হাবিবুল বাশার সুমন, ৫০ টেস্ট খেলা দেশের প্রথম ক্রিকেটার। দেশের সফল অধিনায়কদের একজন তিনি। ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ১৮ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একটি জয় ও চার ড্র এনে দিয়েছেন দলকে। তবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপের ম্যাচ ফতুল্লাতে ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা সেই টেস্টটি। জয়ের কাছে গিয়েও হার দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। তবে এ টেস্ট থেকে পাওয়া শিক্ষা তার ক্রিকেট জীবনে কাজে লাগিয়েছেন। সাবেক এই অধিনায়ক এখন জাতীয় দলের নির্বাচক। ১১ বছর পর ফের অস্ট্রেলিয়া টেস্ট খেলতে আসছে বাংলাদেশে। এবার তিনি তার অভিজ্ঞতার সবটুকু ঢেলে দল সাজাচ্ছেন অজিদের বিপক্ষে। আশা করছেন তাদের আক্ষেপ মিটিয়ে দেবেন মুশফিকের নেতৃত্বে দল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই টেস্টের স্মৃতি নিয়ে। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেশের মাটিতে প্রথম টেস্টে আপনার পরিকল্পনা কী ছিল?
বাশার: অস্ট্রেলিয়ার যে দলটি সেবার খেলতে এসেছিল তারা এখনো সেরা ক্রিকেটার। এত ভালো দল আসলে যুগে খুব একটা আসে না। কে ছিল না সেই দলে! পন্টিং অধিনায়ক, শেন ওয়ার্ন, ব্রেট লি, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মাইকেল ক্লার্ক। এক সঙ্গে এত গ্রেট ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়া দলে আগে আসেনি। ড্রিম টিমই ছিল সেটি। এমন একটি দলের বিপক্ষে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে যে কোনো পরিকল্পনাই কঠিন ছিল। আমি শুধু একটা কথাই বলেছিলাম যে আমাদের যার যতটুকু যোগ্যতা তার পুরোটা দিয়েই যেন খেলতে পারি। ওদের মোকাবেলা করা ছিল বেশ কঠিন। তারপরও আমাদের প্রথম টেস্ট ছিল অসাধারণ। কিন্তু সেই টেস্টটা আমরা জিততে পারিনি। আমাদের জেতা উচিত ছিল। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল, অভিজ্ঞতার অভাব ছিল আর ওরা ছিল সেরা। সব মিলিয়ে হয়নি। আমি বলবো আমার ক্রিকেট জীবনে যত বড় বড় আক্ষেপ আছে তার মধ্যে সেই হারটি অন্যতম। এ আক্ষেপ কোনো দিনও ভোলার মতো নয়। আমরা তখন টেস্টে প্রতিষ্ঠিত ছিলাম না এখন যতটা আছি। সত্যি কথা বলতে কি এখনকার টিমটা থাকলে অস্ট্রেলিয়ার সেই দলকেও হারানো সম্ভব হতো।
প্রশ্ন: আক্ষেপের সঙ্গে প্রাপ্তি ছিল কি?
বাশার: প্রাপ্তিও ছিল অনেক। কারণ আমাদের চেষ্টা ছিল নিজেদের সবটুকু দিয়ে খেলা এবং প্রমাণ করা যে আমরাও টেস্ট খেলতে পারি। সেটি হয়েছে। এরপর সেই টেস্টের অভিজ্ঞতা আমি জীবনে বেশ কাজে লাগিয়েছি। এমনকি ২০০৭ বিশ্বকাপেও সেই টেস্টের অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল যে আমরা যে কোনো ফরমেটে ভালো করতে পারি।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়া ওই খেলায় কতটা অবাক হয়ে গিয়েছিল?
