হামিম রাফি , নিউজ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ২০০৯ সালে এটুআই প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে চালু হওয়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগে রূপ নিয়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ ব্যাপক সুফল পাচ্ছে।
৬১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা সার্বিকভাবে ইউডিসি সেবায় নিজেদের সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৩-১৫ সময়ে চার কোটি ৫০ লাখ সেবাগ্রহীতা ইউডিসি থেকে সরাসরি সেবা গ্রহণ করেছে। ‘নাগরিক সেবায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার : ভূমিকা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি গতকাল রবিবার টিআইবির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। এতে ইউডিসি থেকে সেবা পেতে সেবাগ্রহীতারা সন্তুষ্ট বলে জানানো হলেও ভূমি রেকর্ড রুমে আর্থিক অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, জমির পরচা তুলতে ৫৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে গড়ে ৭৩৭ টাকা করে ঘুষ দিতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, সিনিয়র প্রগ্রাম ম্যানেজার ওয়াহিদ আলম ও ডেপুটি প্রগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ নূরে আলম। সংবাদ সম্মেলনে স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে ইউডিসি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নসহ ১১ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জমির পরচা তুলতে আবেদনের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ের সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ৪৮.৩ শতাংশকেই ভূমি অফিসে চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়েছে। আর থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত বাবদ গড়ে ৪৪৯ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে এবং তিনবার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া ৫৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে গড়ে ৭৩৭ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জুলিয়েট রোজেটি জানান, গবেষণাটি জুন ২০১৬ থেকে আগস্ট ২০১৭ সময়ের মধ্যে পরিচালিত হয়। পরিমাণগত ও গুণগত এই মিশ্র পদ্ধতির গবেষণায় জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল তিন হাজার ৫৩টি খানা, ১০৫টি ইউডিসির উদ্যোক্তাসহ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সচিবের ওপর জরিপের মাধ্যমে পরিমাণগত তথ্য সংগৃহীত হয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, ইউএনও, এডিসি (জেনারেল), এসি (আইসিটি), ডিডিএলজি, প্রগ্রামার, স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা ও এটুআই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার এবং দলীয় আলোচনার মাধ্যমে গুণগত তথ্য সংগৃহীত হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাবে ইউডিসি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সেবা খাতে দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনাময় এই প্রতিষ্ঠান অদক্ষ উদ্যোক্তা, অচল যন্ত্রপাতি, বিদ্যুিবভ্রাট ও ইন্টারনেটের ধীরগতিসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না।
গবেষণায় দেখা যায়, জরিপকৃত ইউডিসিগুলোর ৯৮ শতাংশে সিম মডেম, ১৩ শতাংশে সরকারি অপটিক ফাইবার এবং ৫ শতাংশে বেসরকারি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অপর্যাপ্ততার কারণে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সেবা প্রদানে ইউডিসি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। ইউডিসির সেবা সম্পর্কে প্রচারণায়ও ঘাটতি লক্ষ করা যায়। জরিপে অন্তর্ভুক্ত ৭৯.৬ শতাংশ খানা ইউডিসির নাম জানলেও সব সেবা সম্পর্কে জানে না। ইউডিসিগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যন্ত্রপাতি অচল থাকায় দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একান্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ৩২ থেকে ৪২ শতাংশই অচল থাকে। তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের একাংশের মধ্যে ইউডিসির বিকাশ ও টেকসইকরণে অনুঘটকের ভূমিকা পালনে দায়িত্ববোধের ঘাটতি লক্ষণীয়। গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের সেবা সমন্বিতভাবে প্রদানের ব্যবস্থা প্রবর্তনে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন না হওয়াকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।