রায়হান করির, স্বদেশ নিউজ২৪.কম: নিজ পরিস্থিতি, পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিক সকল কিছু নিয়েই প্রত্যেকেই চায় সুখী হতে। আনন্দে এবং সুখে জীবন যাপন করতে। সুখী হবার পেছনে সকলেই দৌড়ায়। সুখী হতে হলে কী করতে হবে সেটা সকলেই জানতে চায়। কিন্তু সুখী হতে চাইলে কী করা বাদ দিতে হবে অথবা কোন অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করতে হবে সেটাও জানার প্রয়োজন রয়েছে।
বরং বলা যায় ‘সুখী হতে চাইলে কী করা উচিৎ’ এই বিষয় সম্পর্কে জানার আগে জানা দরকার, সুখী হতে চাইলে কোন বিষয়গুলো নিজের জীবন থেকে একেবারেই বাদ দিয়ে দেওয়া উচিৎ। কারণ, এই অভ্যাসগুলো প্রাত্যহিক জীবনে বহাল থাকলে সুখী হবার জন্য অন্যান্য কাজ করলেও প্রকৃত অর্থে সুখী মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। নিজের মানসিক শান্তি এবং জীবনে ভালো থাকার প্রয়োজনে কিছু অভ্যাস, কিছু কাজ, কিছু চিন্তাধারা একেবারেই বাদ দিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।
সবসময় নিজেকে সঠিক ভাবা বন্ধ করতে হবে
সবসময় সবকিছুর ক্ষেত্রে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য অনেক বেশী মানসিক চাপের প্রয়োজন হয়। এই সকল মানসিক চাপ খুব স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষের মনের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়। ফলে সুখে থাকার ব্যাপারটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের ক্ষেত্রে যে সমস্যাটি দেখা যায় সেটা হল, কোন কাজের ক্ষেত্রে নিজের ভুল একেবারেই স্বীকার করতে চান না। কারণ এতে তার অহংবোধে আঘাত হানে। যার ফলে নিজেকে সঠিক দেখানোর জন্য বাড়তি চাপ নিয়ে অনেকেই অনেক কাজ করে থাকেন। এ সকল কারণে যে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় সেটা কোন মানুষকে অসুখী করার জন্য যথেষ্ট।
অতীত সম্পর্কে চিন্তা করা বাদ দিতে হবে
অতীত মানে যেটা চলে গেছে, যে সময়গুলো গত হয়ে গেছে, পেছনে ফেলে আসা প্রতিটা মুহূর্ত। হোক কষ্টদায়ক কিংবা সুখের, অতীত কখনোই ফিরে আসে না। তাই পেছনের কথা ভেবে বর্তমান সময়গুলোকে নষ্ট করার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ এর সময়গুলোকে নষ্ট করা বন্ধ করতে হবে। বরং বর্তমান সময়কে ঘিরে পরিকল্পনা করতে হবে, কীভাবে নিজেকে আনন্দে রাখা যায় সেই বিষয়ে কাজ করতে হবে।
‘পারফেকশনিষ্ট’ হওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে
জীবনে সুখী হওয়ার অন্যতম একটি অন্তরায় হলো অতিরিক্ত খুঁতখুতে হওয়া, তথা পারফেকশনিষ্ট হওয়া। কোন ব্যক্তি যদি পারফেকশনিষ্ট হয়ে থাকেন তবে সে নিজেই সুখী হওয়ার সকল উপাদান থেকে নিজেকে দূরে রাখছেন। খুব সাধারণভাবে বললে- পরীক্ষায় সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার পেতেই হবে, এমন মনোভাব জীবনের উপরে অনেক বেশী চাপের সৃষ্টি করে। পরীক্ষায় ভালো ফল করার তাগিদ এবং সকলকে ছাড়িয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার তাগিদের মাঝে থাকে বিস্তর পার্থক্য।
অভিযোগ করা বন্ধ করতে হবে
কিছু মানুষের মাঝে একটা অদ্ভুত ধারণা কাজ করে। তারা ভাবেন, অভিযোগ না করলে তার আশেপাশের কোনকিছুই ঠিক হবেনা! যে কারণে তারা ক্রমাগত তাঁদের বাসা, বাসার মানুষ, অফিস, বন্ধু, পরিচিত মানুষ, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা- সবকিছু নিয়ে একের পর এক অভিযোগ করে যেতেই থাকেন। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। অভিযোগ করলে কখনোই কোন কিছু বদলে যায় না। বরং যে সমস্যাটি চোখের সামনে রয়েছে সেটার সমাধানের জন্য চিন্তাভাবনা করতে হবে। কীভাবে সেই সমস্যা ঠিক করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। অনেক সময় সমস্যা এমন কোন অবস্থা হতে পারে যেটা তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক করা সম্ভব নয়, যেমন: ট্র্যাফিক জ্যাম। তবে সেক্ষেত্রে নিজের মনোযোগ অন্য কিছুর দিকে দিতে হবে। বাসাতে পৌঁছে কি কাজ করা যায়, আগামীকালকের জন্য অফিসে কি কাজ শেষ করা প্রয়োজন কিংবা সপ্তাহের ছুটির দিনের প্ল্যান করে ফেলা যায়।
অন্যের সাথে নিজের তুলনা করা একেবারেই বন্ধ করতে হবে
যে কোন ক্ষেত্রে নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করার অভ্যাসটি সুখে থাকার ক্ষেত্রে তো বটেই, স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়। সবসময় মনের মাঝে অন্যের সাথে নিজের তুলনা করার অভ্যাস গড়ে তুললে, কখনোই মানসিকভাবে শান্তি পাওয়া সম্ভব হয় না। ‘অমুকের ওই জিনিসটা আছে, আমার তো নেই’ অথবা, ‘সে মাসে অতো হাজার টাকা বেতন পায় আমি তার থেকে পাঁচ হাজার টাকা কম পাই’ এমন ধরণের তুলনামূলক চিন্তাবোধ যখন মাথার মাঝে ঘুরতে থাকে, তখন কোন কিছুতেই সন্তুষ্টি কাজ করে না। যার ফলে মানসিক শান্তিটাও থাকে না একেবারেই। আর মানসিক শান্তি না থাকলে কখনোই সুখী হওয়া সম্ভব নয়, এটা কে না জানে!