বাশার: নাফীসের সেঞ্চুরি, রাজিন আমার ফিফটি, রফিক ভাইয়ের পাঁচ উইকেট। সব মিলিয়ে এমন ক্রিকেট খেলেছিলাম যে অস্ট্রেলিয়ানরা অবাক হয়েছিল। সত্যি তারা ভীষণ অবাক হয়েছিল যে তারা আমাদের কাছে এমন ক্রিকেট আশা করেনি। ওরা চিন্তাও করতে পারেনি এমন ভালো করবো আমরা। বিশেষ করে আমি শেন ওয়ার্নকে এত ভালোভাবে খেলছিলাম যে সে নিজেও অবাক হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় পাওয়ার যে অভিজ্ঞতা সেটি কম থাকায় আমরা ম্যাচটি বের করতে পারিনি।
প্রশ্ন: পন্টিংয়ের বিপক্ষে আপনি অধিনায়ক এটি কেমন ভাবে নিয়েছিলেন?
বাশার: তার সঙ্গে টস করতে পারাটাও জীবনে অনেক বড় প্রাপ্তি এবং অনেক বড় গর্বের বিষয়।
প্রশ্ন: এত ভালো খেলার পর পন্টিং আপনাকে কিছু বলেছিল?
বাশার: একটা বিষয় জেনে রাখা ভালো খেলার মাঠে অস্ট্রেলিয়ানরা কখনো কথা বলে না। তাদের ভাবটা থাকে এমন যে চিনেও না। কিন্তু খেলার মাঠের বাইরে পৃথিবীর যত দেশের ক্রিকেটার আছে তাদের চেয়ে অনেক ব্যতিক্রম অস্ট্রেলিয়ানরা। মাঠের বাইরে ওদের মতো ভালো মানুষ, ভালো বন্ধু হয় না। মাঠের বাইরে আর ভেতরে ওরা সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা ভালো খেলার পর পন্টিং অভিনন্দন জানিয়েছিল। বলেছিল তোমরা খুবই ভালো খেলেছো। তবে হারের পর পন্টিং বলেছেন, তোমরা অনেক বড় একটা সুযোগ মিস করেছো।
প্রশ্ন: ঢাকার পর চট্টগ্রামে দারুণ বাংলাদেশকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না কেন?
বাশার: এটি সবাইকে মানতেই হবে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সেরা দলটির একটি ছিল তখন। এখনো আছে। ওদের সঙ্গে আমাদের তখন খেলাটাই অনেক বড় বিষয়। তখন আমরা কেন, অন্য দেশও ওদের সঙ্গে পারতো না। তাই চট্টগ্রামে এসে আমরা সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারিনি।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এমন কোনো স্মৃতি আছে যেটি এখনো ভাবায়?
বাশার: হারের পর আমাদের প্রচণ্ড মন খারাপ ছিল। মাঠ থেকে ফিরতেও বেশ খারাপ লাগছিল। যখন ম্যাচ শেষে আমরা ফতুল্লা থেকে মন খারাপ করে ফিরছিলাম তখন আমাদের বাসে কেউ একজন ঢিল মেরেছিল। সেটি ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় আমার প্রথম দর্শকদের রোষানলে পড়ার ঘটনা। আমরা খুব ভড়কে গিয়েছিলাম অবাকও হয়েছিলাম।
প্রশ্ন: নতুন এই দলটির কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?
বাশার: অস্ট্রেলিয়া যখন শেষবার টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে আসে তখন ওরা র্যাঙ্কিংয়ে এক নাম্বার দল ছিল। এবার তিন নাম্বার। তাই বলে ওদের মান নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ নেই। ওরা মাঠের ক্রিকেটে যে কোনো দেশে সেরা। ওদের মতো প্রফেশনাল ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়াও কঠিন। তবে আমাদের এবারের যে দলটি আছে তাদের উপর ভরসা করা যায়। অভিজ্ঞদের কথা বলেন আর তরুণদের, সবার লড়াই করার ক্ষমতা আছে। আমি আশা করি সেবার যতটা সহজে ওরা জিতে গেছে এবার সেটা হবে না। আমরা চাই যেন সিরিজটাই জিততে পারি। জানি কঠিন হবে তবে আমাদের সেই আত্মবিশ্বাস ও যোগ্যতা এখন আছে।