হামিম রাফি , নিউজ ডেস্কঃ দুই মাস পরে আদালতের নির্দেশে নিজের মায়ের কোলে ফিরে গেছে শিশু হুমাইশা মাইমুন। ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার শিশুটির মা ও শিশুটিকে উদ্ধার করা পথচারী দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে হুমাইশাকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন অাদালত।
শিশুটির মা বৃষ্টি জানান, মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রেমের সম্পর্ক থেকে পোশাক শ্রমিক সাগরকে বিয়ে করেন বৃষ্টি। বৃষ্টি সন্তান সম্ভবা হলে তাকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে নারাজ ছিলো সাগর। তাই সন্তান জন্মের পরদিনই গত ১৬ই জুলাই রোববার স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে শিশুটিকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় সাগর।
সন্তান হারানোর ঘটনার দিনের স্মৃতিচারণ করে বৃষ্টি বলেন, ‘সকাল বেলা আমি ওকে ফোন দিয়েছি। সে বলেছে আমাকে দেশে (গ্রামের বাড়িতে) নিয়ে যাবে। আমরা বের হলাম। সে বললো, আগে খালাদের বাসায় যাবো। আব্দুল্লাহপুর নেমে সে বললো, এখানে একটু দাঁড়াও আমি সামনে থেকে আসছি। বাবুরে কোলে করে নিয়ে চলে গেছে। পরে আর আসে নাই।’
এ ঘটনায় বৃষ্টি বাড্ডা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অন্যদিকে, রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটিকে ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে পান পথচারী শাকিল ও তার পরিবার। পরে শিশুটির অভিভাবককে খুঁজে পেতে একই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে একদিনের বাচ্চাটিকে পুলিশ শাকিলের জিম্মায় দিলে তিনি তাকে বাড়িতে নিয়ে যান।
মায়ের মমতায় নবজাতকটিকে লালন পালন করতে থাকেন শাকিলের বোন। এছাড়া শিশুর অভিভাবক শনাক্তে আদালতের শরণাপন্ন হয় পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসল মা বৃষ্টির কোলে শিশুটিকে তুলে দেয়ার আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে শিশুর সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে তিন মাস পর পর হাজিরা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আসল মায়ের হাতে শিশুটিকে তুলে দেয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মায়ের মমতায় আগলে রাখা পথচারী শাকিলের বোন। তিনি বলেন, ‘ডিএনএ টেস্ট ছাড়াই বাচ্চাটাকে দেয়া হচ্ছে। আদালত যদি দিয়ে দেয় তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। আমরা রাখতে চেয়েছি। অনেক চেষ্টা করেছি। আমরা জানিও না যে, আজকে দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন থেকে পালতেছি। আমার একটা মায়া জন্মে গেছে। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারছি না। ওকে দিতেও পারছি না। আমরা যে বাচ্চাটাকে দিয়ে দেবো, দিলাম। কিন্তু ও (বাচ্চার প্রকৃত মা) নিজেই কোর্টে আসার গাড়ি ভাড়া পায় না। এই বাচ্চার কি নিরাপত্তা আছে। বাচ্চার নিরাপত্তার ভবিষ্যতের জন্যই তার প্রকৃত মায়ের কাছে তাকে দেয়া উচিৎ না।’
এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক হোসেন বলেন, ‘আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃত মা বাচ্চাটাকে পাবে।’ তিনি জানান, আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও সন্তানকে বড় করে তুলতে চায় মা বৃষ্টি। পাশাপাশি শিশুটিকে নির্মম ভাবে ফেলে দেওয়ায় স্বামীর বিচার চান তিনি।