কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই নাটকীয়ভাবে একদিন এগিয়ে এসেছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের দিল্লি সফরের কারণেই সাউথ ব্লক মন্ত্রীর ঢাকা সফরটি এগিয়ে এনেছে। অবশ্য
ঢাকার সঙ্গে আলোচনা করেই সফরসূচির এ পরিবর্তন। এমনটাই জানিয়েছে সেগুনবাগিচা। কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ বিমানে চড়ে আজ দুপুরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করবেন তিনি। সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।সফরের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে দেখা করবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। রাজনৈতিক ওইসব বৈঠকে ‘রাজনীতি’ নিয়েই আলোচনা হবে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে অবশ্য ধারণা দেয়া হয়েছে, চীনের প্রভাব ঠেকাতেই সুষমা স্বরাজের এ সফর। রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, এক মাসের কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে যাচ্ছেন ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় দ্বিতীয় কোনো মন্ত্রী। সম্প্রতি ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ঢাকা সফরের বিষয়টি সেখানে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে আনা হয়েছে। এদিকে ভারতের বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের রিপোর্টেও অভিন্ন ধারণা দেয়া হয়েছে। সেখানে অবশ্য খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতাকে বড় করে দেখানো হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, বেইজিংয়ের সঙ্গে বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠতার খবরে উদ্বিগ্ন মোদি সরকার। আর তাই এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠকে বসতে চলেছেন সুষমা স্বরাজ। ওই রিপোর্টে খালেদা-সুষমা বৈঠকে কি হতে পারে সেই ধারণাও দেয়ার চেষ্টা করেছে কলকাতার ওই দৈনিক।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসির মূল স্তম্ভ হলো বাংলাদেশ। ভারত মহাসাগরে নিজের এজেন্ডা সম্প্রসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে চীন। এর প্রেক্ষিতে সন্ত্রাস বিরোধী ও আঞ্চলিক সংযুক্তির ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ভারতীয় কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও দেশ (এলিমেন্ট) হলো বাংলাদেশ। তাই ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তার দু’দিনের এ সফরে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে বড় ধরনের অর্থায়নের পরিকল্পনা করছে ভারত। নয়াদিল্লির অর্থায়নে ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন তিনি এমনটাই আশা করা হচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে- দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতির অধীনে আঞ্চলিক ফ্রন্টলাইন অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। এক মাসের কম সময়ের মধ্যে তাই ঢাকা সফরে যাচ্ছেন ভারতের শীর্ষ স্থানীয় দ্বিতীয় মন্ত্রী হিসেবে সুষমা। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ওই সফরের সময় তিনি ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। ভারতের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পাওয়া দেশ হলো বাংলাদেশ। ২০১০ সাল থেকে তারা মোট ৮০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পেয়েছে। ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, বিবিআইএন, বিমসটেকসহ আঞ্চলিক গ্রুপিংয়ের ক্ষেত্রে ঢাকা শুধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই রাখছে এমন নয়। সফরের সময় অরুণ জেটলি বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সফলতার জন্য কানেকটিভিটি বা সংযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন সবচেয়ে উষ্ণ পর্যায়ে আছে। বাকি দেশগুলোর জন্য এটা একটি অনুকরণীয় হতে পারে। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সুষমা স্বরাজ এমন এক সময়ে ঢাকা সফরে যাচ্ছেন যখন মিয়ানমারের রাখাইনে নৃশংসতার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে। সংকট সমাধানে ঢাকার কাছে ভারতের মানবিক সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচনায় আসবে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা বোধগম্য যে, সীমান্ত পার হয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ যাতে বন্ধ হয় এমন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করা হবে সুষমাকে। এছাড়া ২০১৫ সালের জুনে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় এবং ২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নের অগ্রগতি কতটুকু তা রিভিউ করবে ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট কমিশন। এতে সভাপতিত্ব করবেন সুষমা স্বরাজ ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশে রাশিয়ার সমর্থনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে ভারত।
