ঈদে মুক্তি পেয়েছে কলকাতার নায়ক জিৎ ও শুভশ্রী অভিনীত চলচ্চিত্র ‘বস-টু’। ছবিতে বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়াও আছেন। ছবিটি দেশের ১১১টি সিনেমা হলে চলছে। প্রথম দুদিন হাউসফুল হলেও ঈদের তৃতীয় দিন কেমন চলেছে ছবিটি, তা জানতেই ঢাকার কয়েকটি সিনেমা হলে যান এই প্রতিবেদক।
বুধবার দুপুর আড়াইটায় বলাকা সিনেমা হলে দর্শকদের জটলা দেখা যায়, কিছুক্ষণ পর সিনেমা শেষ হবে, শুরু হবে নতুন শো, টিকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আবির। ঢাকার বলাকা সিনেমা হলে ‘বস-২’ দেখতে আসার কারণ জানতে চাইলে এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘আসলে ঈদের সময় সিনেমা হলে ছবি দেখি, সাধারণত সারা বছর ছবি দেখা হয় না। আর এই ছবিটি দেখছি কারণ সিনেমা হলটা বাসার কাছে, এখানে অন্য ছবি চালানো হলেও সেটাই দেখতাম।’
আবির আরো বলেন, ‘আসলে এই সিনেমা হলে জিতের ছবি চালানো ঠিক হয়নি। কারণ এই আশপাশে অনেক কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেল আছে। মূলত আমরাই এই হলের দর্শক, এখন আমরা কিন্তু আমাদের দেশের শিল্পীদের নিয়ে নির্মিত ছবি দেখতে চাইব, খারাপ হলে প্রতিক্রিয়া জানাব, এতে হয়তো আমাদের চলচ্চিত্রে কিছু যোগ হলেও হতে পারে। কিন্তু এসব ছবি নিয়ে কথা বলে আমাদের দেশের লাভ কী? জিতের ভালো হলে আমাদের রাষ্ট্রের লাভ কী?’
কথা বলতে বলতে আগের শো শেষ, দর্শক হল থেকে বেরুচ্ছে। নারী দর্শক ছিল চোখে পড়ার মতো। কথা হয় দুবাই প্রবাসী সুভাষিণীর সঙ্গে, তিনি বলেন, ‘আমি দুবাইতে ঘরে বসে টিভিতে এই কলকাতার ছবি দেখি, দেশে ঈদ করতে এসে মনে হলে দেখে আসি ছবিটা, কিন্তু দেশের বড়পর্দায় জিতের ছবি ভালো লাগছে না, এদের আসলে আমরা ছোটপর্দায় দেখে অভ্যস্ত। তা ছাড়া যেহেতু আমি দেশের বাইরে থাকি- তাই দেশের প্রতি আমার আলাদা একটা মায়া কাজ করে।’
সুভাষিণী আরো যোগ করেন, ‘কিছুদিন ধরেই ছবিটা নিয়ে আলোচনা, চলচ্চিত্র তারকাদের প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম টিভি, পত্রিকায়। আমার কাছে মনে হলো ছবিতে বাংলাদেশের কোনো কিছু তেমনভাবে নেই। কথা বলার ধরন, আচার ব্যবহার, একেবারেই ভিনদেশি, আমার মনে হয় এসব বিষয়ে আমাদের সজাগ হওয়ার প্রয়োজন আছে।’
পাশেই দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলেন আনসার মো. হামিদুর, তিনি বলেন, ‘আরে আমি মনে করেছিলাম কলকাতার দাদা ফাটিয়ে দেবেন। কিন্তু সিনেমা দেখে আমার একেবারেই ভালো লাগেনি। টিভিতে চায়ের স্টলে বসে সব সময় তাদের ছবি দেখি, তখন ভালোও লাগে কিন্তু সিনেমা হলে একেবারেই ভালো লাগল না।’
বলাকা সিনেমা হলের কর্মচারী মোহাম্মদ শহিদ মিয়া বলেন, ‘না ভাই আগের বছরের মতো ছবি ব্যবসা করছে না। প্রথম দিন হাউসফুল হলেও পরে দর্শক কমেছে। জিতের ছবি আসলে আমাদের দেশের দর্শক খেতে চায় না। এখানে দরকার ছিল শাকিব খান, অপু বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’ ছবিটা, দেখতেন দর্শক জায়গা দেওয়া যেত না। এটা যৌথ প্রযোজনা বলে তাও চলছে, কলকাতা থেকে যে ছবিগুলো আসে সেগুলো একদমই চলে না।’
ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলেও চলছে বস-২, অলস ভঙ্গিতে বসে আছেন টিকেট চেকার মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘নারে ভাই দর্শক নাই, কেন নাই সেটা জানি না, মনে করেছিলাম পাশের পূর্ণিমা সিনেমা হল বন্ধ, আমাদের হলে সব দর্শক আসবে, কিন্তু এসে শাকিব-অপুর ছবি কোথায় চলে জানতে চায়। তারপর পোস্টার দেখে চলে যায়।’
সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন আরেক টিকেট চেকার কাইয়ুম, তিনি বলেন, ‘আমি টিভিতে বস-১ ছবিটি দেখেছি, সেটা অনেক ভালো ছিল, এই ছবির গল্প মিলাতে পানিনি। আরে কলকাতা হোক আর বাংলাদেশ, দর্শক আগে চায় ছবির গল্প, এরপর চায় অভিনয়, তাদের কথা বলার ধরন এ দেশের মানুষ পছন্দ করে না, ছবি দেখবে কী? দেখি শুক্রবার ঢাকায় সবাই ফিরবে। তখন যদি দর্শক আসে।’
সুত্র: এনটিভি