বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে কিশোরী মেয়েটিকে ট্রাকে তুলি। তারপর নির্জন স্থানে ট্রাক পার্কিং করে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করি। এভাবে তিনটি স্থানে তিন দফায় তাকে ধর্ষণ করার পর ভোর হয়ে যায়। ফজরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হওয়া এক মুসল্লি বিষয়টি টের পেয়ে যায়। পরে লোক জড়ো হতে থাকলে কৌশলে আমরা পালিয়ে যাই। গতকাল রোববার বিকালে নারায়ণগঞ্জের আদালতে পৃথক পৃথকভাবে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চলন্ত ট্রাকে কিশোরীকে পলাক্রমে ধর্ষণকারী ট্রাক চালক মেহেদী হাসান ও হেলপার তুহিন এসব কথা বলে। চালক মেহেদী হাসান নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আফতাব উজ্জামান ও হেলপার তুহিন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আক্তার উজ্জামানের আদালতে জবানবন্দি দেয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি (অপারেশন) মো. নাসির উদ্দিন জানান, ধর্ষক মেহেদী হাসান ও হেলপার তুহিনকে ৪ দিনের রিমান্ডের নেয়ার পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা কিশোরী মেয়েটিকে একাধিকবার ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। এবং আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হয়। রোববার ছিল রিমান্ডের শেষদিন। তারা পৃথক দুটি আদালতকে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ধর্ষণের পুরো ঘটনা বর্ণনা করে। জবানবন্দিতে তারা বলে, মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় ট্রাকে মাল লোড করে চা খাওয়ার সময় ওই কিশোরীকে ঘোরাঘুরি করতে দেখি। পরে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, বাড়ি থেকে বাবা-মার সঙ্গে রাগ করে বেরিয়ে এসেছে। আমরা তাকে বলি আসো তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবো। একথা বলে তাকে ট্রাকে উঠাই। পরে কিছুদূর গিয়ে একটি নির্জনস্থানে ট্রাক পার্কিং করে মেয়েটিকে আমরা ধর্ষণ করি। প্রথমে চালক মেহেদী হাসান ও পরে হেলপার তুহিন। এরপর ট্রাক চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকায় একটি পেট্টোলপাম্প থেকে ইঞ্জিনে পানি নেয়ার পর মহাসড়কের পাশে নির্জনস্থানে ট্রাকটি পার্কিং করে দ্বিতীয় দফায় মেয়েটিকে আমরা পালাক্রমে ধর্ষণ করি। সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান ফটকের সামনে ভোর ৪টায় ট্রাক নিয়ে পৌছাই। তখন ফ্যাক্টরি থেকে বলা হয় এখন ট্রাক ভেতরে ঢুকবে না। ভোর হোক। তখন তৃতীয় দফায় মেয়েটিকে আবার ধর্ষণ করি। এক পর্যায়ে ভোরে ফজরের নামাজ শেষে এক মুসুল্লি ট্রাকের সামনে আসলে মেয়েটি ওই মুসল্লিকে সব বলে দেয়। তখন ওই মুসল্লি অন্যান্যদের ডাকাডাকি করলে লোক জড়ো হতে থাকলে আমরা ট্রাক ফেলে কৌশলে পালিয়ে যাই।
এদিকে ঘটনার পর বুধবার রাত ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকা থেকে চালক মেহেদী হাসান রানাকে ও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে সাভারের হেমায়েতপুরের নয়াবাড়ি এলাকা থেকে হেলপার সোহান ওরফে তুহিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত চালক মেহেদি হাসান মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার আলকাদিয়া গ্রামের মো. নবী শেখের ও হেলপার তুহিন রাজশাহী জেলার পুটিয়া থানার পশ্চিম কানাইপাড়া গ্রামের মো. তমজিদের ছেলে। পরে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে পাঠায়। বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাব উজ্জামানের আদালতে তাদের রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত তাদের ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একইদিন অপর একটি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান ২২ ধারায় ধর্ষিতা কিশোরীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। কিন্তু আদালতে জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কিশোরীটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার বাবা আবেদন করেন। কিন্তু মেয়েটি পরিবারের কাছে যেতে অসম্মতি জানিয়ে তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানোর জন্য আবেদন করেন। পরে আদালত মেয়েটিকে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।