চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরু হয় বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে ৩শ’ রানের প্রার্থনা নিয়ে। হবে তো? অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও নাসির হোসেন ক্রিজে থাকায় আশা ছিল। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও। তবে মুশফিক এ দিন নিজের নামের পাশে মাত্র ৫ রান যোগ করে আউট হয়েছেন ৬৮ রানে। এরপর নাসির ৪৫ রানে ও ১১ রানে মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হলে কিছুটা হলেও তিনশ’র আগেই থমকে যাওয়ার শঙ্কা জাগে। কিন্তু গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে হাঁকানো স্পিনার তাইজুল ইসলামের ছক্কায় সেই শঙ্কা উড়ে যায়। একটু পরে নাথান লায়ন বল হাতে এসে তাইজুলকে তার সপ্তম শিকার বানিয়ে সাজঘরে পাঠালে ৩০৫-এ থামে টাইগাররা। এ সংগ্রহ প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তাদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও। এর আগে ২০০৬ সালে প্রথম ইনিংসে হাবিবুল বাশারের দল ১৯৭ রানে গুটিয়ে গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিল ৩০৪ রান। ধারাভাষ্যকাররা বারবারই বলছিলেন টাইগারদের স্কোর তিন শ’ পার হলে ক্যাঙ্গারুদের মানসিক চাপ বাড়াবে। তার প্রমাণ হয়তো ১৫ রানে অজিদের প্রথম উইকেট হারানো!
২৫৩ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল টাইগাররা। মধ্যাহ্ন বিরতির কিছু আগে ৫২ রান যোগ হয় লেজের জোরে। বিশেষ করে নাসির হোসেনের অবদানটা আলাদা করেই বলতে হয়। ১৯ রান নিয়ে দিন শুরু করে তিনি নিজের নামের পাশে ২৬ রান যোগ করেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে সেই চার বছর আগে ৬ষ্ঠ ও শেষ ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন নাসির। গতকাল আবারো সুযোগ এসেছিল কিন্তু ৫ রান দূরে থাকতেই আউট হন তিনি। ৯৭ বলের ইনিংসে হাঁকিয়েছেন ৫টি চারের মার। অধিনায়কের সঙ্গে তার ৪৩ রানের জুটি ভাঙার পর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে ২৮ রানের জুটি হলে অ্যাগারের বলে উইকেটের পেছনে ম্যাথু ওয়েডকে ক্যাচ দেন নাসির। এরপর মিরাজ ভালো খেলছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাইজুল। কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নারের অসাধারণ এক থ্রোতে রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। আউট হওয়ার আগে তিনি ৪৫ বলে করেন ১১ রান। দলের স্কোর তখন ২৯৬ রান ৯ উইকেট হারিয়ে। সেখান থেকেই ৩শ’ রানে পৌঁছে দেন তাইজুল। তার ব্যাট থেকে আসে ১২ বলে ৯ রান। ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ২৬০ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে গিয়েছিল ২১৭ রান। পরের ইনিংসে ২৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২০ রান দূরেই থেমেছিল তাদের ইনিংস।
গতকাল লায়নের সপ্তম শিকার ছিলেন তাইজুল ইসলাম। স্লিপে স্টিভ স্মিথকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। বলতে গেলে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস জুড়ে মূর্তিমাণ আতঙ্কের নাম লায়ন। চতুর্থ স্পিনার হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে এক ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে টেস্টে স্পিনারদের মধ্যে এক ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল ২০০৬-এ। ১১ বছর পর এই তার কৃর্তিতে ভাগ বাসিয়েছেন তার আরেক স্বদেশি। এছাড়া দানিশ কানেরিয়া ও শ্রীলঙ্কান রঙ্গনা হেরাথেরও একই কীর্তি আছে টাইগারদের বিপক্ষে। তবে লায়নের এ অর্জন অবশ্য একটু আলাদা মর্যাদার দাবিদার। কারণ ম্যাকগিল, কানেরিয়া ও হেরাথদের কেউই অফ স্পিনার ছিলেন না। সেই হিসেবে প্রথম অফ স্পিনার হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে ৭ উইকেট নেয়ার গর্বটা লায়নেরই। শুধু তাই নয়, এই সিরিজে দারুণ বোলিংয়ে চলতি বছর টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের মধ্যে তিনে উঠে এসেছেন ২৯ বছর বয়সী এ স্পিনার। এ বছর ৭ টেস্টে ৪০ উইকেট নিয়ে নিয়েছেন তিনি। এই সিরিজে এখন পর্যন্ত তিন ইনিংসে তার শিকার ১৬ উইকেট।