মাঠে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে জয় চান তারা। তবে মাঠের খেলায় তেমন দেখা গেল থোরাই। গতকাল ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্ক ভেন্যুতে আগে ব্যাটিং শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ পৌঁছে ৩৬৯/৬-এ। জবাবে ১৬৯ রানে গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ৯.৩ ওভার বাকি রেখে কাঁটায় কাঁটায় ২০০ রানে হার দেখে টাইগাররা। ওয়ানডেতে নিজেদের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে হারের রেকর্ড স্পর্শ করলো বাংলাদেশ।দিনের শুরুতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের আগের রেকর্ডটি ছিল ৩৫৮ রানের। ২০০৮-এ বেনোনিতে সফরকারী বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন রেকর্ড গড়ে প্রোটিয়ারা। চলতি সিরিজে একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থতা নিয়ে দলের বোলারদের কাঠগড়ায় তোলেন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি। গতকাল সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতেও বিশৃঙ্খল নৈপুণ্য দেখান টাইগার বোলাররা। তবে দায় এড়াতে পারেন না ব্যাটসম্যানরাও। জয় দূরের কথা ক্রিজে ব্যাট হাতে সামান্যতম লড়াইও দেখাতে ব্যর্থ তারা। গতকাল ইনিংসের পাঁচ ওভার না ফুরাতেই সাজঘরে ফেরেন ব্যাটিংক্রমের শীর্ষ তিন খেলোয়াড় ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার ও লিটন কুমার দাস। পরে ঠুনকো ব্যাটিংয়ে উইকেট খোয়ান মুশফিুকর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরাও। পাঁচ ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল ১, ৮, ৬, ৮ ও ২। এতে মাত্র ১৪.৩তম ওভারে ৬১/৫ সংগ্রহ নিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।
সিরিজে প্রথমবারের মতো টস জিততে দেখা গেল প্রোটিয়াদের। আর টস জিতে ব্যাটিংয়ে প্রোটিয়া দেখালো একাট্টা নৈপুণ্য। গতকাল ৩৬৯/৬ সংগ্রহ নিয়ে ইনিংস শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনিংসে ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি ছিল না একটিও। ওয়ানডে ইতিহাসে কোনো ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড এটি। এমন শীর্ষ রেকর্ডটিও দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০০৭-এ পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ পৌঁছে ৩৯২ রানে। সিরিজের দুই টেস্ট ও শুরুর দুই ওয়ানডেতে টস জেতে বাংলাদেশ। গতকাল বড় টার্গেটের পেছনে ব্যাট হাতে জবাবে বাংলাদেশের লড়াই বলতে সাকিব-সাব্বিরের ক্ষণিকের প্রতিরোধ। ষষ্ঠ উইকেটে ৬৭ রানের জুটি গড়েন সাকিব-সাব্বির। ততক্ষণে ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের ৩৫তম অর্ধশতক পূর্ণ হয় সাকিব আল হাসানের। ৬৩ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন সাকিব। কিন্তু অল্প ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন সাকিব ও সাব্বির। ব্যক্তিগত ৬৩ রানে উইকেট দেন সাকিব। আর সাব্বির উইকেট খোয়ান ব্যক্তিগত ৩৯ রানে। এতে ৩১ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৩৫/৭-এ। দুজনকেই সাজঘরে ফেরান প্রোটিয়া অভিষিক্ত অকেশনাল অফস্পিনার এইডেন মার্করাম। ওয়ানডেতে শেষ ১০ ইনিংসে দ্বিতীয়বার ৫০+ রানের ইনিংস খেললেন সাকিব আল হাসান। এর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের এ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
ইস্ট লন্ডনে বিশাল টার্গেটের পেছনে ব্যাট হাতে ইনিংসের শুরুতে বিপাকে পড়ে টাইগাররা। ইনিংসের মাত্র অষ্টম বলে প্রথম উইকেট খোয়ায় বাংলাদেশ। আর ৩.২তম ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৬/২-এ। দলীয় ৩ রানে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। ১.২তম ওভারে প্রোটিয়া নবীন পেসার ডেইন প্যাটারসনের বলে ফারহান বেহারদিনের হাতে ক্যাচ দেন ইমরুল। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পার্লে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের এ বাঁ-হাতি ওপেনার। ৩.২তম ওভারে ব্যক্তিগত ৬ রানে প্যাটারসনের ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। আর ৪.৫তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন অপর ওপেনার সৌম্য সরকার। সিরিজের শুরুর দুই ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহীম খেলেন ১১০* ও ৬০ রানের ইনিংস। তবে ইস্ট লন্ডনে ব্যক্তিগত ৮ রানে উইকেট দেন মুশফিক। আর ব্যক্তিগত ২ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিষিক্ত পেসার উইলেম মুল্ডারের ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। গতকাল দলীয় ১৩৫ রানে সপ্তম উইকেট খোয়ায় বাংলাদেশ। এতে জাগে বড় হারের শঙ্কা। ওয়ানডেতে রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের বড় হারের ঘটনাটি ১৭ বছরের পুরনো। ২০০০-এ ঢাকায় পাকিস্তানের কাছে ২৩৩ রানে হার দেখে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে পাকিস্তানের ৩২০ রানের জবাবে ৮৭ রানে গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০৬ রানে হারের রেকর্ডটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ২০১১’র বিশ্বকাপে ঢাকায় ওই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৮৫ রানের টার্গেটে ৭৮ রানে ইনিংস গুটায় টাইগাররা। ২০০৩-এ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ২০০ রানের হারের ঘটনাটিও ঘরের মাঠে। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বড় রানের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ডটি নিউজিল্যান্ডের। ২০০৮-এ স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ২৯০ রানে জয় কুড়ায় কিউইরা।
তিন ম্যাচের সিরিজে সর্বাধিক ২৮৭ রানের কৃতিত্ব প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি ককের। সিরিজে যথাক্রমে ১৯৬ ও ১৯৫ রান আসে এবি ডি ভিলিয়ার্স ও হাশিম আমলার ব্যাট থেকে। তিন ম্যাচে বাংলাদেশ তারকা মুশফিকুর রহীমের সংগ্রহ ১৭৮ রান। সিরিজে প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার ফেলুকোয়াও ও কাগিসো রাবাদার সমান ৫ উইকেট শিকার টাইগার পেসার রুবেল হোসেনের।