আহসান্ হারুন এলিন, স্বদেশ নিউজ২৪.কম:
আগেই বলে রাখি প্রতিটা খরচের খুঁটিনাটি সম্পর্কে আমি জানিনা কারণ আমি এটা ডিল করিনি তবে টোটাল খরচ দেয়া আছে। একজন বললো, অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে অন্যরা উৎসাহিত হবে প্লাস ভ্রমণে সহযোগিতা হবে তাই লিখছি।
যানবাহনঃ
আমরা ঢাকা থেকে একদিন আগেই শান্তি পরিবহনে রাত সাড়ে ১০টার টিকেট কেটেছিলাম। শান্তি পরিবহনের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ ছিল। একে তো এটার তেমন কোন বড় কাউন্টার নেই। কমলাপুর টিটিপাড়া নামের জায়গায় মোটামুটি একটা বড় কাউন্টার আছে। আমাদেরকে ভীষণ বিপদজনক রুট দিয়ে নিয়ে যায়। রাস্তায় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি আর ভয়ংকর টার্ন ছিল। মাঝপথে কয়েকটা গাড়ির জট লাগার কারণে অনেকক্ষণ গাড়ি থেমেছিল যার কারণে পৌছতে পৌছতে সকাল ৭টা বেজে যায়।
ফেরার দিন সকালেই আমরা খাগড়াছড়ি থেকে শ্যামলী পরিবহনে রাত সাড়ে ৯টার ঢাকায় ব্যাক করার টিকেট বুকড করি। এই কোচে বহুত শান্তিতে ঘুমাইতে ঘুমাইতে ব্যাক করি। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম ছিল যার কারণে সকাল ৭টায় ঢাকায় পৌছাই।
যাওয়া-আসার দুটো গাড়িই কুমিল্লায় ব্রেক দেয়।
চাদের গাড়ি আগে থেকেই রিজার্ভ করা ছিল দু’দিনের জন্য কিন্তু আমরা পরে একদিন বাড়িয়ে তিনদিনের জন্য নেই। যাহোক এই গাড়ি আমাদের সাজেক নিয়ে যায় এবং ফেরার দিন কোচে ওঠা পর্যন্ত সার্ভিস দিয়েছিল। সাজেকে গিয়ে একটু ফাঁকিবাজি করেছিল ফলে দুইএকবার আমাদের হেঁটেই হেলিপ্যাডে যেতে হয়।
রিসোর্টঃ
আমরা ১১ জনের গ্রুপ গিয়েছিলাম। একদল ছিল মেঘপুঞ্জিতে, একদল মেঘমাচাংয়ে আর একদল জুমঘরে। আমরা ছিলাম জুমঘরে। ভিউ সুন্দর তবে মেঘমাচাংয়ে সব থেকে সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। সবগুলো রিসোর্টের রেন্ট একই। আমরা ৭ দিন আগে ঢাকা থেকে ফোন করে রিসোর্ট বুক করি। এডভান্সড ১০০০ টাকা দিতে হয়েছিল।
সাজেকে কারেন্ট সাপ্লাই নেই। সবকিছু সোলার বিদ্যুৎ এ চলে। তাই দিনে হয়তো একবার এবং সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত একবার পাওয়ার সাপ্লাই দেয়া হয়। কিন্তু জুমঘর রিসোর্টে আমাদের মাত্র একবার সন্ধ্যার পরে কারেন্ট দেয়া হয় যেখানে অন্যগুলোতে দুইবার করে দেয়া হয়েছিল। তবে রুমে আর টয়লেটে দুটো লাইট সার্বক্ষণিক জ্বলবে।
রুমে এক্সট্রা বেডিং আর বালিশ দেয়া থাকে অনেকজনের গ্রুপ গেলে যেন থাকা যায় সেভাবে। জুমঘরের একটা জানালায় পর্দা ছিল না যেটা খুবি বাজে লেগেছে আমার কাছে কারণ এক রুম থেকে আরেকরুম দেখা যাচ্ছিলো। পরে আমরা এক্সট্রা চাদর দিয়ে জানালা ঢেকে দেই। রুম আর টয়লেট মোটামুটি পরিষ্কার ছিল। বারান্দায় চেয়ার ছিল। এক্সট্রা বেডিং বিছিয়ে আড্ডাও দেয়া যায়। বেসিনসহ অন্যান্য পানির গতি খুবি স্লো তাই বালতি ভরে রাখাই উত্তম।
খাবারঃ
খাগড়াছড়িতে নেমে আমরা মন্টানা হোটেলে খাই। খাবার ভালো লাগেনি। এরচেয়ে সময় থাকলে সিস্টেম নামের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া ভালো। খাবার খুব ভালো আর দামো কম।