এদিকে আনন্দবাজার গত ২০শে অক্টোবর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফর নিয়ে একটি বিশ্লেষণ ছেপেছে। যা হুবহু এমন- বাংলাদেশে নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বেইজিং যেভাবে সে দেশের বিরোধী দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মোদি সরকার। তবে তার পরেও প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ এবং আলোচনার পরিধি বাড়াতে চাইছে দিল্লি। সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে (রোববার) ঢাকা সফরে গিয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গেও বৈঠকে বসতে চলেছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের উপর প্রভাব ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব তৈরি করতে দীর্ঘদিন ধরেই সচেষ্ট চীন। দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য কায়েমের উদ্দেশ্যে নেপালের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ভারতের ভূমিকা খর্ব করতে কৌশলগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। এই প্রেক্ষাপটে খালেদার সঙ্গে চীনা প্রতিনিধিদের যোগাযোগের নতুন তথ্য কপালে ভাঁজ ফেলেছে দিল্লির। হাঁটু ও চোখের চিকিৎসার জন্য জুলাইয়ের ১৫ তারিখে লন্ডন গিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা। ফিরেছেন বুধবার। লন্ডনে পুত্র তারেক রহমানের বাড়িতে থেকে পাকিস্তান, চীন, সৌদি আরবের মতো দেশের কূটনীতিক বা প্রতিনিধিদের সঙ্গে খালেদা বৈঠকে বসেছেন বলে খবর পেয়েছে দিল্লি। গত মাসের ২১ তারিখ লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনের দপ্তরে ‘ডিফেন্স ডে’-এর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন খালেদা। সেখানেই বৃটেনে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ হয় খালেদার। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গেও সুসম্পর্ক রেখে চলেছে চীন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে হাসিনা ভারতের হিতার্থে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি চীনের সঙ্গেও সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে শক্তি, পরিকাঠামো এবং বাণিজ্যক্ষেত্রে চীন বিশাল বিনিয়োগ করেছে। এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির নেতৃত্বের একটি বড় অংশের মত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি খালেদার সঙ্গেও যোগাযোগ তৈরি করা হোক। কারণ বেগম জিয়াকে চীনের প্রভাবে চলে যেতে দেয়াটা ঠিক হবে না। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের কথায়, কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি দিল্লি পক্ষপাত দেখায় না। বাংলাদেশের কিছু দলই ভারত-বিরোধিতার রাজনীতি করে। দিল্লি চায়, আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নিক, যাতে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক না ওঠে। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ পড়শি দেশে রাজনৈতিক ব্যবস্থা দুর্বল হওয়াটা দিল্লির কাম্য নয়। বিএনপি নেত্রীকেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরামর্শ বৈঠকে দিতে পারেন সুষমা।
হাই প্রোফাইল সফরে যা থাকছে: ওদিকে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, হাই প্রোফাইল ওই সফরের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই কমবেশি আলোচনা হবে। বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জেসিসি বৈঠকে অংশ নেবেন। হোটেল সোনারগাঁওয়ে ওই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় সুষমা স্বরাজ সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। গণভবনের ওই সাক্ষাৎ শেষে তিনি হোটেলে ফিরবেন। সেখানে তার সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন। পরদিন সকালে ভারতীয় ঋণে বাংলাদেশে উন্নয়নে ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তিনি। সেই আয়োজনে বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে এবং ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সুষমার ‘রাজনৈতিক’ ওই সফরে সিরিজ বৈঠক হবে। সেখানে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হবে। রাজনৈতিক বিষয়াবলীর পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টি আলোচনার টেবিলে তুলবে ঢাকা। বাংলাদেশে আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ শাসক দলের তরফে এবারের নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, অন্তত ৫ই জানুয়ারির মতো হবে না- এমন বার্তা দেয়া হয়েছে। সে মতেই সরকারি দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিপরীত দিকে বিগত নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় জাতীয় সংসদের বাইরে চলে যাওয়া প্রধান বিরোধী জোটও অনেকটা নীরবে ঘর ঘোছাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে দিল্লির মনোভাবের বিষয়টি সুষমার সফরে স্পষ্ট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। ঐতিহাসিক এক রায় নিয়ে বিতর্কের জেরে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এখন ছুটিতে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে, প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে যে সব ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে সাউথ ব্লক। এখানে ‘বিচারপতিকে হেনস্তা’ করা হয়েছে বলেও মনে করছে দিল্লি। অন্তত দিল্লি সংবাদ মাধ্যমে এভাবেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে, প্রধান বিচারপতিকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নয়াদিল্লি। এ নিয়ে সুষমা স্বরাজ তার ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন। ‘বাংলাদেশের নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যকার সংঘাতকে ‘অনভিপ্রেত’ মনে করছে দিল্লি এমনটা উল্লেখ করে আনন্দবাজারের রিপোর্টে বলা হয়েছে- ‘গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের বিরোধে রাজনৈতিক ব্যবস্থা যে দুর্বল হয়, তা বিলক্ষণ জানে নয়াদিল্লি। যা ভারতের জন্য একেবারেই শুভ সংকেত নয়।’ এ নিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের জিজ্ঞাসার জবাবে দিল্লির ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাবে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেছেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছুটি থেকে ফিরে এসেই কাজে যোগ দিতে পারবেন! ছুটি ও চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে কাল সকালে সিনহা ফিরে দায়িত্ব নিতে চাইলে কোনো সমস্যা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। অবশ্য হাইকমিশনারের ওই বক্তব্যের পরও ঢাকায় সরকারের তরফে ভিন্ন বক্তব্য শোনা গেছে। আজ সুষমা এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদৌ কি কথা বলবেন, বললে তিনি কি বলবেন, এতে কি নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যকার ভুল বুঝাবুঝি নিরসন হবে? এ প্রশ্নের জবাব পেতে হয়তো আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। অন্তত ঢাকা এবং নয়াদিল্লি আনুষ্ঠানিক সংবাদ ব্রিফিং পর্যন্ত তো বটেই!
জেসিসি বৈঠকের এজেন্ডায় যা থাকছে: সুষমা স্বরাজের সফর বিশেষ করে জেসিসির বৈঠকের এজেন্ডায় সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন অবস্থানের বিষয়টি থাকছে। এছাড়া জ্বালানি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, উপ-আঞ্চলিক সংযুক্তি সহ আরো বিষয় থাকছে বলে আভাস মিলেছে। তবে ঢাকার তরফে সেখানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে দিল্লির সুসংহত অবস্থান কামনা করা হবে। এ নিয়ে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনা হবে জানিয়ে সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, মানবিক কারণে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হলেও ঢাকা চায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের রাখাইনে নিজ নিজ বসতভিটায় নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরত পাঠাতে। এ নিয়ে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট এবং ইতিবাচক। আমরা বিশ্ব সমপ্রদায়ের সম্পৃক্ততায় মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ সংকটের শান্তিপূর্ণ এবং স্থায়ী সমাধান করতে চাই। রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে প্রতিবেশী ভারতকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পাশে চায় বাংলাদেশ। কূটনৈতিক যোগাযোগে ভারত অবশ্য সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। ঢাকা এখন চাইছে ভারতের সেই অঙ্গীকারটি আরো সুসংহত হোক। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র সমপ্রসারণে সই হওয়া ‘রূপরেখা’ চুক্তির আওতায় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শমূলক কমিশন (জেসিসি) বৈঠক হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত জেসিসির ৩টি বৈঠক হয়েছে। যার দুটি দিল্লিতে আর একটি ঢাকায়। সেই সব বৈঠকে নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো, লাইন অব ক্রেডিট, জনগণের আন্তঃযোগাযোগ, বাণিজ্য বাধা অপসারণ, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবারের বৈঠকেও সেই ধারাবাহিকতা থাকছে।