রায়হান কবির,স্বদেশ নিউজ ২৪.কমঃ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ বছরে পা দিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার নাম দিয়েই নতুন করে বাংলাদেশকে চিনেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ২০০৬ সালের ঠিক এই দিনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে একদিনের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামেন সাকিব আল হাসান। তখন হয়তো কেউই ভাবেইনি সেই সাকিব একদিন বিশ্বজয় করবেন!
জিম্বাবুয়ের হারারেতে সাকিবের আন্তর্জাতিক অভিষেক পর থেকে সবাই শুধু চেয়ে চেয়ে তার কীর্তি দেখে যাচ্ছেন। অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় তারকা হয়ে উঠেন মাগুরার এই ক্রিকেটার। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে খেলার পাশাপাশি বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বিদেশি লিগগুলোতে নিয়মিত খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে একমাত্র সাকিবেরই।এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পাশাপাশি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), কাউন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, বিগ ব্যাশ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। যেখানেই খেলেছেন বাংলাদেশকে পরিচিত করে এসেছেন নতুনভাবে।
শুধু খেলা নয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সামনে থেকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে মোহাম্মদ আশরাফুল নেতৃত্ব হারালে অধিনায়কের দায়িত্ব পান বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ওই সময়ে সহ-অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান। কিন্তু ওই বছরে মাশরাফি ইনজুরিতে পড়লে অধিনায়কের দায়িত্ব চলে আসে সাকিবের উপর। কিন্তু শুরুটা ভালো হলেও, দিনে দিনে সাকিব ক্রিকেটীয় পারফরম্যান্স থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন। একই সঙ্গে নিজের অধিনায়কত্ব নিয়েও সন্তুষ্ট ছিলেন না সাকিব। তাই ২০১১ সালে ঘোষণা দিয়েই নেতৃত্ব ছাড়েন তিনি।
বচেয়ে বেশিদিন বিশ্বের একনম্বর অলরাউন্ডারের র্যাংকিং ধরে রাখার পাশাপাশি সাকিবের অর্জনের খাতায় যোগ হয়েছে বাংলাদেশের অনেক ‘প্রথম ও দ্বিতীয়’ হওয়ার খেতাব। তার মধ্যে ওয়ানডেতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৪০০০ হাজার রান এবং টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রান সংগ্রহ করার গৌরব। শুধু তাই নয়, বিশ্বের দ্বিতীয় অলরাউন্ডার বাংলাদেশের সাকিব, যিনি ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ১০০০ রানের সঙ্গে ৫০টি উইকেটও তুলে নিয়েছেন।
২০০৯ সালটি ছিলো সাকিবের জন্য অন্যতম স্মরণীয়। এ বছরই একসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ‘ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’, ‘টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ এর জন্য মনোনীত হন।
অনেক সাফল্যের পরও কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য হয়েছিলেন সমালোচিত। ক্রিকেটে মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে সেই সব বিতর্কিত বিষয় নিয়ে হয়েছে অনেক আলোচনা। যার কারণে একবার নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশের বড় এই তারকা। ২০১৪ সালে সবধরণের ক্রিকেট থেকে থেকে ছয় মাসের জন্য নির্বাসিত করা হয় সাকিবকে। নিষেধাজ্ঞার কারণ ছিলো আচরণগত সমস্যা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়া হয়নি তার। পরবর্তীতে সাকিব ইস্যুতে বৈঠক করে বিসিবি। ‘ইতিবাচক’ আচরণের পুরস্কার হিসেবে সেপ্টেম্বর থেকেই আবার ক্রিকেটে ফেরেন সাকিব।
২০০৬ সালের আগষ্টে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় সাকিব আল হাসানের। অভিষেক ম্যাচে সাকিব ব্যাট হাতে ৩০ রানের পাশাপাশি বল হাতে ৩৯ রান খরচায় একটি উইকেট নিয়েছিলেন। একই বছর, একই দলের বিপক্ষে নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় সাকিবের। ওই ম্যাচে ২৬ রানের পাশাপাশি একটি উইকেট পকেটে পুরেছিলেন তিনি।
জাতীয় দলের হয়ে রঙিন পোষাকে অভিষেকের এক বছর পর ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেক হয় সাকিব আল হাসানের। টেস্টের অভিষকটা উল্লেখ্যযোগ্য হয়নি তরুণ সাকিবের। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ২৭ রান করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ১৩ ওভার হাত ঘুরালেও উইকেট শূন্য ছিলেন তিনি। অন্যদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট কিংবা বল কোনটাই করেননি সাকিব।