সাজেকে প্রথমদিন আমরা দুপুরের খাবার নিয়ে যাই। কারণ সাজেকে নিয়ম হচ্ছে আপনি অর্ডার দিবেন তারপর ওরা রান্না করবে। সন্ধ্যায় আমরা হেলিপ্যাড ১ এ যাই। পাশেই আর্মি পরিচালিত রুন্ময় রেস্টুরেন্ট। এখানে দাম কিছুটা বেশি হলেও খাবার খুবি ভালো আর অনেকে হালাল খাবার খোঁজে যার কারণে এখানে খাওয়া। আমরা সন্ধ্যায় বারবিকিউয়ের অর্ডার দিলে ওরা মুরগি জাবাই দেয়। ঘন্টাখানেক পর বারবিকিউ আর বসনিয়া রুটি নামের একটা মজার রুটি দিয়ে আমরা ডিনার করি। বারবিকিউটা বেশিই মজা ছিল। পরেরদিন সকাল আর দুপুরের খাবারগুলোও আমরা এখানেই খাই। রাতে ব্যাম্বো চিকেন আর পরটা খাই “ড্রিম সাজেক” নামের রেস্টুরেন্টে। এটাও মুসলিম রেস্টুরেন্ট ছিল। আগে থেকে অর্ডার দেয়া হয়েছিল।
খাবার পানি সাজেক যাওয়ার সময় আমরা খাগড়াছড়ি থেকে কিনে নেই যদিও রুন্ময়ে পানির দাম যা তাই রাখা হয়। এছাড়া অন্যান্য শুকনো খাবারো কিনে নেই।
ফেরার দিন সকালেও আমরা রুন্ময়ে খাই। দুপুরে খাগড়াছড়ি ফিরে আবার সিস্টেম রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। সাথে গ্লুকোজ আর ওরস্যালাইন নিয়ে যাবেন কারণ ডিহাইড্রেশন হয়।
খরচঃ মোটামুটি এই তিনটি খাতেই সব টাকা খরচ হয়। আমাদের পার পার্সন যাওয়া আসাসহ সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো লেগেছিল। আপনারা চাইলে আরো কম খরচে থাকতে খেতে পারেন সেক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে খারাপ অভিজ্ঞতাও হতে পারে। আর ব্যাকাপ হিসেবে এক্সট্রা টাকা নিয়ে যাওয়া ভালো।
স্পটঃ
সাজেক যাওয়ার পথে হাজাছড়া ঝর্ণায় নেমেছিলাম। পিচ্ছিল আর পাথুরে পথ। স্যান্ডেল খুলে যাবেন অথবা রবারের স্যান্ডেল পরে যাবেন। ঝিরিপথে জোঁক আছে। আমার পায়ে একটা ধরেছিল। সিগারেটের এশ দিয়ে এটাকে তাড়ানো হয়। এখানে রাস্তায় পাহাড়ি ফলের দোকান। অনেক টাইপের ফল খেতে পারবেন।
সাজেকে গিয়ে সেদিনি বিকেলে হেলিপ্যাড-১, ঝাড়ভোজ নামের পার্ক আছে যেতে পারেন এখান থেকে পাহাড়ের ভিউ খুব ভালো পাওয়া যায়। সূর্যাস্ত, সূর্যোদয় আর চাঁদ ওঠা দেখার জন্য পারফেক্ট একটা জায়গা। পরের দিন আমাদের গ্রুপের সবাই কংলাক পাড়ার উদ্দেশ্যে ট্রেকিং করে আর আরেকটা ঝর্ণা আছে, নাম মনে পরছেনা, সেখানে যায়। তাদের কাছে কংলাক পাহাড় ট্রেকিং কষ্টকর মনে হয়েছে তবে যেতে পারলে সুন্দর ভিউ দেখতে পারবেন আর নিচের ঝর্ণার পথটা ভীষণ বিপদজনক মনে হয়েছে, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। আমি যাইনি কারণ আমার এজমা আছে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যেতো তাই।
ফেরার দিন খাগড়াছড়িতে আলুটিলা গুহা, হেলিপ্যাড, ঝুলন্তব্রিজ দেখি। আলুটিলা গুহার জন্য টর্চলাইট নিবেন কারণ ওরা যে মশাল বিক্রি করে তাতে কোন আলোই হয়না জাস্ট একটা ব্যবসা তবে ছবিতে মশালের আলো ভালো আসে। গুহায় যেতে অনেকগুলো সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হয় আবার ফেরার সময় উঠতে হয়। গুহায় প্রবেশের রাস্তাটা ভীষন পিচ্ছিল ছিল। এসব স্পটে চাদের গাড়িই আপনাকে নিয়ে যাবে। এছাড়া আরো স্পট আছে আমরা সময় পাইনি যাওয়ার আর টায়ার্ডো ছিলাম বেশ।
যা যা নিবেনঃ
সাবান,ব্রাশ, পেস্ট, মাল্টিপ্লাগ, টাওয়াল, স্যালাইন, গ্লুকোজ, চপ্পল। ট্রেকিংয়ের সময় বা পরে গ্লুকোজ খাবেন, অন্য সময় স্যালাইন খাবেন। শীতের সময় গেলে শীতের কাপড়। প্রয়োজনীয় ঔষধ- নাপা, এলাট্রল, স্যাভলন, অমিডন, মুভ, ন্যাপকিন। ছাতা আর সানব্লক ক্রিম চাইলে নিতে পারেন, না নিলেও সমস্যা নাই। টর্চলাইট। সু নিলে ট্রেকিংয়ে সুবিধা হবে। ওখানে রিসোর্টে প্লেট গ্লাস কিছু নেই তাই গ্লাস চেয়ে নিবেন আর খাবার রুমে না আনাই বেটার। রবি সিম, পাওয়ার ব্যাংক। ???? আর সাজেকের সৌন্দর্যের বর্ণনা দিলাম না, এটা নিজের চোখে না দেখলে বুঝবেন না।
আশা করি তথ্যগুলো কাজে লাগবে।
ছবিটি জুমঘর ইকো রিসোর্টের।