দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি চলছে চট্টগ্রামে। ঝিরিঝিরি থেকে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি। শুক্রবার প্রথমদিন ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও গতকাল মাত্র ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। আর এতে অচল হয়ে পড়েছে
চট্টগ্রাম। নিম্নচাপের প্রভাবে চলমান এই বৃষ্টিপাতের প্রথমদিনে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকা, নালা-নর্দমা ও ভাঙাচোরা সড়কগুলো ডুবলেও গতকাল তেমনটি হয়নি। তবে সড়কের গর্তগুলো জমা পানিতে মনে হচ্ছে একেকটি ডোবা।আর এতেই আনা-গোনা কমে গেছে মানুষের। কমে গেছে যানবাহন চলাচল। দোকানপাটও তেমন খুলেনি।
নগরবাসীর মতে, বৃষ্টিপাত কম হলেও বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে চট্টগ্রামে। সকাল থেকে দমকা-হাওয়া বয়ে যাওয়ায় মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। এ ছাড়া ভাঙাচোরা সড়কে কাদাজলে পোশাক ও জুতো নষ্ট করতেও রাজি নয় কেউ।
সড়কে মানুষ কমে যাওয়ায় যানবাহন নিয়ে বের হয়নি চালকরাও। এমনটাই জানিয়েছেন যানবাহন চালক, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী মানুষেরা। তবে খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে নিত্যদিনের মতো আজও কর্মতৎপর থাকতে দেখা যায়।
নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে ফল বিক্রেতা জহির উদ্দিন জানান, রাহাত্তারপুলের বাসা থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাদাজলে সড়ক মাড়িয়ে অনেক কষ্টে তিনি ফল বিক্রি করতে এসেছেন। অন্যদিন ৫ টাকা ভাড়ায় বাসে আসলেও আজ ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া গেছে তার।
জিইসির মোড়ে অভিজাত মার্কেট সেন্ট্রাল প্লাজার মোবাইল ও কম্পিউটার শপ ইমপেক এর ব্যবস্থাপক রাখাল চন্দ্র দাশ জানান, গতকাল সকাল থেকে আকাশের যা গুমোটভাব। নগরজুড়ে কালো অন্ধকার। মনে হচ্ছে এই বুঝি বড় ধরনের ঝড়ো-হাওয়া নেমে আসবে।
তিনি বলেন, সকাল থেকে দমকা হাওয়া বইছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কথাও বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাই ঘর থেকে বের হইনি। দোকানও খুলিনি।
নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বনফুল কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক জিশান বলেন, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে তেমন পানি না জমলেও সড়কের গর্তগুলো ডোবায় পরিণত হয়েছে। তাছাড়া ওয়াসা ও উড়াল সড়কের খোঁড়াখুঁড়িতে চট্টগ্রাম কাদার নগরীতে পরিণত হয়েছে। কাদাজলে কাপড়-চোপড় নষ্ট করার কোনো কারণ নেই। গর্তে পড়ে হাত-পা ভেঙে নাকাল হওয়ার কোনো মানে নেই। তাই বের হইনি।
চট্টগ্রাম কালুরঘাট-বিমান বন্দর সড়কে চলাচলকারী স্পেশাল বাস সার্ভিস মেট্টো প্রভাতির চালক জামশেদুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টি আর গুমোট আবহাওয়ার কারণে সড়কে মানুষের আনা-গোনা কম। পুরো নগর প্রায় ফাঁকা। ফলে যানবাহন চলাচলও কমে গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন বলেন, বৃষ্টিতে সড়কের বড় বড় গর্তে চাকা আটকে যানবাহন নষ্ট হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বাসচালক ও সহকারীরা। ফলে বহু বাস-মিনিবাস এখন গ্যারেজে। এতে যানবাহন চলাচল কমে গেছে।
এদিকে পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়। তবে মাঝে মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। শুক্রবার টানা বৃষ্টির প্রথমদিনে ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল বৃষ্টিপাত কমে গেছে।
সূত্র আরো জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে মাত্র ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি কম হলেও বইছে দমকা-হাওয়া। রয়েছে জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা। তাছাড়া সকাল থেকে আবহাওয়া এতটাই গুমোট যে, পুরো চট্টগ্রামজুড়ে অন্ধকার বিরাজ করছে। ফলে মানুষ ভয়ে ঘর থেকে তেমন বের হযনি।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ওডিশা ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ কারণে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। রাতে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিও হতে পারে।
উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কাও রয়েছে। আজ ভোর নাগাদ এটি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। চট্টগ্রামসহ দেশের নদী বন্দরসমূহে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে। নৌবন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।