সবসময় অন্যের খুশির কথা চিন্তা করা বাদ দিতে হবে
নিজের খুশির পাশাপাশি অন্যের খুশির খেয়াল রাখার ব্যাপারটি সত্যিকার অর্থেই চমৎকার একটি মানবিক গুণ। তবে সেটা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তবে সমস্যাটি শুরু হয়। নিজের খুশির চাইতে অন্যের খুশির ব্যাপারে বেশী জোর দিতে গেলে নিজের দিক থেকে অনেক কিছুতেই ছাড় দিতে হয় অনিচ্ছা সত্ত্বেও। যার ফলে নিজের ভালো থাকার ব্যাপারটি অনেকটাই হালকা হয়ে যায়। তাই অন্যের খুশির ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তবে সেখানেও রাখতে হবে নির্দিষ্ট সীমারেখা।
নিজের মনের সীমাবদ্ধতাকে দূর করতে হবে
অনেক সময় আমাদের অসুখী থাকার প্রধান কারণ আমাদের নিজেদের চিন্তাভাবনা। আমরা নিজেরা নিজেদের বিশ্বাসকে গুটিয়ে রাখি খুব ছোট একটা পরিসরের মাঝে। আমরা ধরেই নেই, ‘ওই কাজটি আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়’ অথবা, ‘অমুক জিনিসটি করার মতো কোন যোগ্যতা অথবা সামর্থ্য আমার নেই’। এই ভাবনাগুলো আমাদেরকে অসুখী করে তোলার জন্য যথেষ্ট। নিজেদের মনের এই সকল সীমাবদ্ধতা গুলোকে ঝেড়ে ফেলতে পারলে, ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারলে ভালো থাকা, সুখে থাকাটা তখন কোন বড় ব্যাপার নয়। অন্য কেউ যদি কোন কাজ করতে পারে, তবে আপনিও সেই কাজটি অবশ্যই করতে পারবেন। বিশ্বাস এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে হবে নিজের মধ্যে।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কের নেতিবাচক ঘটনাগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
এটা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার প্রয়োজন হয় নেই যে এখনকার সময়ে সকলেরই আছে সব ধরণের সোশ্যাল নেটওয়ার্কে অবাধ বিচরণ। সোশ্যাল সাইটগুলোতে সবসময় থাকার ফলে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ধরণের খবর খুব সহজে পাওয়া যায়। অনেকেই নেতিবাচক যে কোন ধরনের খবরে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই সোশ্যাল সাইটগুলোতে নিজের ব্যক্তিগত একাউন্টের সেটিং এমনভাবে রাখতে হবে যেন খারাপ খবরগুলো অহরহ চোখের সামনে না চলে আসে।
যেকোন ক্ষেত্রে পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে হবে
সফল ব্যক্তিদের জীবনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, তারা যেকন ধরণের পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতেন। সেটা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করতেন। নিজের ‘কম্ফোর্ট জোন’ এর বাইরে বেরিয়ে এসে ভালো যেকোন ধরণের পরিবর্তনকে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে নিজের মধ্যে।
দুশ্চিন্তা করা বাদ দিতে হবে
অন্য সকল কিছু করা সম্ভব হলেও অনেকের কাছেই মনে হবে যে দুশ্চিন্তা করা বাদ দেওয়াটা একেবারেই যেন অসম্ভব। জীবনের ছোট থেকে বড় যেকোন কিছু নিয়েই দুশ্চিন্তা করাটা যেন একদম অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় অনেকের জন্য। হ্যাঁ, অবশ্যই সঠিক এবং অর্থপূর্ণ কোন কারণে দুশ্চিন্তা করা যায় তবে সেটা যদি অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় তবে সমস্যা দেখা দেয়।
ভালো থাকাটা একটি অভ্যাসের ব্যাপার। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এটি নির্ভর করে নিজের বিশ্বাস, অভ্যাস এবং মনোভাবের উপর। তাই সুখে থাকার জন্য এবং ভালো থাকার জন্য কিছু নেতিবাচক অভ্যাস বাদ দেওয়া খুবই প্রয়োজনীয়।