ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রেই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাবির পরীক্ষা শুরুর আট ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। কিন্তু শুক্রবার সকালে পরীক্ষা শেষে মিলিয়ে দেখা গেছে যে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রেই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে প্রথম বর্ষ (স্নাতক) সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।বৃহস্পতিবার (১৯শে অক্টোবর) রাত আড়াইটার দিকে বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদক ফাঁস হওয়া একটি প্রশ্নপত্র হাতে পান। যা শুক্রবার অনুষ্ঠিত প্রশ্নপত্রের সঙ্গে শতভাগ মিলে গেছে। তবে পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এমনটি মানতে রাজি হননি ঢাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এম আমজাদ আলী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালে কয়েকজন পরীক্ষার্থী জালিয়াতির চেষ্টা করেছে। তাদেরকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’ পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বলেন, ‘এমন কোনো অভিযোগ বা তথ্য আমাদের কাছে নেই। এটা হতে পারে না।’ এদিকে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে দেখা গেছে, ইংরেজি প্রথম প্রশ্ন ছিল “হোয়াট ইজ দ্য মিনিং অব দ্য ইডিওম ‘টু ফলো ইয়র নোজ?’’ তৃতীয় প্রশ্ন ছিল “দ্য হাইওয়ে এজেন্স…বেড ওয়েদার…” অস্টম প্রশ্ন ছিল “জার্মানি হ্যাজ ওন দ্য ফুটবল ম্যাচ…” ১২তম প্রশ্ন ছিল “দিস ইজ দ্য স্কল হুইচ…” এবং ২০ নম্বর প্রশ্ন ছিল “অ্যা পিস অব কেক মিনস”। শুক্রবার পরীক্ষা শেষে প্রশ্ন মিলিয়ে দেখা গেছে, একটি সেট ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। এবার ঢাবি ক্যাম্পাসে ৫৩টি ও ক্যাম্পাসের বাইরে রাজধানীর ৩৩টি স্কুল-কলেজসহ মোট ৮৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৬১০টি (বিজ্ঞানে-১১৪৭টি, বিজনেস স্টাডিজে- ৪১০, মানবিকে-৫৩টি) আসনের জন্য ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ৯৮ হাজার ৫৪ জন।
এদিকে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ডিজিটাল জালিয়াতির দায়ে ১২ জন ভর্তিচ্ছু এবং বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম ও সিআইডির বিশেষ অভিযানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে জালিয়াত চক্রের তিন মাস্টারমাইন্ডকে আটক করা হয়েছে। আটক ১২ ভর্তিচ্ছুকে এক মাস করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে। বাকি চক্রের তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর বলেন, গতরাতে জালিয়াত চক্রের তিনজন এবং আজ ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির সময় ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনকে ভ্রম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিশ্ববিদ্যালয়।
আটক ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা জালিয়াত চক্রের হোতা। ক-ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার আগ থেকে তাদের খুঁজছিল সিআইডি। এরা হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মহিউদ্দিন রানা এবং ফলিত রসায়ন বিভাগের আব্দুল্লাহ আল মামুন। বাকি ১২ ভর্তিচ্ছু হলেন- নুর মোহাম্মদ মাহবুব, ফরহাদুল আলম রানা, ইশরাক হোসেন রাফি, আব্দুল্লাহ আল মুকিম, রিশাদ কবির, আসাদুজ্জামান মিনারুল, ইশতিয়াক আহমেদ, জয় কুমার সাহা, রেজওয়ানা শেখ শোভা, মাশুকা নাসরিন, তারিকুল ইসলাম এবং নাসিরুল হক নাহিদ।