বিপিএল খেলাকে ঘিরে জুয়ার আসরে বাধা দেয়ায় রাজধানীতে খুন হয়েছেন মানারাত ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে বাড্ডা এলাকার নিজ বাসার সামনে নাসিম আহমেদ নামের ওই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, বিপিএল খেলা ঘিরে জুয়াড়িদের জুয়ায় বাধা দেয়ার কারণে তাকে খুন করেছে বখাটেরা। রোববার রাতে বিপিএল চলাকালীন সময়ে বখাটের সঙ্গে নাসিমের কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। এক পর্যায়ে তিনি এক বখাটের গালে থাপ্পড় মারেন।এ ঘটনার জের ধরেই সকালে তাকে হত্যা করা হয় বলে স্বজনদের দাবি। নিহত নাসিমের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায় হলেও পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার পোস্ট অফিস গলিতে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। তার বাবা সাইফুদ্দিন আহমেদ গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে ডিএসভিপি হিসেবে চাকরি করেন। তিন ছেলের মধ্যে নাসিম ছিলেন মেজো। বড় ছেলে ইফতেখার আহমেদ ওরিয়ন গ্রুপে চাকরি করেন। ছোট ছেলে নাবিল রাজধানীর একটি কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী। নিহত নাসিমের বাবা আহমেদ সাইফুদ্দিন বলেন, বিপিএলের খেলা নিয়ে ‘বাজি ধরায়’ বাধা দেয়ার কারণে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। রোববার রাতে বিপিএলের বাজি ধরাকে কেন্দ্র করে পাড়ার কিছু ছেলের সঙ্গে নাসিমের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে নাসিম রমজান নামের এক বখাটেকে থাপ্পড় মারে। পরে রমজানের চাচা রশীদ বাসায় বিচার নিয়ে এসে ঘটনাটি বলে। তারপর তারা নাসিমকে রাস্তায় সবার সামনে রমজানের পায়ে ধরে মাপ চাইতে বলে। না হলে ঘটনাটি আরো বড় হবে বলে তাদেরকে হুমকিও দেয়া হয়। তিনি বলেন, বিষয়টি পাড়ার মুরব্বিদের নিয়ে বসে মিটমাট করারও কথা ছিল। গতকাল সকাল পৌনে ৯টার দিকে আমি বাসা থেকে বের হয়ে অফিস যাওয়ার সময় নাসিমকে বাসা থেকে বের না হওয়ার জন্য বলে যাই। কিন্তু আমি বাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাসিম লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরে নাস্তা করার জন্য বাসা থেকে বের হয়। সেখানে বখাটেরা আগে থেকেই ওত পেতে ছিল। সে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ছুরি দিয়ে চারটি আঘাত করে তারা পালিয়ে যায়। এসময় তার চিৎকারে আশেপাশের বাসিন্দারা এগিয়ে যায়। ততক্ষণে বখাটেরা পালিয়ে যায় এবং নাসিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে সে মারা যায়। নাসিমের ভাই ইফতেখার আহমেদ বলেন, বিপিএল খেলাকে কেন্দ্র করে মহল্লার ছেলেরা জুয়া খেলে। রোববার রাতে মহল্লায় জুয়া খেলায় বাধা দেয়ায় রমজানের সঙ্গে নাসিমের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়েছিল। এর রেশ ধরেই স্থানীয় রমজান ও তার সঙ্গীরা গতকাল সকাল ১০টায় তার ভাইকে ছুরি মারে। তিনি আরো বলেন, নাসিম বিপিএলের জুয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাই বখাটেদের সঙ্গে তার সংঘর্ষ ঘটে। গতকাল বিকালে মহল্লায় ওই ঘটনার বিচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তারা আমার ভাইকে মেরে ফেললো। নিহতের প্রতিবেশী শারমিন আক্তার বলেন, নিহত নাসিম আমার ছেলের বন্ধু ছিল। এক সঙ্গেই তারা চলাফেরা করতো। কিন্তু তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা নাসিমকে মেরে ফেলবে ভাবতে পারছি না। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সে বিয়ে করেছে। ঘরে তার নতুন বউ। বিয়ের পরপরই এই ধরনের ঘটনা। লাইলী নামের আরেক প্রতিবেশী বলেন, নাসিম আমাকে নানী বলে ডাকতো। সব সময়ই সবার সঙ্গে মজা করে চলতো। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই শুনি নাসিমকে ছুরি মারা হয়েছে। তারপর থেকে আর ঘরে থাকতে পারি নাই। তাড়াহুড়ো করে চলে আসি ঢাকা মেডিকেলে। তিনি বলেন, তার মৃত্যুর খবরে তার মা একেবারে ভেঙে পড়েছেন। নাসিম মারা গেছে বিষয়টি তিনি কোনো ভাবে মেনে নিতে পারছেন না। নাসিমের বন্ধু মো. নজিব হোসেন বলেন, নাসিম আমাদের বন্ধুদের মধ্যে খুব ভালো ছিল। কিছুদিন আগে অন্তিম নামের একটি মেয়েকে সে বিয়ে করেছে। খুব ভালোই চলছিল। পাড়ার কিছু ছেলের সঙ্গে রোববার রাতে তার টুকটাক ঝামেলা বাধে। এতে তাদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রোববার রাতে বিপিএলের বাজি ধরা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়। নিহত নাসিম একজনের গালে থাপ্পড়ও মারে। পরে নাসিমের বাবাকেও তারা মারধর করে। বিষয়টি গতকাল মিটমাট করার কথা ছিল। তিনি বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা করা হয়নি।