নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে দুই ইস্যুতে জোর দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইলেক্ট্রনিক ভোটিং (ই-ভোটিং) পদ্ধতি চালু। আগামী ১৮ই অক্টোবরের সংলাপে আরো বেশকিছু বিষয় সামনে আনবে দলটি। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও এ দুই ইস্যুর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে। এরই মধ্যে সংলাপ প্রস্তুতি শুরু করেছে তারা। এ উপলক্ষে কয়েক দফা বৈঠকও করা হয়েছে। ওদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রথমে প্রাথমিক প্রস্তাবনা তৈরি করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরে দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেকগুলো প্রস্তাবনা রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি বিষয়কে সবচেয়ে জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন শেখ হাসিনা ও ই-ভোটিং। মূলত অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা এ দাবি জানাবো। তবে দলীয় সভাপতি ও কার্যনির্বাহী বৈঠকে সবকিছু চূড়ান্ত হবে। আওয়ামী লীগ দলীয় নেতারা জানান, সংলাপে ইসি’র কমিশনের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়া হবে। এছাড়া কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে কে কী প্রস্তাব দিচ্ছে তাতে দৃষ্টি রাখছে ক্ষমতাসীনরা। বিশেষ করে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে কী প্রস্তাব দেয়, সে বিষয় জানতে আগ্রহী আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, অতীতে যেসব নেতা বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় কৌশল নির্ধারণে কাজ করেছেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলের প্রস্তাব কী হবে এ নিয়ে তারাই কাজ করছেন। সংলাপে অংশগ্রহণ পূর্ব-প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতারা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। নির্বাচন কমিশনে দলের পক্ষে কী কী প্রস্তাব তুলে ধরা হবে, তা নিয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে কাজ করছে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুুর রাজ্জাক, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উল্লিখিত প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রস্তাবে কী কী থাকতে পারে সে প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে থাকবে অভিন্ন পোস্টার ও নির্বাচনী এলাকায় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জনসভার আয়োজন করা। সেখানে নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী প্রতিটি দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরবেন। এ অভিন্ন সমাবেশ একাধিকবারও হতে পারে। এ ছাড়া প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা, নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট একটি ‘টোকেন মানি’ সরবরাহ, নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচন কমিশনের বাজেট স্বাধীনভাবে খরচ করতে দেয়ার বিষয়গুলোও ক্ষমতাসীন দলের প্রস্তাবে থাকবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে স্পষ্ট যুক্তি তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। বলা হবে, নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রধান থাকলেও তিনি শুধু রুটিনমাফিক কাজ করবেন। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেই সব ক্ষমতা ইসি’র কাছে থাকবে। সব পর্যায়ের রদবদলের দায়িত্বেও থাকবে নির্বাচন কমিশন। সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি বিবেচনা করলে সেনা মোতায়েন করতে পারে। তবে তা হবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। তাদের হাতে কোনোমতেই বিচারিক ক্ষমতা দেয়া যাবে না। এদিকে বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচন কমিশন সংলাপের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ডেকেছেন। সেখানে আমাদের জোটের অংশীদার বিভিন্ন দলও অংশ নেবেন। তবে আমাদের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা হলো- নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে। এ প্রস্তাবটি সবাই উত্থাপন করবেন। ওই বৈঠকে জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এমএ আউয়াল, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজ, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। ২৪শে আগস্ট থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে ৯ই অক্টোবর, বিএনপি’র সঙ্গে ১৫ই অক্টোবর সংলাপে বসবে ইসি।