ফিলিস্তিনের প্রধান দুই দল হামাস ও ফাতাহর মধ্যে সমঝোতার লক্ষ্যে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী রামি আল হামদাল্লাহ। রামি আল হামদাল্লাহ দেশটির প্রভাবশালী দল ফাতাহর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৭ সালে সংঘটিত গৃহযুদ্ধে গাজা ও পশ্চিম তীরের কর্তৃত্ব ভাগ হয়ে যায়। হামাস ও ফাতাহ আলাদাভাবে শহর দু’টিকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সম্প্রতি দল দু’টির দ্বন্দ্ব নাটকীয় মোড় নিয়েছে। গত সপ্তাহে হামাস ঘোষণা দেয় যে, তারা রামি আল হামদাল্লাহর নেতৃত্বাধীন সমন্বিত সরকারের কাছে গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করতে চায়। কিন্তু তাদের সশস্ত্র বাহিনী ২০ লাখ মানুষের এ শহরটির প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে থাকবে। তাদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সমঝোতা প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর এই গাজা সফর অনুষ্ঠিত হলো। গাজায় প্রধানমন্ত্রী রামি আল হামদাল্লাহকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রামি আল হামদাল্লাহ বলেন, আমরা সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের জন্য গাজায় ফিরে এসেছি, বিভাজনের প্রভাব কাটিয়ে নতুন করে গাজা নির্মাণ করতে চাই। তিনি বলেন, বিশ্বকে জানানোর জন্য আমরা মাহমুদ আব্বাসের পক্ষ থেকে নির্দেশনা নিয়ে এসেছি। আর তা হলো গাজা ও পশ্চিম তীরের মধ্যে রাজনৈতিক ও ভৌগলিক ঐক্য ব্যতীত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে পারে না। গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত পুলিশ চেক পয়েন্টে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। তাকে স্বাগত জানানোর জন্য শত শত ফিলিস্তিনি জড়ো হয়। তাদের অনেককে এ সময় ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর আগমন নিয়ে উচ্ছ্বসিত গাজার অধিবাসীরা। ৪৬ বছর বয়সী আব্দেল মজিদ বলেন, এটা আমাদের ঈদের দিন, জাতীয় ছুটির দিন। আমরা আশা করি যে এবারের সমঝোতা কাজে দেবে। হামাসের এই পরিবর্তন ২০১৪ সালে সমন্বিত সরকার গঠনের পর ফিলিস্তিনের জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। ২০০৭ সালে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অনুসারীরা গাজার নিয়ন্ত্রণ হারায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ বিভাজন কমে যাওয়া প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ইসরাইল বিরোধী সংগ্রামে সাহায্য করতে পারে। ইসরাইলসহ পশ্চিমা দেশগুলো হামাসকে সন্ত্রাসী দল বলে আখ্যা দেয়। দলটি গত মাসে জাতীয় ঐক্যের জন্য নাটকীয় পদক্ষেপ নেয়। তারা গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা ছায়া সরকারের পতন ঘটায়। সন্ত্রাসবাদে সহায়তার অভিযোগে তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক দেশ কাতারের ওপর মিসর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার পর এ পদক্ষেপ নেয় দলটি। যদিও কাতার সন্ত্রাসবাদকে সহায়তা করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীর গাজা সফরের ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়কারী নিকোলে মালদেনোভ। তিনি টুইটারে বলেন, সামনের পথ হবে দীর্ঘ ও কঠিন, কিন্তু তাই বলে সমঝোতা ও শান্তির প্রক্রিয়া বাদ দেয়া ঠিক নয়।
এদিকে, হামাস ও ফাতাহর মধ্যে এই ঐক্যপ্রচেষ্টার সমালোচনা করেছেন ইসরাইলের কূটনীতি বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী মাইকেল ওরেন। তিনি বলেছেন, দুই তিন বছর পর পরই এমন ঘটনা (ঐক্যপ্রচেষ্টা) ঘটে। আর হামাসও ইসরাইল ধ্বংসের জন্য নিবেদিত থাকে। এখানে একটা বিষয় হলো, হামাস তার অস্ত্র ধরে রাখতে সক্ষম হবে কিনা। যদি তারা সশস্ত্রই থাকে তাহলে এ ঐক্যপ্রচেষ্টা ইসরাইলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। গাজা সফরে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী হামদাল্লাহর। এছাড়া ২০১৪ সালে ইসরাইলের হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শেজাইয়া ভ্রমণ করবেন তিনি। মঙ্গলবার গাজায় ফিলিস্তিন মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকের বিষয়বস্তুর ব্যাপারে দেশটির সংস্কৃতিমন্ত্রী এহাদ বেইসো বলেন, বৈঠকের বিষয়বস্তু বিভিন্ন পরিকল্পনায় ভরপুর। এখন আমাদের প্রয়োজন ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সমন্বয় প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নেয়া।