একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৌলভীবাজারের পাঁচ আসামির মধ্যে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ে নেসার আলী ও উজের আহমেদ চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড এবং সামসুল হোসেন তরফদার, মোবারক মিয়া ও ইউনুস আহমেদকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউনুস ও উজের গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন। অন্য তিনজন পলাতক। এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ, আবুল কালাম ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আবদুস সুবহান তরফদার ও মুজাহিদুল ইসলাম। প্রসিকিউশন রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আসামিপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানিয়েছে।
প্রসিকিউশনের পাঁচটি অভিযোগ : ১. ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর রাজনগরের দানু মিয়াকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা। এ অভিযোগে আসামি সামসুল, মোবারক, নেসার, ইউনুস ও উজেরকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২. যামিনী মোহন দেবকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা। এ অভিযোগে নেসার ও ইউনুসকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৩. উত্তরবাগ গ্রামে রসরাজ ভট্টাচার্যসহ আরও কয়েকজনকে অপহরণ, আটক ও নির্যাতন। এ অভিযোগে নেসার ও উজেরকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউনুসকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ৪. নজাবত আলী ও আবদুল বাসেতকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যা। এ অভিযোগে পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৫. খোলাগ্রামে আক্রমণ ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক হিন্দু পরিবারের ১৪ জনকে হত্যা। সেখানে শশাঙ্ক ঘোষ ও সূর্যকুমারের নতুন ও পুরান বাড়িতে আক্রমণ করে একটি সম্প্রদায়কে নির্মূলের উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ড। এতে সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে প্রসিকিউশনের দাবি। এ অভিযোগে পাঁচ আসামির মধ্যে নেসার ও উজেরকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি তিনজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে মামলার বিচার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এর আগে ওই বছরের ২৬ মে আসামিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর এ মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্ত শেষে প্রসিকিউশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ওইদিনই মৌলভীবাজারের রাজনগরের গয়াসপুর গ্রাম থেকে ওজায়ের ও শহরের চৌমোহনা থেকে ইউনুসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের মধ্যে সামসুল হোসেন তরফদার একাত্তরে আলবদর বাহিনীর ও নেসার আলী রাজাকার বাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার ছিলেন। বাকি তিনজন রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
আনন্দিত এলাকাবাসী, দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি : মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, একাত্তরে গণহত্যার দায়ে মৌলভীবাজারের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শহীদ পরিবার ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।