দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কর্মরত ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ আরো তিন বছর বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সপ্তাহে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানায় অ্যাকর্ড কর্তৃপক্ষ। এর ফলে আগামী বছরের জুনের পর আরো তিন বছর তাদের পরিদর্শনের আওতায় থাকা ১ হাজার ৬০০ কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভাল করবে তারা। অ্যাকর্ডের এই প্রস্তাব নিয়ে নাখোশ পোশাক কারখানা মালিকরা। তাদের মতে, মেয়াদ বাড়াতে চাইলে সরকার ও বিজিএমইএ’কে সঙ্গে নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, আমরা মনে করেছিলম অ্যাকর্ড এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার পর জানা গেছে অ্যাকর্ড প্রস্তাব করেছে। তিনি বলেন, গত রোববার বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতেরা আমাদের বলেছেন, অ্যাকর্ডের সময় বৃদ্ধির ঘোষণাটি প্রস্তাব। আলোচনার সুযোগ আছে।
জানা যায়, নতুন প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পোশাক খাতের সরবরাহ ব্যবস্থায় থাকা সুতা, বস্ত্র, সরঞ্জাম ও মোড়কীকরণ পণ্য উৎপাদনের কারখানা পরিদর্শন ও কারখানার অভ্যন্তরে শ্রমিক সংগঠনের স্বাধীনতার বিষয়টি তদারক করার অধিকার পাবে অ্যাকর্ড। মূলত এই দু’টি বিষয় নিয়ে পোশাকশিল্পের মালিকেরা বেশি চিন্তিত।
মাহমুদ হাসান বলেন, আমরা মনে করি আগামী বছরের মধ্যে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সভুক্ত সব কারখানার সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। ফলে তাদের থাকার প্রয়োজন নেই। তবুও তারা যদি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে চায়, সে জন্য সরকার ও বিজিএমইএকে জানাতে হবে। সরকার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে সমন্বিতভাবে তা করতে হবে। এ বিষয়টি আমরা তাদেরকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি।
অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আমিরুল হক আমিন মনে করেন, অ্যাকর্ডের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণে তৈরি পোশাকশিল্পের যথেষ্ট ভালো হবে। অ্যাকর্ডের অধীনে থাকা কারখানাগুলো অনেক সংস্কারকাজ শেষ করেছে। আরও কাজ বাকি আছে। তাই সময় লাগবে। আমি মনে করি না, অ্যাকর্ডের কারণে পোশাকশিল্পের কোনো ক্ষতি হবে। বরং কর্মপরিবেশের উন্নতি হবে, বাংলাদেশি পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ও আস্থা আরও বাড়বে।
এদিকে ইস্যুটি নিয়ে গত রোববার চার দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বৈঠকে সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট, কানাডিয়ান হাইকমিশনার ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্টদূত উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ’র শীর্ষ নেতাসহ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সিদ্ধান্তটি নেয়ার আগে অ্যাকর্ডের উচিত ছিল বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আগে আলোচনা করা। সিদ্ধান্তটি প্রত্যাশিত নয় বলে বৈঠকে রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছি। অ্যাকর্ড প্রস্তাব দিতে পারে। কিন্তু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না।
এদিকে তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ২০২১ সাল পর্যন্ত থাকার বিষয়টি অ্যাকর্ড বিজিএমইএকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে। অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ সোমবার বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে এক ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন।
রানা প্লাজা ধসের পর সাসটেইনেবল কমপ্যাক্টের মাধ্যমে অ্যাকর্ড গঠিত হয়। প্রায় ২০০ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং বৈশ্বিক ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছে। চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরির কাজ করে এমন প্রায় ১ হাজার ৬০০ কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নের দায়িত্বে আছে অ্যাকর্ড। আগামী বছরের মে মাসে তাদের কার্যক্রম গোটানোর কথা ছিল। অবশ্য গত সপ্তাহে অ্যাকর্ড জানায়, ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত থাকবে তারা। এরপর তারা বাংলাদেশ সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে চলে যাবে।
অ্যাকর্ড দাবি করেছে, তাদের নতুন সংস্করণের প্রস্তাবে ইন্ডাস্ট্রিঅল, ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়নসহ কয়েকটি কোম্পানি স্বাক্ষর করেছে। শিগগিরই বাকি কোম্পানিগুলো স্বাক্ষর করবে। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রিঅল জানিয়েছে, কেমার্ট অস্ট্রেলিয়া, টার্গেট অস্ট্রেলিয়া, প্রাইমার্ক, এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স, সিঅ্যান্ডএ, কিক, আলদি সাউথ, আলদি নর্থ, লিডল, লবলো, পিভিএইচ ইতিমধ্যে অ্যাকর্ডের নতুন প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছে।
অ্যাকর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জোটের কারখানাগুলো এখন পর্যন্ত ৭৭ শতাংশ ত্রুটি সংশোধন শেষ করেছে। ৪০০ কারখানার সংস্কারকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ৬১ কারখানা প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত সব ত্রুটি সংশোধন শেষ করেছে।