শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা ফিরাতে ১০টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া শিক্ষকদের জাল সনদ, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সাঁড়াশি অভিযান, শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শেখাতে উপজেলা বিত্রেুতা বিহীন সততা স্টোর চালুসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের কাছে দেয়া দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৬-এ শিক্ষা খাত নিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে। দুদক মনে করে, এসব উদ্যোগ নিলে শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের অস্বচ্ছতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে মন্তব্য করে সংস্থাটি বলছে, এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে উচ্চশিক্ষা জাতির জন্য আত্মঘাতী হবে। এ জন্য এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি সচেতনভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের জবাবদিহি ও মান নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপন, স্থানীয়ভাবে ‘শিক্ষার মান তদারকি কমিটি’ অথবা ‘শিক্ষার মানোন্নয়নে নাগরিক কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি।
বার্ষিক প্রতিবেদনে শিক্ষা খাতের বেশ কিছু সমস্যা নিরূপণ করে সংস্থাটি বলেছে, মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া, মানসম্মত শিক্ষাদান পদ্ধতির অভাব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা না থাকা, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থ ব্যয়ের অস্বচ্ছতা, পাঠ্যপুস্তক ই-বুক ভার্সন না থাকায় শিক্ষা খাতে দুর্নীতি ঘটছে। এছাড়াও কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষার সনদ সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির কোনো পদ্ধতি নেই। কমিশন মনে করে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ব্যবস্থা না নিলে দুর্নীতি মারাত্মক রূপ নিতে পারে। এসব মানহীন ও নিয়ন্ত্রণহীন বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতির জন্য আত্মঘাতী হবে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের স্থাপনের অনুমতি প্রদানের বিষযটি আরো গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
এসব সমস্যা সমাধানে দুদক ১০টি সুপারিশ করেছে। এরমধ্যে আছে, মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে পৃথক পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া বেতন ও ফি খরচের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সব ধরনের অর্থ আদায় করতে হবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করতে হবে। মান সম্মত শিক্ষার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শিক্ষার মান তদারকি কমিটি’ অথবা ‘শিক্ষার মানোন্নয়নে নাগরিক কমিটি’ গঠন করা যেতে পারে। সব ধরনের পাঠ্যপুস্তক ই-বুক প্রণয়ন, এবং জাতীয় শিক্ষাত্রুম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর ওয়েব সাইটে বই প্রস্তক আকারে আপলোড করা, প্রতিটি ক্লাসে পাঠ্যবইয়ে নৈতিক শিক্ষার অধ্যায় সংযোজন ও বিদ্যমান অধ্যায়ে মানোন্নয়নসহ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সামনে নৈতিকতা রোড মডেল হতে পরে সে ব্যবস্থা করা। এজন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও মটিভেশন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষার সনদ ও অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ রেগুলেটরি অথরিটি গঠনের সুপারিশ করে দুদক বলেছে, ঢালাওভাবে প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয় সুপারিশে। পাবলিক পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান বদলের বিদ্যমান বিধানের পরিবর্তে পরীক্ষাকালীন সময়ের জন্য শিক্ষক প্রতিষ্ঠান বদলির ব্যবস্থা করা, সরকারি স্কুল কলেজের ‘অপসন’ দিয়ে আত্মীকরণের মাধ্যমে পছন্দমাফিক সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে আত্মীকরণ করে বদলি প্রথার বিলোপের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বদলির জন্য একটি স্বচ্ছ নীতিমালা করা প্রয়োজন উল্লেখ করে দুদক বলেছে, বদলির কারণে ঘুষ বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটছে। মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা ও শিক্ষক ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করতে অতিদ্রুত মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠারও সুপারিশ করেছে দুদক। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের গতিশীলতার জন্য আরো মাঠপর্যায়ে আরো যোগ্য কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। বিভাগ পর্যায়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের জন্য যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য আরো বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। শিক্ষার মানোন্নয়নে জেলা উপজেলা সকল প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা কাজে লাগানো যায় কিনা তা পরীক্ষা করা যেতে পারে।