সকাল থেকে আকাশ মেঘলা ছিল। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি। কিন্তু দুপুর গড়াতে উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ। কালো মেঘ ধীরে ধীরে সাদা হয়ে গরম হতে থাকে পরিবেশ। রাজধানীতে গেলো কয়েকদিন এমনই আবহাওয়া বিরাজ করছে। বিভিন্ন জায়গায় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে, ফলে তৈরী হয়েছে জলাবদ্ধতা। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি। আবার অনেক মহাসড়কে ভাসছে অথৈ জল। ফলে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলোয় দেখা দেয় তীব্র যানজট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর, আগারগাঁও, প্রগতি সরণি, বনানী, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল ঘুরে এমন চিত্র দেখাগেছে বেশিরভাগ এলাকায় ইট, খোয়া, বালু, পাথর উঠে মাটি বেরিয়ে পড়েছে। ফলে থেমে থেমে চলছে গাড়ি। এতেই মূলত যানজট বেড়েছে।
এসব এলাকা ঘুরে আরো দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ সড়কে পানি জমেছে। রাস্তা খুড়া খুড়ির কারণে পানি সরতে পারছে না। ফলে রাস্তায় জমে থাকা পানির কারণে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ রাস্তাঘাটে হাটু পানি জমে থাকায় গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে অনেককে জুতো-স্যান্ডেল হাতে নিয়ে, শার্ট-প্যান্ট গুটিয়ে যেতে হচ্ছে। পানি পার হতে অনেকেই রিকশার সাহায্য নিচ্ছেন। শুধু পানি পার করতে অনেকস্থানে রিকশা ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১০-২০ টাকা। এছাড়া নগরীর অলিগলিতে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজিঅটোসহ বিভিন্ন ছোট ছোট পরিবহনের চালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।বেলা ৩টার দিকে ফার্মগেট এলাকায় দেখা যায়, মৎস্য ভবন থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে শাহবাগ শিশুপার্ক পর্যন্ত শ’ শ’ গাড়ি ঠাঁই দাঁড়িয়ে। কখনও তা একটু এগিয়েই আবার থেমে যাচ্ছে। ত্যক্ত-বিরক্ত যাত্রী ও গাড়ির স্টাফদের অনেকে জানান, একেকটি সিগন্যাল পার হতে আধাঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে।
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত নুসরাত জানান, একেতো বৃষ্টিতে গাড়ি স্বল্পতা। তার ওপর গাড়িতে উঠলেও কিছুটা পথ যেতে না যেতে গাড়ি জ্যামে আটকে থাকছে। রাস্তায় পানি। হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই। দিলকুশার বেসরকারি ব্যাংকের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, উত্তরা থেকে বনানী হয়ে ফার্মগেট আসতেই তার ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। এদিকে নগরজুড়ে যানজটের কারণে বৃষ্টি ও পানি উপেক্ষা করে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি।কারওয়ান বাজারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুস্মিতা চৌধুরী বলেন, বনানী থেকে কারওয়ান বাজার এসেছেন দুই ঘণ্টায়। বিভিন্ন এলাকায় পানি জমি থাকায় যানবাহন না পাওয়ার কথাও জানালেন তিনি।ব্যস্ত সড়কের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতেও রিকশাযাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে দেখা গেছে। এসময় আটকে থাকা অনেক যাত্রীকে ঘুমাতেও দেখা যায়।
যানজটে সবচে’ বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারী, শিশু ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা।বলাকা বাসের চালক মোহাম্মদ বেল্লাল জানান, যাত্রাবাড়ি থেকে গাড়ি ছেড়েছে সকাল ১০টায়। দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত বাসটি দাঁড়িয়েই থাকে মগবাজার মোড়ে।দুপুর ২টায় বিজয় স্মরণী ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট বলেন, চার দিকের রাস্তাই বন্ধ হয়ে আছে। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। সকাল থেকেই চলছে এ অবস্থা। এতে নিজেরাও অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন।