দৃশ্যত নিজেকে নিঃসঙ্গ করে রেখেছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। তিনি দেশের ভিতরেও যথেষ্ট চলাফেরা করেন না। তিনি নিজেই নিজেকে এক ‘ক্লাসিক বাবলে’ বা অবাস্তব একটি অবস্থায় নিয়ে গিয়েছেন। তার দেশের সঙ্গে পশ্চিমা দেশ, মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর সম্পর্ক ভয়াবহ রকমভাবে বাজে। আর এ অবস্থা সৃষ্টি করেছেন অং সান সুচি নিজে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অব্যাহতভাবে দ্বিমত পোষণ করে চলেছেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে অং সান সুচি গঠিত ১০ সদস্যের বিশেষ কমিটি থেকে পদত্যাগ করে এ কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী বিল রিচার্ডসন। শুক্রবার নিউ মেক্সিকো থেকে তিনি টেলিফোনে সাক্ষাতকার দেন বার্তা সঙস্থা রয়টার্সকে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অং সান সুচির সঙ্গে তার বিরোধের পর এসব কথা বললেন বিল রিচার্ডসন। তবে তিনি মনে করেন, মিয়ানমারে পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি আশা করা যায় অং সান সুচির ওপর। সুচিকে দীর্ঘদিনের বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেন বিল রিচার্ডসন। তা সত্ত্বেও তিনি বলেন, মিয়ানমারের বেসামরিক নেতা স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি। এ অবস্থানে নিজেকে নিয়ে নিজের ভিতরেই তিনি নিজেকে আটকে (সিজ মেন্টালিটি) ফেলেছেন। বিল রিচার্ডসন আরো বলেন, অং সান সুচি যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করতেন তাহলে তা তার জন্য সহায়ক হতো। উল্লেখ্য, ১০ সদসের বিশেষ উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বুধবার পদত্যাগ করেন বিল রিচার্ডসন। তিনি এ সময় উত্তেজনাপূর্ণ রাখাইন রাজ্য সফর করছিলেন। সেখানকার পরিস্থিতি দেখে তিনি বলেন, এ উদ্যোগ শুধুই ‘হোয়াইট ওয়াশ’ ছাড়া কিছু নয়। এই যখন অবস্থা তখন বৃহস্পতিবার অং সান সুচির অফিস থেকে বলা হয়, বিল রিচার্ডসনকে পদত্যাগ করতে। এতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, বিল রিচার্ডসন তার নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তবে তার সঙ্গে অং সান সুচি সরকারের সৃষ্ট পরিস্থিতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে শুক্রবার অস্বীকার করা হয়েছে। গত ২৫ শে আগস্ট নৃশংসতা শুরুর পর রাখাইনের উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে কমপক্ষে ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন। এখানে তাদেরকে নিয়ে কঠিন এক পরীক্ষা দিচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের পাশে, রোহিঙ্গাদের পাশে। সামনেই বর্ষা মৌসুম। এ সময়কে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের কথা বলছে বিভিন্ন সংস্থা। বিল রিচার্ডসন বলেন, আমি মনে করি রাখাইন পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা যায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে। তাদেরকে একজনই ব্যক্তি পাল্টে দিতে পারেন। তিনি হলেন অং সান সুচি। তার তা করা উচিত। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অধীনে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন বিল রিচার্ডসন। তিনি উত্তর কোরিয়া ইস্যুতেও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন, সুচির ওই প্যানেল থেকে পদত্যাগের বিষয়টি তিনি ইয়াঙ্গুনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে আসার আগে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। নভেম্বরে মিয়ানমার সফর করেন রেক্স টিলারসন।