যয়ভার গ্রহণ করতে পারবে। এ ছাড়া পরিত্যক্ত ভবন অর্ডিন্যান্সের ১৯৮৫ সালের ১২ ধারায় বলা হয়েছে, সেকশন ৫ এর অধীনে প্রকাশিত যেকোনো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত যেকোনো ভবন হস্তান্তর বা যেকোনোভাবে অপসারণে সরকারের অধিকার, ক্ষমতা বা কর্তৃত্বকে এই অধ্যাদেশের বিধানগুলোতে সীমিত, সীমাবদ্ধ বা কোনোরকম প্রভাবিত করতে পারবে না। এদিকে ৩৬ বছর গুলশানের ওই বাড়িটিতে বসবাস করেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ। উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী গত ৭ই জুন বাড়িটি থেকে তাকে উচ্ছেদ করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় দখল বুঝে নেয় রাজউক।