সীতাকুণ্ডে জঙ্গল ছলিমপুরে জমির মূল্য কম হওয়ায় মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও পাহাড়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করছে কমপক্ষে ৪২ হাজার মানুষ। এ যেন রাজ্যের ভিতর আরেক সাম্রাজ্য। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এদের সংখ্যা। এরা মূলত ছিন্নমূল। ৪২ হাজার মানুষকে প্রায় এগারটি সামাজে ভাগ করে এদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ‘ছিন্নমূল বস্তিবাসী সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠনের তৈরি করা নিয়ম-কানুন। দুর্গম জঙ্গল ছলিমপুরে হাজার হাজার একর সরকারি পাহাড় দখল করে এ সংগঠনের ব্যানারে অবাধে বেচাকেনা চলছে। চট্টগ্রাম শহরের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় বিভিন্ন অপরাধীরা অপরাধ করে সহজেই এখানে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। ফলে এ জায়গাটিকে এখন অপরাধীদের নিরাপদ স্থান হিসেবে খ্যাতিও পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই এলাকায় পাহাড় ধসে শিশুসহ ৫ জন নিহত হলে অবৈধ বসতি স্থাপন নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় ২০০১ সালে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করে আক্কাছ আলী। সম্প্রতি বিএনপি সমর্থিত আক্কাছ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এরপর নেতৃতে আসে আক্কাছের অনুসারী রোকন উদ্দিন। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগের অনুসারী হয়ে নেতৃত্ব দখলে নেয় যুবলীগ নেতা মশিউর রহমান। চলতি মাসের প্রথম দিকে পুনর্গঠন করা হয় তাদের ওই কমিটি। এতে সভাপতি করা হয় গাজী সাদেক এবং সাধারণ সম্পাদক হয় মশিউর রহমান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাগজে-কলমে জঙ্গল সলিমপুরের অবস্থান সীতাকুণ্ড হলেও পাহাড়ের প্রায় দুই হাজার একরের স্থানটি চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদের সঙ্গে লাগোয়া। তাই শহরের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নিম্ন আয়ের মানুষ কম মূল্যে পাহাড়ি জায়গা কিনে মৃত্যুর ঝুঁকি জেনেও ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। তাছাড়াও এটি ছিনতাই, ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্বর্গরাজ্য। সন্ত্রাসীরা দুর্গম এই এলাকাকে নিরাপদ সাম্রাজ্য বানাতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের বায়েজিদ থানা এলাকায় একটি প্রবেশপথ করেছে। এখানে প্রবেশ করতে শর্ত সাপেক্ষে বিভিন্ন সংগঠনসহ সংবাদিকদের পূর্ব অনুমতি নিতে হয়। কয়েক কিলোমিটার পর পর রয়েছে আলাদা গেট, সেই সঙ্গে আছে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীও। ওই এলাকায় স্থায়ীভাবে থাকতে গেলে নেতারা বিশেষ এক ধরনের টোকেন দেয়। এরপর পাহাড় কেটে সমতল স্থান থাকার উপযোগী হলে জাল দলিল দিয়ে বিক্রি হয়। এখানে তারা বড় বড় ডিপ কল বসিয়ে প্রতিটি বসতঘরে পানি সরবরাহ করে। প্রতি মাসে প্রতি পরিবার থেকে ৩শ’ টাকা করে আদায় করা হয়। এছাড়াও রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। অবশ্য জঙ্গল ছলিমপুর পরিদর্শন করলে এখন আর ওই এলাকাকে নিম্ন আয়ের মানুষের বাস বলে গণ্য করা হলে ভুল হবে। কারণ সেখানে এখন বড় বড় ভবনও নির্মিত হয়েছে। সরকারি জায়গার উপর অবৈধ ঘরগুলোতে এখন বিদ্যুৎ সংযোগসহ নানান সুবিধা রয়েছে। এভাবেই দীর্ঘ কয়েক যুগে জঙ্গল ছলিমপুর হয়ে উঠেছে ভিন্ন আরেকটি সাম্রাজ্য। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গল সলিমপুর এলাকাটি অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেখানে ৪০ হাজার মানুষ জিম্মি অবস্থায় জীবন যাপন করছে। পাহাড় কেটে প্লট হিসেবে এই জায়গাগুলো বিক্রি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে সহজে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য চলাচলের পথও দুর্গম করে রেখেছে অপরাধীরা। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, ৩০ থেকে ৪০ জন জঙ্গল সলিমপুর এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। সাধারণ মানুুষকে বোকা বানিয়ে তারা সেখানে নিজস্ব কিছু নিয়মকানুনও তৈরি করেছে। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দুর্গম ওই এলাকাকে লোকচক্ষুর মধ্যে আনতে স্বতন্ত্র পরিকল্পনাও নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান এবং ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেল হক জানান, জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় অনেক সন্ত্রাসী রয়েছে। মশিউরসহ অনেকের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।