মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী
ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন- রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, ইতিহাসবিকৃতিকারীরা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের ইউনেস্কোর স্বীকৃতি সরকারিভাবে উদযাপন উপলক্ষে গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উদযাপনের অংশ হিসেবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত আনন্দ র্যালি করেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকাল ৩টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সমাবেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ৭ই মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। এরপর বিকাল তিনটা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বাজানো হয়। সভামঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভামঞ্চের সামনের দর্শকসারিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
২২ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতেই ৭ই মার্চের দিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সেদিন এসেছিলাম, বক্তৃতা শুনেছিলাম, আন্দোলন তরঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল; তাও দেখেছিলাম। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের কথা বলেছিলেন, গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি জয়বাংলা বলে তার ভাষণ শেষ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশের জন্য সব ধরনের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন। বার বার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অর্ধেক সময়েই তিনি ছিলেন কারাগারে। আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন জেল গেটে গিয়ে দেখা করতাম। কলেজে যখন তখনও জেল গেটে গিয়ে সাক্ষাৎ করতাম। ইউনিভার্সিটিতে যখন পড়ি তখনো জেল গেটে গিয়ে দেখা করেছি। তিনি বলেন, ২৫শে মার্চ ইয়াহিয়া খান নিরস্ত্র বাঙালির ওপর তার বাহিনী লেলিয়ে দেয়। ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা ঘোষণা দেন আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। শেষ শত্রু এই মাটি থেকে বিতাড়িত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। বাংলাদেশের মানুষ অসহযোগ থেকে শুরু করে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৬ই ডিসেম্বর মিত্র শক্তির সহায়তায় ওই হানাদার বাহিনীর পতন ঘটে বাংলাদেশে। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেরই পশ্চিম পাশে মিত্র বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। স্বাধীনতা ঘোষণার পর জাতির পিতাকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপে পরে তাকে দেশে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।
জাতির পিতা দেশে ফিরে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই ভাষণ দেন। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে এই ভাষণে তিনি সেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আজকে আমরা আনন্দিত যে, এই ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলতে। তখন এক কোটি মানুষ শরণার্থী। তিন কোটি মানুষ গৃহহারা। লক্ষ লক্ষ শহীদ পরিবার। জাতির পিতা দেশের রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট যেমন গড়ে তুলেছেন তেমনি গৃহহারা মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছেন। শহীদ পরিবারের সাহায্যের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিটি আহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। সাড়ে তিন বছরেই বাংলাদেশ একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রযাত্রা শুরু হয়। যখনই অগ্রযাত্রা শুরু হয় তখনই নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। ১৫ই আগস্ট আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় আমরা দুই বোন প্রাণে বেঁচে যাই। এরপর থেকেই হত্যা, ক্যু’র রাজনীতি শুরু হয়।
তিনি বলেন, আমাদের কি দুর্ভাগ্য, যে আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা হয়েছিল, যে আদর্শ নিয়ে লাখো শহীদ জীবন দিয়েছিলেন, সেই আদর্শ ভূলুণ্ঠিত করে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, খুনিদের ক্ষমতায় বসানো হলো। ১৫ই আগস্টের পর জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল নিষিদ্ধ। এই ভাষণ রেডিও- টেলিভিশনে বাজাতে দেয়নি। সে ভাষণ বাজাতে গিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর এসেছে আঘাত। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ যারা নিষিদ্ধ করেছিল এখন সেই ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর তাদের অবস্থাটা কি? তারা কোথায় মুখ লুকাবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে স্বাধীন জাতি। যে বাংলাদেশকে একসময় মানুষ একেবারে একটা দরিদ্র দেশ হিসেবে করুণার চোখে দেখতো, আল্লাহর রহমতে ২১ বছর পর সরকারে এসে জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে আমরা কাজ করেছি। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকেই আন্তর্জাতিকভাবে বাঙালি জাতি মর্যাদা পেয়েছে। আজকে বিশ্বে আমরা উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে কেউ আমাদের করুণা করতে পারে না। আজকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এই ভাষণের মধ্য দিয়েই জাতির পিতা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ দিয়েছেন। বাংলাদেশ হবে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।