রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক উদ্যোগ চায় ভুক্তভোগী বাংলাদেশ। ঢাকার এমন অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে জনসংখ্যার বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া এবং ইউরোশিয়ার প্রভাবশালী মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্ক। মিয়ানমারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শেষে ঢাকায় ঝটিকা সফর করে যাওয়া ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি গতকাল জাকার্তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি এ সংকট নিরসনে যা কিছু করণীয় তাই করবে তার দেশ। এ ইস্যুতে বাংলাদেশের যেসব উদ্যোগ রয়েছে তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে আগামী দিনে ঢাকার পাশে থাকার অঙ্গীকার করে গেছেন আসিয়ান জোটভুক্ত ইন্দোনেশিয়ার বিদেশ মন্ত্রী। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে আজ মধ্যরাতে ঢাকা আসছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভুফোগলু। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিশেষ বিমানে চড়ে আজারবাইজান হয়ে আসছেন তার্কিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাখাইন থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে আসছেন তিনি। যাবেন কক্সবাজার এবং সীমান্ত সংলগ্ন বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। দু’দিনের বাংলাদেশ সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রীর সফর নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের নীতির সঙ্গে তুরস্কের নীতির মিল থাকায় এ আলোচনাটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফেরানো, রাখাইনে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা এবং বসবাসের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রাখাইন পরামর্শ কমিশনের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায় বাংলাদেশ। এই তিনটি বিষয়ে তুরস্কের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার মন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে নানা ইস্যু নিয়ে গতকাল বিকাল ৪টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দীর্ঘ বৈঠক করেছেন সফরকারী ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী রেতনো মারসুদি। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রী। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেই সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছিল। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এরই মধ্যে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ইন্দোনেশিয়ার এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখান থেকেই ঢাকায় এসেছেন তিনি। একই ইস্যুতে আলোচনার জন্য গত ডিসেম্বর মাসেও তিনি প্রথমে মিয়ানমার ও পরে ঢাকা সফর করেছিলেন।
জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চান আইনমন্ত্রী: ওদিকে ?প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা অত্যন্ত পীড়াদায়ক ও দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ ঘটনা রোধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের হত্যা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।