রায়হান করির, স্বদেশ নিউজ২৪.কম: লক্ষ্য ছিল ১৫৪ রান। ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মতো বিধ্বংসী জুটির কাছে তা মামুলিই বটে! আট বছর পর একসঙ্গে ব্যাট করতে নেমেছিলেন এই দু’জন। মাঠের দর্শকরাও আশায় ছিলেন চার-ছয়ের ফুলঝুরি দেখার। তা আর হল কই? কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে প্রথম ওভার থেকে নড়বড়ে ছিলেন রংপুর রাইডার্সের এই দুই ব্যাটসম্যান। দলে টি-টোয়েন্টির বড় দুই তারকা থাকার পরও রংপুর ম্যাচটা হেরেছে ১৪ রানে।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রানের সংগ্রহ পায় তামিম ইকবালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। জবাবে ২০ ওভার ব্যাট করেও সাত উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রানের বেশি করতে পারেনি মাশরাফি বিন মুর্তজার রংপুর রাইডার্স। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসরে এটা রংপুরের টানা তৃতীয় পরাজয়।
দীর্ঘ আট বছর পর একসঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেছিলেন ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। দু’জনের জুটিটা স্থায়ী হয়েছিল ২৬ বল পর্যন্ত। এই ২৬ বলে দু’জন মিলে স্কোরকার্ডে যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ৩১ রান। এর মধ্যেই কয়েকবার জীবন পান এই দুই তারকা ব্যাটসম্যান। ইনিংসের চতুর্থ বলে এলবিডব্লিউ’র জোরালো আবেদন উঠলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বেঁচে যান গেইল।
তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে ফিরে যেতে পারতেন ম্যাককালামও। মেহেদী হাসানের আর্ম বলে সুইপ করতে গিয়ে পরাস্ত হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। বলটি সোজা গিয়ে আঘাত হানে ম্যাককালামের প্যাডে, কুমিল্লার ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনের মুখেও আউট দেননি আম্পায়ার। পরের ওভারেরই প্রথম বলে উইকেটের পেছনে গেইলের ক্যাচ ছেড়ে দেন লিটন দাস।
শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন রশিদ খান। চতুর্থ ওভারের দিতীয় বলে এলবিউডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন ১৭ রান করা গেইলকে। এক বলের ব্যবধানে কুশল পেরেরাকে ফিরিয়ে দেন এই লেগ স্পিনার। রানের খাতা খোলার আগে আউট হন পেরেরা। পরের ওভারের প্রথম বলে রংপুরের শিবিরে আঘাত হানেন মেহেদী। লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করে ম্যাককালামকে ফেরান ডানহাতি এই স্পিনার। এক বলের ব্যবধানে শাহরিয়ার নাফিসকে ফেরান তরুণ এই স্পিনার। তিনিও আউট হন রানের খাতা খোলার আগে।
এরপর রংপুরের হাল ধরেন মোহাম্মদ মিথুন এবং রবি বোপারা। সিঙ্গেল-ডাবলসে জোর দিয়ে পঞ্চম উইকেটে গড়েন ৬৭ রানের জুটি। বড় হতে থাকা এই জুটি ভাঙেন আল-আমিন হোসেন। ব্যক্তিগত ৩১ রানে কভারে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মিথুন। এরপর ১১ বলে এক চার এবং এক ছয়ে ১৭ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে রান আউটের ফাঁদে পড়েন অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি! জেতাতে পারেননি দলকে।
ইনিংসে শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে হাসান আলীর বলে তার হাতে ক্যাচ দিয়েই ফিরে যান লঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। তিন বলের মোকাবেলায় মাত্র এক রান করতে পেরেছিলেন তিনি। ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রাখলেও জ্বলে উঠতে পারেননি রবি বোপারা। ৪৮ বলে পাঁচ চারে ৪৮ করে অপরাজিত থাকেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ২৩ রান যোগ করেন কুমিল্লার দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস। তামিমকে ২১ রানে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন রুবেল হোসেন। চতুর্থ ওভারে রুবেলের করা পঞ্চম বলে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের তালুবন্দী হন বাঁহাতি এই ওপেনার। ১১ রান করে মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন লিটন দাস। আট রানের ব্যবধানে জস বাটলারকেও ফেরান মাশরাফি।
চতুর্থ উইকেটে ৪৫ রানের জুটি গড়ে কুমিল্লাকে ম্যাচে ফেরান ইমরুল কায়েস ও মারলন স্যামুয়েলস। হাফ সেঞ্চুরি থেকে তিন রান দূরে থেকে ইমরুল বিদায় নিলে ভাঙে এই জুটি। আউট হওয়ার আগে ৩২ বলে চারটি চার এবং দুই ছয়ে ৪৭ রান আসে ইমরুলের ব্যাট থেকে। ৯ রান করে রান আউটের ফাঁদে পড়ে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন শোয়েব মালিক। স্যামুয়েলসের ব্যাট থেকে আসে ৪১ রান। শেষ দিকে ১১ বলে এক চার ও এক ছয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের করা ১৬ রানে ভর করে ১৫৩ রানের সংগ্রহ পায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।