স্বদেশ নিউজ২৪.কম
সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও তিস্তা নদীতে ভারতের গজল ডোবা ব্যারেজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের ডাটা এ্যান্ট্রি অপারেটর আবুল কালাম আজাদ জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা কবলিত মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা বন্যা কবলিত সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার চর পুঠিয়াবাড়ি ও কাটাওয়াপদা এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
কাটাওয়াপদা ক্রসবাঁধে আশ্রয় নেয়া বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে আজ তিনি ত্রাণ বিতরন করবেন বলে মেয়র জানিয়েছেন।
এদিকে প্রতিনিয়ত যমুনা নদীর পানি বাড়তে থাকায় চরাঞ্চল ও নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এতে করে বিপাকে পড়েছেন গরুর খামারীরা। যমুনা নদীর চরে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরুর খামার রয়েছে। চরের ঘাস বিচালি খেয়ে গরুগুলো বেঁচে থাকে। চর ডুবে যাওয়ায় খামারীরা বিপাকে পড়েছেন।
বন্যা কবলিত এলাকায় রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পানির নিচে তলিয়া যাওয়াতে রাস্তা ঘাটের বিপর্যয় হয়েছে।
জেলার ৪৮ কিলোমিটার বাঁধে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী জানান, বন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার আউশ ধান, সবজি, আমনের বীজতলা, পাটসহ ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে দেড় হেক্টর আউশ ধানের জমি রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
সিরাজগঞ্জ চর পুঠিয়াবাড়ি এলাকা আকমল হোসেন বলেন- আমার ঘরে ৮-৯ দিন হলো পানি উঠেছে। আমি অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। পানিতে ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাজ কর্ম নাই। এখনও সরকার আমাদের কিছু দেয়নাই। এখন কিভাবে দিন চলছে বুঝতে পারছি না। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। সরকারিভাবে কিছু বরাদ্দ দিলে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারতাম।
সিরাজগঞ্জ ক্রস বাঁধ -৩ এ আশ্রয় নেয়া আনোয়ারা বেগম বলেন, আমি গরীব দুঃখী। বাসা বাড়িতে কাজ করে খাই। আমার কোন বেটা বেটি নাই। পানির জন্য ঘরের মধ্যে যেতেও পারি না, থাকতেও পারি না। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা ত্রাণ পাবো না। ঘরে পানি উঠেছে তাই বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছি। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কিছু দেয়নি। আমরা পাইনি। আমরা সরকারের কাছে দাবি করি যে আমরা বাঁধের উপর যে মানুষগুলো আছি দুঃখের সাথে আছি। সরকার চাল দিলে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবো।
ক্রস বাঁধ -৩ এ আশ্রয় নেয়া রোকেয়া বেগম বলেন, আমরা চাইনা বাঁধের (ক্রস বাঁধ) নিচে বাস করি। আমার ৭ টা ঘর। ৫ টা ঘর আছে। ২ টা ঘর ভেসে গেছে। ৯ টা ছেলে মেয়ে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি বাঁধে। পুলিশ এসে তাড়াহুড়ো করে ঘর ভেঙ্গে দেয়। আমাদের খাবার নাই।
আমাদের জন্য কিছু শুকনা খাবার দরকার। পানি উঠতে উঠতে ঘর সমান হয়ে গেছে। বর্তমানে আমাদের কিছুই নাই। চায়না বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে কষ্টে আছি। সরকার কিছু বরাদ্দ দিলে কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম ভুট্টো বলেন, আমার ১৪ নং ওয়ার্ডে ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি। মেয়রসহ আমি বন্যা এলাকা পরিদর্শন করেছি। পাশাপশি অস্থায়ী ভাবে ল্যাট্রিন, টিউবওয়েল, নৌকার ব্যবস্থা করেছি। সরকারিভাবে যে বরাদ্দ আসবে তা আমরা বিতরন করে দিবো। আমরা ইতিমধ্যে ১৫শ লোকের একটি তালিকা করেছি। বৃহস্পতিবার থেকে ধারাবাহিক ভাবে তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরন করবো।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা বলেন, সিরাজগঞ্জ একটি নদী ভাঙ্গন এলাকা। ৯টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ৩টি উপজেলা সদর, শাহজাদপুর এবং কাজিপুর বেশি হয়েছে। আমরা প্রাথমিক তালিকা করেছি। এর মধ্যে আমরা ২ হাজার মানুষের তালিকা করতে পেরেছি। শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ীতে বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এখানকার কিছু মানুষ নতুন আশ্রয়স্থলে চলে গেছেন। এখানে ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আমরা এ্যাডভান্স বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। তারা খুব তাড়াতাড়ি ত্রাণ বিতরন কার্যক্রম শুরু করবে। পর্যাপ্ত পরিমান ত্রাণ রয়েছে। তা যথাসময়ে বিতরন করা হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৮৪ মে.টন চাল ও নগদ ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা প্রতিদিন বন্যা কবলিত এলাকায় সরেজমিন গিয়ে বন্যার্তদের মাঝে এগুলো বিতরণ করেছে।