ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে চট্টগ্রামে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। তবে তা এখনো রয়ে গেছে পাইকারি বাজারে। খুচরা বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে চালের দাম কমাতে বাধ্য হওয়ায় ফুঁসছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে চাল আমদানি ও সরবরাহ বন্ধ রাখার হুমকিও দিচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ শনিবার নগরীর বিভিন্ন বাজারে বস্তা প্রতি চালের দাম কমলেও কেজি দরে একটুও কমেনি। ফলে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে। ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে বাধ্য হয়ে আগের দামে চাল কিনতে গিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের সাথে তর্কা-তর্কিতে জড়াচ্ছেন তারা। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল সঙ্কটের কারণে চড়ামূল্যে কেনা চাল বিক্রয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেজি দরে কম মূল্যে চাল বিক্রয় সম্ভব নয়। এ জন্য আরও ৩-৪ দিন সময় লেগে যেতে পারে। নগরীর ডবলমুরিং এলাকার রহিম বস্তির বাসিন্দা জানে আলম দেওয়ানহাটে চাল কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাইকারী বাজারে বস্তা প্রতি ২০০ টাকারও বেশি চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে এক টাকাও কমেনি। বড়লোকদের দেখার জন্য প্রশাসন থাকলেও গরিবদের দেখার কেউ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেওয়ানহাটের মতো নগরীর চকবাজার, কাজীর দেউরি, বহদ্দারহাট, ঝাউতলা বাজারসহ সবকটি বাজারে চালের দাম বস্তা প্রতি ২৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু কেজি দরে আগের মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে চাল। নগরীর বহদ্দারহাটের চাল ব্যবসায়ী পরিতোষ দাশ চালের মূল্য বস্তা প্রতি কমার কথা স্বীকার করে বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে চালের মজুতদাররা গুদাম থেকে চাল ছেড়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে গত বুধবার পাহাড়তলি বাজারে একটি গুদাম থেকে ৮০ হাজার বস্তা চাল আটকের পর বাজারে চাল সরবরাহ বেড়েছে। ফলে চালের দাম বস্তা প্রতি কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা চাল বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ১৮০০ টাকা থেকে কমে আজ সকালে ১৬৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করা বেতি চাল বস্তা প্রতি ২০০ টাকা কমে ১৮৫০ টাকায়, ভারতীয় সেদ্ধ চাল ২৫০ টাকা কমে ২১৫০ টাকায়, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা চাল ২৩০০ টাকা থেকে কমে ২১৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। সেই হিসাবে কেজিপ্রতি ৪ টাকা হারে কমেছে। তবে দেশি উৎপাদিত চাল কমেছে বস্তা প্রতি ১০০ টাকা করে। যা কেজিতে দুই টাকা কমেছে। জিরাশাইল ৩১০০ টাকা থেকে ৩০০০টাকা, মিনিকেট সেদ্ধ ২৭০০ টাকা থেকে ২৬০০ টাকা, আশুগঞ্জ বেতি ২৬০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। তবে কেজি দরে চালের দাম না কমার কথা স্বীকার করে বহদ্দারহাট খুচরা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোলেমান বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের হাতে এখনো বাড়তি দামে কেনা চাল মজুদ রয়ে গেছে। ফলে আগের দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের চট্টগ্রামের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, চাল ব্যবসায়ীদের বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, শুধু আমদানিকারক নয়, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও চালের মজুদ গড়ে তোলে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। চালের দাম বাড়িয়ে বেশি মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, খুচরা পর্যায়ে গড়ে তোলা চালের অবৈধ মজুদ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে খুচরা পর্যায়েও অভিযান পরিচালনা করা হবে। সেই সাথে পাইকারী গুদামে অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত থাকবে। এদিকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযোগে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে চাল ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এবং পাহাড়লি বাজারের আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা গত সোমবার থেকে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। এতে চাল আমদানি ও সরবরাহ বন্ধ রাখার মতো প্রস্তাবও উঠেছে। যা কার্যকর না হলেও তা কার্যকর করার হুমকি দিচ্ছেন নেতারা। পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি মো. জাফর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চালের বাজার এখন আমদানি নির্ভর ও কমিশন এজেন্ট ভিত্তিক। বাজার নিয়ন্ত্রণে আমাদের কোন হাত নেই। বেনাপোল, হিলি, সোনা মসজিদসহ স্থল বন্দর ও উত্তরবঙ্গের মিল মালিক এবং আমদানিকারকদের উপর চট্টগ্রামের বাজার নির্ভরশীল। তিনি বলেন, চালের বড় পাইকারি মোকাম নওগাঁ, দিনাজপুর, শান্তাহারসহ কয়েকটি জেলায় কোনো অভিযান চালানো হয়নি। অভিযান শুধু চট্টগ্রামে কেন? চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ স¤পাদক ওমর আজম বলেন, চট্টগ্রামে যেভাবে ঢালাও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে বাজারে কোনদিনও স্থিতিশীলতা আসবে না। অভিযানের কারণে চাল ছেড়ে দেওয়ায় মূল্য কমলেও তা হবে সাময়িক। এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে অনাগ্রহ দেখালে বাজারে ফের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, সরকার শুল্ককর বৃদ্ধির কারণেই চালের দাম বেড়েছে। শুল্ককর কমানোর জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করেছিলাম। কিন্তু সরকার সঠিক সময়ে শুল্ককর না কমানোয় বর্তমান এ পরিস্থতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।