রুমা সড়কের ওয়াই জংশন দলিয়ানপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে নিহত এক মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টায় মাটিচাপা অবস্থায় সেনাবাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা লাশটি উদ্ধার করে। তার নাম চিংমে মারমা (১৯)। তার বাড়ি বান্দরবানের রুমায়। নিখোঁজ বাকি চারজনকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী, পুলিশ, দমকল বাহিনী, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ স্থানীয়রা অভিযান চালাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় এখনো আনুমানিক ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন রুমা উপজেলার স্বাস্থ্যকর্মী মুন্নী বড়ুয়া, উপজেলা পোস্ট মাস্টার জবিউল আলম, গৌতম নন্দি ও চিংমে চিং মারমা। এছাড়া এ ঘটনায় আহত তিনজনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টার টানা বর্ষণে বান্দরবান-রুমা সড়কের ওয়াই জংশনের দলিয়ানপাড়ার কাছে সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়লে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল সকাল ১১টার দিকে ওই অংশ দিয়ে যানবাহনের যাত্রীরা পায়ে হেঁটে পার হওয়ার সময় তাদের ওপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। মাটিচাপায় অন্তত পাঁচজন নিখোঁজ ছিলেন। পরে চিংমে মারমার লাশ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল যুবায়ের সালেহীন, পিএসসি জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিৎ কুমার রায়, পৌর মেয়র মুহাম্মদ ইসলাম বেবী ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষ্মী পদ দাশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পরপরই সেখানে সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা অভিযান চালিয়ে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করেন। তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ১৯ ইসিবি’র নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তা ওয়ারেন্ট অফিসার নাজমুল হুদা বলেন, পাহাড়ের মাটি ধসে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত সংস্কার কাজ করার মাধ্যমে বান্দরবান-রুমা সড়কে পুনরায় যানবাহন চলাচল শুরু করার কাজ জোরদার করা হয়েছে। ঘটনার সময় সেখানে সেনা প্রকৌশলের সদস্যরা সড়কের সংস্কার কাজ করছিলেন। ভারি বর্ষণের কারণে গত জুন মাসে রুমা সড়কের ওই অংশে পাহাড় ধসে পড়লে প্রায় এক মাস সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল।
উল্লেখ্য, বান্দরবানের সদর উপজেলাসহ লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদমসহ বিভিন্ন সময় প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসে ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৭৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ গত ১৩ই জুন শহরে প্রবল বর্ষণে তিন শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করেই পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে বহু পরিবার। জেলা সদরের লাঙ্গিপাড়া, ইসলামপুর, কাশেমপাড়া, সিদ্দিক নগর, কালাঘাটা আগাপাড়া, বনরুপাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিবছর বর্ষাকালে পাহাড় ধসে দুর্ঘটনা ঘটলেও স্থানীয়রা সেই বিপজ্জনক অবস্থানগুলো থেকে সরে যাচ্ছে না। তবে এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী বাসিন্দারা জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য অন্যত্র আবাসনের ব্যবস্থা করে না দেয়ায় নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে চান না তারা।