রায়হান করির, স্বদেশ নিউজ২৪.কম: প্রায় দুই ডজন শর্তে অনুমতি পেয়ে আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ করছে বিএনপি। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ হচ্ছে। এতে সকাল থেকে হঠাৎ বন্ধ রয়েছে নানা ঢাকামুখী পরিবহন। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী সাধারণ মানুষ।রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন তারা অন্যদিনের মতো গাড়ি পাচ্ছেন না।
যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় থাকেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি গেলো দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কোনো বাসে উঠতে পারেননি। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের তামাশার কোনো মানে হয় না। হঠাৎ এই ভোগান্তির কি দরকার। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে।তিনি আরো বলেন, সকাল থেকে একটা বাসেও উঠতে পারছি না। এ রাস্তায় গুলিস্তানমুখী বাস সব সময় পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে শ্রাবণ, মেঘলা, তারাবো। কিন্তু আজ রাস্তায় এসে দেখলাম বাস বন্ধ। এখন বাসায় ফেরা ছাড়া আর উপায় নেই। আজ আর অফিস করা হবে না।ডাক নাম রুমকি। তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় কাজ করেন। তিনি সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে রায়েরবাগের বাস কাউন্টারে পৌঁছেন। এক ঘণ্টা পরও তিনি কোনো গাড়িতে উঠতে পারছিলেন না। অবশেষ বাড়ি থেকে বড় ভাইকে ডেকে আনেন।এই সুযোগে অবশ্য দান মারছেন সিএনজিওয়ালা। রুমকি জানান, বড় ভাই এক সিনজি অটো রিকশা ঠিক করে এনেছেন। সেই অটো রিকশা ৪০০ টাকা ভাড়া ঠিক হয়েছে। অথচ এইটুকু পথের দূরত্ব হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে মাত্র ৬/৭ কিলোমিটার। অন্যসময় সিএনজি ভাড়া নেয় ১০০-১৫০ টাকা। বাসে গেলে এতটুকু রাস্তা ১০ থেকে ১৫ টাকা লাগে। রুমকি ও মাহমুদের কথার প্রমাণ মেলে সকালের দিকে চিটাগাং রোড, সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া কাজলা বরাবর তাকালেই। গুলিস্তান-মতিঝিলমুখী প্রধান সড়ক বরাবর হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তারা সবাই গাড়ির অপেক্ষায়।দুই একটা বাস বা কোনো স্টাফ বাস আসলেই অনেকেই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। তাদের কেউ কেউ বাসে উঠতে পারলেও নারীরা পড়েছেন সবচেয়ে বড় বিপাকে। তারা পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওই বাসে উঠতে পারছেন না।প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের কর্মকর্তা রেহেনা পারভিন বলেন, আমার মতিঝিলে ১০টার মধ্যে একটি ট্রেনিংয়ে পৌঁছাতে হবে। না গেলে চাকরির সমস্যা হবে। শেষ পর্যন্ত সিএনজিওয়ালাকে চার-পাঁচগুণ বেশি টাকা দিতে রাজি হলাম। এছাড়া কিছু করার ছিল না।এই প্রতিবেদককে তিনি আরো বলেন, আমরা তো এক রকম যাচ্ছি। আমার মনে হয়, এই যান সংকটে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে জেএসসি পরীক্ষার্থীরা। তারা ঠিক সময়ে আজ পরীক্ষার হলে পৌঁছতে পারবে কি-না সন্দেহ আছে। পৌঁছালেও মনে হয় না ঠিকভাবে লিখতে পারবে না।তবে ফ্লাইওভারে অবশ্য রাস্তার চিত্র ফাঁকা পাওয়া যায়। কারণ, বাস খুবই কম। এসময় অনেককে আবার ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে দেখা যায়। এদিকে বড় টাকা পেয়ে সিএনজিওয়ালাদের মুখে হাসি। এক সিনজিওয়ালাকে তো রীতিমতো ফোনে বলতে দেখা যায়, (আরেক সিএনজিওয়ালা) আরে এখনো ঘুমচ্ছিস? দ্রুত রাস্তায় আয়। আজ রাস্তা ফাঁকা, গাড়ি একেবারেই নেই।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তানে যাত্রী আনা এক সিএনজির চালক বলছেন, ভাই অনেকদিন পর একটা সুযোগ পেলাম। আমাদের প্রায় বসে থাকতে হয়। কিন্তু আজ যাত্রীর চাপ রক্ষা করতে পারছি না। যাত্রীদের কাছে বেশি টাকা চাইলেও তারা দিতে চাচ্ছেন। তাই বেশি ভাড়া নিচ্ছি। তবে এ চাপ বা ভাড়া তো আর সারাদিন বা সারা মাস মিলবে না।‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ৭ নভেম্বরই এই সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু ঢাকায় সিপিএ সম্মেলনের কারণ দেখিয়ে তাদের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। এরপর ৬ নভেম্বর চিঠি দিয়ে ১২ নভেম্বর সমাবেশ করতে চাওয়ার কথা ঢাকা মহানগর পুলিশকে জানায় বিএনপি, যাতে কর্মসূচির এক দিন আগে সাড়া মেলে।শুধু চিটাগাং সড়ক নয়, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে প্রায় সব ধরনের সড়ক পরিবহন বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকেই শহরের মেট্রো হল ও চাষারা কাউন্টার থেকে এসি বাস শীতল পরিবহন কেবল ছেড়েছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। আর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল করলেও নির্ধারিত সময়ে কোনো ট্রেন না ছাড়ায় শিডিউল বিপর্যয় দেখা যায়।ট্রেনের যাত্রীরাও অভিযোগ করেছেন, সকাল থেকে প্রয়োজনীয় কাজে ঢাকা যাবার জন্য অপেক্ষা করলেও কোনো গণপরিবহন পাননি তারা। উপায় না পেয়ে ট্রেনে ঢাকা যাবার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু ট্রেনও অনেক দেরিতে ছাড়ছে।এক ট্রাফিক পুলিশ জানায়, দেখতে পাচ্ছি বাস চলছে না। তবে এর কারণ আমার জানা নেই। হয়তো কিছুক্ষণ পর থেকে চলতে পারে।তবে রাজধানীর ভিতরে অবশ্য রাস্তা অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়।এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, সকাল থেকেই সমাবেশে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ঢাকামুখী হবে এমন ভয়েই সরকার আগেই সব পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে সমাবেশে মানুষ কমানো যাবে না। বরং কর্মজীবী মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।