কতবার আপনার সঙ্গে এমন হয়েছে যে আপনি অ্যাপ দিয়ে গভীর রাতে ট্যাক্সি বা গাড়ি ডাকলেন, আর দেখতে পেলেন একজন বোরকা পরিহিত নারী চালক গাড়ি নিয়ে আপনাকে নিতে এসেছেন! এমনটিই ঘটছে ভারতে। এক সময়ের রক্ষণশীল ভারতের মুসলিম সমাজেও এমন ঘটনা এখন নিয়মিতভাবেই ঘটছে। নারী চালকরা এখন রাত-বিরাতে গাড়ি কিংবা ট্যাক্সি নিয়ে নেমে পড়ছেন বিভিন্ন নগরীর সুনসান নীরব রাস্তায়। গাড়ি চালিয়ে কামিয়ে নিচ্ছেন কিছু অর্থ। কেউ আবার ব্যাপারটিকে নিয়েছেন পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবেই। এমন একজন নারী গাড়িচালক যোগেশ্বরের রিজওয়ানা শেখ। তার ছোটবেলা কেটেছে লক্ষেèৗতে। বিয়ের পর থেকে তিনি তার ব্যবসায়ী স্বামীর সঙ্গে যোগেশ্বরে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে যখন আমি গাড়ি থামিয়ে লোকজনের কাছে পথনির্দেশনা জানতে চাই, তাদের অবস্থা হয় দেখার মতো। তারা যেন নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না যে, আমার মতো একজন বোরখায় ঢাকা নারী বসে আছে চালকের আসনে! উল্লেখ্য, রিজওয়ানা অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ওলো’ এর একজন চালক। যদিও ভারতে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি গাড়ি এবং ট্যাক্সি চালানো শুরু করেছেন বেশ কিছুদিন ধরে, তবে অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। বিশেষ করে, রক্ষণশীল সমাজের বেড়াজাল ভেদ করে রাত্রিকালীন নগর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছেন নারীরা। ট্যাক্সিগুলোতে জিপিএস পজিশনিং সিস্টেম থাকার কারণে নেই কোনো নিরাপত্তা হুমকিও। মুহূর্তেই জানা যাচ্ছে তাদের অবস্থান। ৮ মাস ধরে ট্যাক্সি চালানো রিজওয়ানার ৭ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, আট মাসে ট্যাক্সি চালাতে গিয়ে খুব কমই কোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। কখনো যদি কোনো যাত্রীর ব্যাপারে অস্বস্তি বোধ করি, তাহলে অমন যাত্রী আমি গাড়িতে তুলি না। রিজওয়ানা জানান, তিনি পূর্বে পেশায় বিউটিশিয়ান ছিলেন। তবে বর্তমানের গাড়ি চালানোর পেশাকে তিনি অধিক স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। এ স¤পর্কে তার স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার স্বামী এটাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। কারণ তিনি নিজেও বোঝেন, সংসার চালাতে আমার এই উপার্জনের ভূমিকা রয়েছে। যোগেশ্বরের ৪২ বছর বয়সী আরেক মুসলিম নারী মেহজাবিন। তিনিও রাতে ট্যাক্সি চালিয়ে আয় উপার্জন করেন। ৬ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত তিনি। তার স্বামী একজন বিপণন কর্মকর্তা। মেহজাবিন জানান, সংসারে দিনের কর্মকা- শেষে রাত ৮টায় আমি গাড়ি চালানো শুরু করি। সকাল পর্যন্ত গাড়ি চালাই। এ প্রসঙ্গে নিজের পরিবারের ভূমিকা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার পরিবার সবাই সবসময়ই আমাকে সমর্থন করে এসেছে।
ঠিক কি পরিমাণ নারী চালক গাড়ি চালানোর সঙ্গে যুক্ত আছেন, তার নির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে অ্যাপভিত্তিক গাড়ির সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবার এবং ওলো। তবে নারী চালকের সংখ্যা যে দিন দিন বাড়ছে, এই ব্যাপারে অবশ্য একমত পোষণ করেছে দুটি প্রতিষ্ঠানই। মেট্রো শহরগুলোতে প্রতি চার মাস অন্তর নারী চালকের সংখ্যা শতকরা ৪০ ভাগ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ‘ওলো’র একজন মুখপাত্র জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের অধীনে ট্যাক্সিক্যাব, অটো এবং মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন বিপুলসংখ্যক নারী। এ ধরনের অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবিধা স¤পর্কে জানাতে গিয়ে বিদ্যা সেলকে (২৫) নামক একজন নারী অটোচালক বলেন, এখানে কখন কাজ করবো সে সময়টা আমি নিজেই নির্ধারণ করতে পারি। যখন আমার সুযোগ হয়, তখনই কেবল আমি বুকিং নিই। এছাড়াও যত্রতত্র রাস্তাঘাটে গাড়ি পার্ক করে যাত্রী খুঁজতে হয় না আমাকে। এটা আমার জন্য অনেক বেশি সুবিধাজনক। গ্রাজুয়েশনের পর গাড়ি চালানো পেশায় ছয় মাস ধরে যুক্ত প্রাজাখতা সালুঙ্খে বলেন, অর্থনৈতিক সংস্থান ছাড়া যেকোনো উদ্যোগ নেয়া কঠিন। ট্যাক্সি চালানোর মাধ্যমে তিনিও পয়সা জমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।
অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাদাতা সংস্থাগুলো অবশ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে নানা ধরনের স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং ট্রেনিং কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখতে। এ প্রসঙ্গে উবারের একজন মুখপাত্র বলেন, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বাধা পেরিয়ে আমরা নারীর সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট।