গ্রামবাংলার ঐতিহ্য নৌকা বাইচ। সেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ভৈরবের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় মেঘনা নদীর পাড়ে গাঙ সমিতি, ভৈরব এর আয়োজনে বিগত কয়েক বছর ধরেই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মূলত বিনোদন ও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই প্রতি বছর এই নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়। এবারেও ভৈরব মেঘনা নদীর মনোরম পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৭ম নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। প্রতিবারের ন্যায় এই আয়োজনটি করছেন গাঙ সমিতি, ভৈরব। এবারের আয়োজন উপলক্ষ্যে কথা হল ভৈরব গাঙ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান বাচ্চু স্যারের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্বদেশ নিউজ ডটকম এর ভৈরব – কুলিয়ারচর প্রতিনিধি আশরাফুল আলম
# স্বদেশ নিউজ ডটকম- আমি স্বদেশ নিউজ ডটকম এর ভৈরব -কুলিয়ারচর প্রতিনিধি বলছি। আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর গাঙ সমিতির আয়োজনে ৭ম নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আপনার সম্পৃক্ততা বিষয়ে বলুন এবং আপনাদের গাঙ সমিতি ভৈরব এর কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হয়েছে সে বিষয়ে বলুন?
# শামসুজ্জামান বাচ্চু- আমি গাঙ সমিতি ভৈরব এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। বর্তমানে আমি ভৈরব গাঙ সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছি এবং বর্তমানে আমি ভৈরব প্রেস ক্লাবেরও সভাপতির দায়িত্বে আছি। আমরা ২০০১ সাল থেকে গাঙ সমিতি ভৈরব এর কার্যক্রম শুরু করি। এবারের নৌকা বাইচ উৎসবটি আমরা ৭ম বারের মত আয়োজন করছি। এবারের আয়োজনটি স্পন্সর করছে এলিন ফুড। এলিন ফুড চেয়ারম্যান ওমর ফারুক সাহেবের আর্থিক সহযোগিতায় এবারের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতাটি আমরা খুব স্বাচ্ছন্দ্য ভাবে করতে পারছি। আর আমাদের ভৈরবের এই নৌকা বাইচ সারা বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম নৌকা বাইচ। এই নৌকা বাইচ অতীতে গ্রামীনফোন ও বাংলালিংক এবং প্রাণ কোম্পানীর মত উচ্চ পর্যায়ের স্পন্সরসীপের মাধ্যমে আয়োজিত হয়ে আসছে। এবারের স্পন্সরসীপে আছে এলিন ফুড। আসলে নৌকা বাইচ আমাদের বাঙ্গালী জাতির লোকজ সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্য যেটি বর্তমান নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে, বিশেষ করে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউবের মত সোসাল মিডিয়ায় আসক্ত হওয়ার কারণে নতুন প্রজন্ম বাঙ্গালী অনেক ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলা, লাঠি খেলা , গরুর দৌড় খেলা নেই। এসব লোকজ সংস্কৃতি আস্তে আস্তে সব হারাতে বসেছি। আমরা বিগত ৭বছর ধরে এই লোকজ সংস্কৃতির নৌকা বাইচ রক্ষা করে নতুন করে শুরু করেছি। আমাদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আশেপাশের জেলাগুলোতে এখন নিয়মিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ নৌকা বাইচ বিলুপ্ত হতে চলেছিল, আমরা সেটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। সে ক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি। আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন জানতে পারে আমাদের লোকজ সংস্কৃতির ঐতিহ্য কেমন ছিল সেজন্যই এই নৌকা বাইচের আয়োজন। ভৈরবের সর্বশ্রেণী পেশাজীবি মানুষের সহায়তায়, সর্বস্তরের ভৈরব বাসীর সহযোগিতায় আমরা এই লোকজ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ বিগত কয়েক বছর ধরে সফলতার সাথে আয়োজন করতে পেরেছি। আশা করছি এবারও সবার সর্বাত্মক সহযোগিতায় আমরা এবারের আয়োজনও সফল ভাবে সম্পন্ন করতে পারবো। প্রতি বছর এই আয়োজনে লাখো মানুষের ঢল আসে এই মেঘনার তীরে নৌকা বাইচ দেখতে। নির্মল আনন্দ পেতে সকল শ্রেণীর মানুষ এখানে এসে জড়ো হয় পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। সর্বস্থরের মানুষের এই মিলনমেলায়ই আমাদের এই আয়োজনের মূল সার্থকতা।
আমি বলতে চাই গাঙ সমিতি শুধু নৌকা বাইচই আয়োজন করি না সাথে সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছি। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ,চোখের চিকিৎসা,দাতের চিকিৎসা সহ সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করে থাকি। যেমন আমরা ভৈরবে আগে কিছু সামাজিক অবক্ষ্যয় ছিলো যা আমরা সর্বস্থরের জনগণকে নিয়ে সংশোধন করতে চেষ্টা করেছি। এইযে আমাদের আয়োজিত নৌকা বাইচ যেটি বর্তমানে বৃহত্তম কিশোরগঞ্জ, বি-বাড়িয়া এবং নরসিংদী জেলার বিভিন্ন জনপদ থেকে সর্বস্থরের জনগণের মিলনমেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা এবারের মিলনমেলায় সকল দর্শনার্থীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
# স্বদেশ নিউজ ডটকম-আচ্ছা এই যে নৌকা বাইচ এর আয়োজন করছেন আমরা জানি যে, বিগত কয়েক সময়ে মনোরম পরিবেশে ভৈরব মেঘনা নদীর পাড়ে এসে নিরাপত্তাহীনতার কবলে পরেছেন, এ বিষয়ে আপনাদের গাঙ সমিতির পক্ষ থেকে কি ধরনের বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন?
* শামসুজ্জামান বাচ্চু- সবার অবগতির জন্য আমি জানাতে চাই, আমরা গাঙ সমিতির পক্ষ থেকে এবারের নৌকা বাইচে দুইস্থর বিশিষ্ট কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ দুইস্থরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে এক স্থরের নিরাপত্তা বলানটিয়ানরা থাকবে স্থলে এবং আরেকস্থল নিরাপত্তার বলানটিয়াররা থাকবে জলে। এছাড়া আমরা এবারই প্রথম এতো বড় আকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হচ্ছি। নৌ পুলিশ কিশোরগঞ্জ অঞ্চল এর পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেছেন, নৌ পথে সার্বিক নিরাপত্তা দিতে আশ্বস্থ্য করেছেন। এদিগে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মুখলেছুর রহমানও বলেছেন, কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে স্থলভাগে দর্শনার্থীদের কে নিরাপদে নৌকা বাইচ উপভোগ করার আশ্বাস প্রদান করেন। এবং সবচেয়ে আশার বাণী হচ্ছে র্যাব ১৪ ভৈরব ক্যাম্পের কম্পানী কমান্ডার মেজর শেখ নাজমুল আরিফিন পরাগ এর নেতৃত্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন। এতে করে বুঝাযায় যে গত ৬ বছরের চেয়ে এবারের নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা নিরাপদ ও সুষ্ঠ হবে বলে আসা করা যাচ্ছে।
# স্বদেশ নিউজ ডটকম- আমরা জানি ৭তম বারের মত আয়োজিত হওয়া নৌকাবাইচ প্রতিযোগীতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিসিবি সভাপতি আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পাপন তিনি এ নৌকা বাইচ নিয়ে তার কি অনুভতি সেটি যদি একটু বলতেন?
* শামসুজ্জামান বাচ্চু- আমরা উনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি তিনি আমাদের আমন্ত্রণ সাদর ভাবে গ্রহন করেছেন এবং উনার নির্দেশেই আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানটির তারিখ নির্ধারন করেছি। যদিও উনি খুব ব্যস্ত মানুষ এরপরও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের নৌকা বাইচ অনুষ্ঠানে আসবেন।
# স্বদেশ নিউজ ডটকম- আমাদের ভৈরবের এই মেঘনা নদীর পাড় অতীতে আরো সুন্দরর্যময় ছিলো কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের মেঘনা নদীর পাড় বিভিন্ন কারনে তার পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে নদীর পাড়ের পরিবেশ রক্ষায় আপনাদের গাঙ সমিতির পক্ষ থেকে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন কি?
শামসুজ্জামান বাচ্চু- আসলেই আমাদের এই মেঘনা নদীর পাড় সুন্দর ও মনোরম সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্র আমরা জানি রাঙ্গামাটিতে একটি হ্যাঙ্গীং ব্রীজ রয়েছে আমাদের এখানে রয়েছে ৩টি ব্রীজ যা কিনা বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। একটি হচ্ছে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু আরেকটি হচ্ছে রেলওয়ে আব্দুল হালিম সেতু এবং অন্যটি হচ্ছে প্রস্তাবিত জিল্লুর রহমান সেতু। এ ৩টি সেতুর অববাহিকায় আমাদের মনোরম মেঘনা নদীর পাড় একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রে পরিনিত হয়েছে। বাংলাদেশের এমন কোন জায়গা নেই যে আমি ভ্রমন করিনি কিন্তু আমার মতে দৃষ্টি নন্দন হিসেবে ভৈরবের মেঘনা নদীর পাড় আমার কাছে প্রিয় সুন্দর্যের স্থান। কিন্তু দুঃখ্যের বিষয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স,প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার অনেক সাংবাদিক থাকা স্বত্যেও আমাদের এই সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রের সঠিক প্রচার প্রচারনা হচ্ছে না। আমরা আসা করবো সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার উদ্যোগে একটি দৃষ্টি নন্দন পার্ক ও একটি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য যে যে পদক্ষেপ ও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন সেটি বাস্তবায়ন এর জন্য অতিব জরুরী। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি ভৈরবের এই সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রকে বিকসিত করার জন্য যেন মুর্জি হয়। এতে করে ভৈরব ও আশুগঞ্জ দুই জেলার এই দু উপজেলার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে দৃষ্টি নন্দন চর সোনারামপুর সহ ভৈরবের মেঘনা নদীর পাড় সারা বাংলাদেশে পর্যটকদের কাছে বিশেষ পরিচিতি লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস। তাই স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিকট এ পর্যটন কেন্দ্্েরর সার্বিক নিরাপত্তা এবং বর্তমান সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার নিকট এ পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য বিশেষ অনুরোধ করছি।
# স্বদেশ নিউজ ডটকম- আমরা জানি যে আপনি ভৈরব প্রেসক্লাবের কয়েকবার নির্বাচিত সভাপতি ও গাঙ সমিতি ভৈরব এর সভাপতি এবং টুরেস্ট ক্লাব ভৈরবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রয়েছেন এবং ভৈরবের ঐতিহ্যবাহী কলেজ হাজী আসমত কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এছাড়া আপনি জানেন যে সরকারী ও বেসরকারীভাবে এই মেঘনা নদীর পাড় কে একটি পর্যটন শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তুলার আওয়াজ উঠেছিলো সে বিষয় আপনি যদি কিছু বলতেন?
শামসুজ্জামান বাচ্চু- আসলে অতীতে সরকারী ও বেসরকারীভাবে প্রয়াত মহামাণ্য রাষ্ট্রপতি ভৈরবের গর্ব আলহাজ্ব জিল্লুর রহমান এর সময়ে এমন একটি উদ্যোগের কথা আমিও শুনেছিলাম সেখানে বিশেষ উদ্যোগটি নেওয়ার কথা ছিলো ভৈরবের কৃতিসন্তান শিল্পপতি আলহাজ্ব ইউসুফ বাবু এ উদ্যোগটি নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলো কিন্তু বর্তমানে এ পরিকল্পনা কতদুর অগ্রগতি হয়েছে সে বিষয়ে আমি অবগত নয়।