রায়হান কবির,স্বদেশ নিউজ ২৪.কমঃ জেলার কেশবপুরে লোকালয়ে পানি বেড়েছে। বন্যায় ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে কেশবপুর শহরের নয়টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকাসহ উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম। ভেসে গেছে দুই হাজার ৩১৮টি ঘের ও তিন হাজার ২৫০টি পুকুরের মাছ। সরকারি হিসেবে এখনো পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৩২ কোটি টাকা। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার। এরমধ্যে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের দুই ধারে মধ্যকুল ও হাবাসপোল এলাকায় প্রায় ৪০০ পরিবার, আলতাপোলে ৭৫টি ও বাজিতপুরে ৩০টি পরিবার টংঘর বেধে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের কেশবপুর ডিগ্রি কলেজ, পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাইলট বালিকা বিদ্যালয়, মধুশিক্ষা নিকেতন, মধ্যকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বালিয়াডাঙ্গা স্কুলসহ নয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সেখানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দশ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গত চার দিনের বৃষ্টি এবং হরিহর, বুড়িভদ্রা ও কপোতাক্ষ নদের উপচে পড়া পানিতে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে কেশবপুর উপজেলা। ইতোমধ্যে কেশবপুর পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের প্রায় চার হাজার ৪শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে রাস্তার দুই ধারে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে ৫০৫টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত আরো বহু পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্র বা ডাঙার সন্ধানে বেরুচ্ছে।
শহরের নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে কেশবপুর, মধ্যকুল, হাবাসপোল, বালিয়াডাঙ্গা, আলতাপোল ও বাজিতপুর ওয়ার্ডের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। এসব এলাকার গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট।
এদিকে, উপজেলার সদর ইউনিয়ন, মঙ্গলকোট, পাঁজিয়া ও বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের মুলগ্রাম, পাঁজিয়া পূর্বপাড়া, বাকাবর্শি, বেলকাটি, গড়ভাঙ্গা ও ব্যাসডাঙ্গাসহ অন্তত ৩১টি গ্রাম প্ল¬াবিত হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার। আশ্রয়হীনরা বিভিন্ন উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন।
কৃষি ও মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী পানির তোড়ে উপজেলার ছোট-বড় চার হাজার ৬৬৮টি ঘের ভেসে গিয়ে সাড়ে ৩২ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ১২০ হেক্টর আমন বীজতলা, রোপা আমন ১১০ হেক্টর, সবজি ১১৫ হেক্টর, আউশ ৫৫ হেক্টর এবং আড়াই হেক্টর পানের ক্ষেত। তবে সরকারি দপ্তর দুটি এখনো ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরুপণ করতে পারেনি।
কেশবপুর উপজেলা পানি নিষ্কাশন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদ খনন না করা এবং অপরিকল্পিত মাছের ঘের গড়ে তোলার কারণে কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আলমগীর হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কেশবপুরে ৭৮ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পানির তোড়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের দুই হাজার ৩১৮টি মাছের ঘের ও তিন হাজার ২৫০টি পুকুর ভেসে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৩২ কোটি টাকা হতে পারে বলে তার অনুমান।
কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিক মোড়ল জানান, বন্যার ফলে পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের চার হাজার ৪শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. কবীর হোসেন জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশ্রয়হীনদের জন্য নয়টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দশ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তালিকা করে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।
অপরদিকে, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন শহরের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।