চট্টগ্রামে হাটহাজারী উপজেলায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট। আবার সেই মার্কেটে লাগানো হয়েছে মিটারবিহীন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই অপকর্ম করে আসলেও বিষয়টি যেন কারও নজরে পড়েনি। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, যিনি মার্কেট ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ নিয়ে জনগণের সম্পদ বিনাশ করছেন তিনি হচ্ছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির। তিনি প্রভাবশালী হেফাজত নেতাও। তাই ভয়ে এসব অপকর্মের দিকে তাকায় না কেউ।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ হাটহাজারীর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার এটিএম শামসুদ্দীন বলেন, সম্প্রতি বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এলাকায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায় সমিতির লোকজন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে মার্কেট থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মার্কেটে মেসার্স উলফাত ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, মেসার্স রাকিম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স নজরুল ট্রেডিং ও মেসার্স সিকদার ট্রেডার্সসহ আটটি দোকান রয়েছে। যেখানে অবৈধভাবে পাশের একটি মিটার থেকে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছিল। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ায় মার্কেটের মালিকের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে জরিমানা নির্ধারণ করা হবে। জরিমানা আদায় না হলে মামলা দায়েরের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, হাটহাজারী উপজেলার চারিয়া গ্রামের নয়াহাট এলাকায় প্রায় ১৫ বছর আগে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ এবং সওজ বিভাগের জমি দখল করে মার্কেট গড়ে তোলেন মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির ও তার বড় ভাই আকতার সিকদার ও চাচাতো ভাই জসিম সিকদার। ওই অবৈধ দোকানগুলোর অবস্থান থেকে ২০০ গজ দূরত্বে রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন। সেখান থেকে মিটার ছাড়া অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন তারা। মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনীর হেফাজতে ইসলামী, হাটহাজারী উপজেলা শাখার সাধারণ স¤পাদক। হেফাজতের সমর্থন নিয়ে তিনি হেফাজত অধ্যুষিত এ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ সুবাধে পল্লী বিদ্যুতের অসাধু লোকজনের সহায়তায় অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছিল তারা। এতে অন্তত ৫০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল ফাঁকি দেয়া হয়েছে। এখন তারা তদবির করছেন পুণরায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে।
সরকারি জমিতে মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, মার্কেটগুলো গড়ে তোলা হয়েছে অনেক আগে। এ ব্যাপারে কোন মামলা আছে কি না তা আমার জানা নেই। যাচাই করে দেখতে হবে, না থাকলে সরকারি জমিতে মার্কেট তোলায় দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। এ বিষয়ে জানার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে হাটহাজারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির বলেন, মার্কেট যারা গড়ে তোলেছেন তাদের একজন আমার বড় ভাই, আরেকজন চাচাতো ভাই। তাদের সাথে আপনি কথা বলুন। আমি একটা পদে থাকায়, কেউ কেউ আমাকে এসব বিষয়ে জড়িয়ে দিচ্ছে। হাটহাজারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুনিরের বড় ভাই আকতার সিকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, যে জায়গায় আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেসব জমি আমাদের। দোকানের পাশের জমিগুলোই হচ্ছে সরকারি। আমার ভাই একটা পদে আছে, তাই কোন কিছুই আমরা করতে পারি না। জমি দখলের যে বিষয়টি আসছে, সেটা একেবারে অবাস্তব ও অসত্য।
বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদ্যুতের সংযোগ পেতে দেরী হওয়ায় পাশের আরেকটি মিটার থেকে আমরা সংযোগ নিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন সংযোগ কেটে দিয়েছে। তবে মিটার পাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত পেয়ে যাবো।