রাশেদাসহ আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীর ৬ খুনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মেট্টো) মো. মঈন উদ্দিন।
তিনি জানান, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রাশেদা বেগমকে (২৭) সোমবার বিকেলে কুমিল্লার মিয়াবাজারের একটি ভাড়া বাসা থেকে হুমায়ুন রশিদ (২৮)সহ গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাশেদা ও হুমায়ুন রশিদসহ ৬ জনে মিলে আইনজীবি ওমর ফারুক বাপ্পীকে খুন করার কথা স্বীকার করে।
তাদের দেওয়া তথ্যমতে, খুনের সাথে জড়িত আরো ৪ জনকে সন্ধ্যায় নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর নগরীর খুলশিতে পিবিআই কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে রাশেদাসহ ৬ খুনিকে উপস্থিত করেন। যারা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনজীবি ওমর ফারুক বাপ্পী খুনের বিবরণ দেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- বরগুনা জেলার তালতলী থানাধীন সোনাকাটা ইউনিয়নের লাউপাড়ার মনছুর আলী আকনের ছেলে আল আমীন (২৮), খাগড়াছড়ি জেলার শালবন এলাকার হাফিজুল ইসলামের ছেলে পারভেজ আলী (২৪), নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার ব্রহ্মপুর গ্রামের হাবিবুল্লাহর ছেলে আকবর হোসেন রুবেল (২৩), বরিশাল গৌরনদী থানার শরিকল ইউনিয়নের শাহজিরা গ্রামের সামসুল আলমের ছেলে জাকির হোসেন ওরফে মোল্লা জাকির (৩৫)। রাশেদা বেগম স্বীকারোক্তিতে বলেন, বাপ্পীকে তার খুনের পরিকল্পনা ছিল না। ভয় দেখিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাতে রাজী না হওয়ায় এবং ছেঁচামেচির কারণে সে খুন হয়েছে। রাশেদা স্বীকারোক্তিতে বলেন, ২০১৪ সালের শেষের দিকে আমি এবং আমার স্বামী দেলোয়ার ইয়াবাসহ ধরা পড়ে মাদক মামলায় জেলে যায়। এ সময় আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পী আমাকে জামিনে আনেন। আমার স্বামী জামিন পায়নি তখন। এরপর আমার শরীরের প্রতি বাপ্পীর নজর পড়ে। বিনা পয়সায় মামলা পরিচালনা ও আমার স্বামীকে জামিনে আনার প্রলোভন দিয়ে সে আমাকে ভোগ করে। একপর্যায়ে তার প্রতি আমি দূর্বল হয়ে পড়ি। চাপ দেওয়ায় ২ লাখ টাকা কাবিননামায় সে আমাকে বিয়ে করে। পরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে একত্রে বসবাস শুরু করি। কিন্তু ৬-৭ মাস পর সে আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে থাকে। কথায় কথায় দু‘পয়সার মেয়ে বলে গালি দেয়। শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া শুরু করে। তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এরপরও আমি তার সংসার করতে চাই, কিন্তু সে অস্বীকার করে। সম্প্রতি তার মা-বাবা বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা শুরু করে। ফলে আমি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠি। এ জন্য বাপ্পী বাধ্য হয়ে যেন আমার সাথে সংসার করে, সে জন্য স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নেওয়ার পরিকল্পনা করি। সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন বলেন, বাপ্পী গোপনে বিয়ে করে রাশেদাকে স্বীকৃতি দেননি। তিনি রাশেদার সঙ্গে সংসার করতে চান না। অন্যদিকে রাশেদা তাকে ছাড়তে চান না। আবার রাশেদার সঙ্গে তার বন্ধু হুমায়ুন রশিদের শারীরিক সম্পর্কও রয়েছে। এ নিয়ে বাপ্পী ও রাশেদা পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। বাপ্পী ভূয়া তালাকনামা আদালতে দাখিল করে জামিন নেন। এসব বিষয় থেকেই মূলত দ্বন্দ্ব এবং হত্যাকান্ড। গ্রেপ্তার ৬ জনকে আজ মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।