বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) পঞ্চম আসরে টানা তিন জয়ে শুরু করেছিল সিলেট সিক্সার্স। এ আসরে নবাগত দলটির এমন শুরুতে ভড়কে গিয়েছিল প্রায় সব দল। বিশেষ করে নাসির হোসেনের নেতৃত্বে তাদের প্রথম জয় সাকিব আল হাসানের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে। নিজেদের ভেন্যু সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে উড়তে থাকা দলটি চতুর্থ ম্যাচে হেরে যায়। এরপর ঢাকা পর্বের চার ম্যাচের তিনটিতে হার। একটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। এরপর চট্টগ্রাম পর্বে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে হারে ৪০ রানের বড় ব্যবধানে। ৯ ম্যাচে ৪ হার ৭ পয়েন্ট নিয়ে দলটির অবস্থান এখন তালিকার ৫ম স্থানে। তাদের হাতে বাকি মাত্র তিন ম্যাচ। চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের শেষ ও ১০ নম্বর ম্যাচে মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মুর্তজার শক্তিশালী রংপুরের বিপক্ষে। বিপিএলে শেষ চারে টিকে থাকার লড়াইয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজকের ম্যাচে সিলেটের জয়ের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা পর্বে তাদের শেষ দুই ম্যাচ ভাইকিংস ও শক্তিশালী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে। বলতে গেলে শেষ তিন ম্যাচে তাদের জিততেই হবে। এমন অবস্থায় দলের উপর চাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলের সেরা বোলার পেসার আবুল হাসান রাজু স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তারা কোনো চাপে নেই। এমনকি নয়া ফ্র্যাঞ্চাইজিও ক্রিকেটারদের উপর কোনো চাপ দিচ্ছে না। রাজু বলেন, ‘না, কোনো চাপ নিয়ে মাঠে নামছি না। এমনকি আমাদের দলের এমন চিন্তাও নেই যে বাকি ম্যাচ কয়টাতে জিততে হবে! আমাদের এক মাত্র উদ্দেশ্য হলো ভালো খেলা। মাঠে লড়াইয়ে ভালো খেলতে চাই। আমরা দারুণ শুরু করলেও জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারিনি। ভালো খেলার পাশাপাশি আমাদের কিছুটা ভাগ্যের সহযোগিতাও প্রয়োজন।’ ম্যাচটি শুরু হবে আজ দুপুর ১টায়।
বিপিএলের পঞ্চম আসর সিলেট সিক্সার্স শুরু করেছিল নিজেদের ভেন্যুতে। গেল আসরে চ্যাম্পিয়ন ঢাকাকেই নয় তারা হারিয়েছিল রানার্সআপ রাজশাহী কিংসকেও। দলে বড় কোনো নামিদামি ক্রিকেটার না থাকলেও দেশি-বিদেশি পারফরমারদের উপরই আস্থা ছিল তাদের। কিন্তু শুরুতে বড় স্বপ্ন দেখানো দলটি কেন এমন হারের বৃত্তে? এ নিয়ে আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা আসলে সিলেট থেকে বের হওয়ার পর নিজেদের সেরা খেলাটি খেলতে পারিনি। দলে কিছু ইনজুরি ছিল, বিদেশিরা পারফরম্যান্স করলেও দেশিরা তেমন কিছু করতে পারেনি। রংপুরের বিপক্ষে নাসির হোসেন ও সাব্বির রহমান দারুণ খেললেও সেই ম্যাচে আমাদের ভাগ্য সহযোগিতা করেনি। এছাড়াও বৃষ্টির কারণে আমরা একটি ম্যাচতো খেলতেই পারিনি। সব মিলিয়ে বলবো আমরা আমাদের সেরাটা যেমন সিলেটে খেলেছিলাম তেমনটা ধরে রাখতে পারিনি যে কারণে আমরা ম্যাচগুলো হেরে গেছি।’ মাত্র তিন ম্যাচ বাকি এ ম্যাচগুলোতে জিততে না পারলে শেষ চারে খেলার স্বপ্ন পূরণ হবে না। তাই দলটির নয়া ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পক্ষ থেকে কোনো চাপ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাজু বলেন, ‘ম্যানেজমেন্ট আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। এখন আমাদের চেষ্টা ভালো খেলা। শেষ চার নিয়ে ভাবছি না।’
অন্যদিকে আজ তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী রংপুর রাইডার্স। ৮ ম্যাচে দলটি ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তবে টানা তিন ম্যাচ হারের পর এই সিলেটকে মাত্র ৭ রানে হারিয়েই জয়ে ফিরেছিল রংপুর। ক্রিস গেইলের ঝড়ো ফিফটিতে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল সিলেটকে। নাসির হোসেনের অপরাজিত ৫০ ও সাব্বির রহমানের ৭০ রানে প্রায় জয় ছুঁয়েও ফেলেছিল। কিন্তু শেষ ওভারে ভাগ্য তাদের সহযোগিতা করেনি। শেষ পর্যন্ত হাতে ৬ উইকেট অবশিষ্ট থাকলে ইনিংস থামে ১৬২ রানে। রাজুর বিশ্বাস সেই ম্যাচ জিতে গেলে তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হতো না। আজ অবশ্য রংপুরের বিপক্ষে তাদের প্রতিশোধের ম্যাচও। গেইল ও ম্যাককালামদের আটকানোর জন্য দলের সেরা বোলার আবুল হাসান অবশ্য খুব একটা চিন্তিত নয়। প্রথম দেখাতে গেইলকে ৫০ রানে থামিয়ে ছিলেন এ পেসার। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯ উইকেট নিয়েছেন এ পেসার। তিনি বলেন, ‘গেইল বা ম্যাককালামকে নিয়ে ভাবছি না। আমার একটা চিন্তা নিজের যোগ্যতা মতো ভালো বল করা। তাহলেই যে কোনো উইকেট পাওয়া যাবে। আর টি-টোয়েন্টিতে ছোট বড় দল বলে কিছু নেই। এখানে যে কোনো কিছুই হতে পারে। তাই মনে বিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামবো যে জিততে পারবো যদি ভালো খেলতে পারি।’
ব্যাট হাতে থারাঙ্গা, ফ্লেচার, নাসির ও সাব্বির রহমান ছাড়াও আবুল হাসান নিজেও ব্যাটে আস্থা রাখছেন। এছাড়াও বোলিংয়ে প্লাঙ্কেট, নাসির ও নিজে ছাড়াও সদ্য যোগ দেয়া পাকিস্তানি অল রাউন্ডার সোহেল তানভিরকে নিয়েও বেশ আত্মবিশ্বাসী তিনি। তার মতে দলে কোনো সমস্যা নেই শুধু এক সঙ্গে জ্বলে উঠতে পারলে জয়ে ফেরা সময়ের ব্যাপার মাত্র।