হামিম রাফি , নিউজ ডেস্কঃ পাহাড়ে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলনের ১৯ বছরের মাথায় প্রকাশ্যে দ্বিধা বিভক্তি দেখা দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টে (ইউপিডিএফ)।
বুধবার সকালে খাগড়াছড়ির শহরতলীর খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা কমিটি গঠনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করল ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। এদিকে সংস্কারপন্থীদের প্রতিহত করতে কাল বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইউপিডিএফ।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রসীত বিকাশ খীসা ও সঞ্চয় চাকমার নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) গঠিত হয়। কিন্তু বর্তমানে ইউপিডিএফের আন্দোলন পরিচালনার কৌশল ও পদ্ধতি সঠিক না হওয়ার কারণে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সঞ্চয় ও দীপ্তি শঙ্করসহ অনেকে দল ত্যাগ করেছেন।
সম্মেলনে আরো বলা হয়, দল ত্যাগ করার অপরাধে অনেক নেতাকর্মীকে মেরে ফেলা হয়েছে। গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, বলপ্রয়োগের রাজনীতি, চাঁদাবাজি, গুম, খুন ও অপহরণের রাজনীতি, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রের জাতীয় দিবস বর্জনের রাজনীতি, এমনকি অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপে প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রতিরোধের চেষ্টার রাজনীতি করে যাচ্ছে ইউপিডিএফ প্রসীত খীসা গ্রুপ।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ইউপিডিএফ মুখে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের কথা বললেও এ পর্যন্ত ১০জনের অধিক দলীয় নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ইউপিডিএফের অনেক নেতা এখন পকেট ভারী নেতা হিসেবে পরিচিত। মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে নীতিহীন, আদর্শহীন, লক্ষ্যভ্রষ্ট, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।
এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীদের আর্থিকদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। ইউপিডিএফের বর্তমান নেতৃত্ব জুম্ম জনগণ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। এসব বাস্তবতায় সংবাদ সম্মেলন থেকে সচেতন জুম্ম জনগণের সমর্থনে সেই দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী নেতাদের খোলস থেকে রেড়িয়ে আসতে তপন কান্তি চাকমাকে আহ্বায়ক ও জলেয়া চাকমা তরুকে সদস্য সচিব করে নয় সদস্যের নতুন দল ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের ঘোষণা দেওয়া হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উজ্জ্বল কান্তি চাকমা, রিপন চাকমা, সত্য রঞ্জন চাকমা, আলোকময় চাকমা, মিটন চাকমা, পলু মারমা ও সোনামনি চাকমা।
এদিকে নবগঠিত ইউপিডিএফের কমিটিকে রাষ্ট্রীয় মদদে নব্য মুখোশ-বোরকা বাহিনী আখ্যায়িত করে অপর গ্রুপ মাদক-সন্ত্রাস দুর্বৃত্ত প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
মিছিলটি শহরের স্বনির্ভর এলাকা থেকে বের হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে আবার স্বনির্ভর বাজারে গিয়ে শেষ হয়। এতে বক্তব্য দেন ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জেলা কমিটির জেলা সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রেশমি মারমা, নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা প্রমুখ।
সমাবেশ থেকে নব্য মুখোশধারীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কাল বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ঐতিহাসিক অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রসীত খীসার অনুগামীরা ব্যানার উঁচিয়ে ‘নো রেস্ট, ফুল অটোনমি’ (বিশ্রাম নয়, পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন) লেখা ব্যানার উচিঁয়ে চুক্তির বিরোধীতা করেন।
পরে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হলরুমে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে শান্তিচুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে ঘোষণা দেয়। গঠন করা হয় নতুন রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত প্রসীত বিকাশ খীসা দলটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।