কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয় করনের দাবিতে আন্দোলন সারা দেশের মতো অখাউড়ায়ও অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি কমিউনিটি হেলথ কয়ার প্রোভাইডারদের আন্দোলন অব্যাহত থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকায় গ্রামাঞ্চলের লোকজনকে জেলা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
একটি সূত্র জানায়, কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচপিদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আখাউড়ায় ৩ দিনের অবস্থান কর্মসুচি শেষ হয় ২২ জানুয়ারি। এরপর ২৫ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করেন তারা। এতে পৌর শহরসহ উপজেলার ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
জানা যায়, মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়।
প্রতিটি ক্লিনিকে ১জন স্বাস্থ্য সহকারি, ১জন পরিবার পরিকল্পনা সহকারি ও ১জন প্রোভাইডার নিয়োগ দেয়া হয়। ক্লিনিকগুলো স্থাপনের পর তারা সর্দি, কাশি, জ্বর, পেটব্যাথা, আমাশয়, টিকাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসেবা দেয় হয়। পাশাপাশি দেয়া হয় ওষুধপত্রও। কিন্তু হঠাৎ করে গত ২৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা আন্দোলন শুরু করায় চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। ওইসব কেন্দ্রে আসা শতশত রোগীরা পড়ছেন বিপাকে।
উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের আলেয়া বেগম বলেন, তিনদিন ধরে আমার মেয়ে জ্বরে ছটফট করছে। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে দেখাতে হয়।
মনিয়ন্দের তুলাইশিমুল গ্রামের শামছুন্নাহার বেগম বলেন, ছেলে জ্বর ও ঠান্ডায় ভোগায় ক্লিনিকে এসে দেখি বন্ধ। এভাবে দু’দিন চলে যাওয়ায় ছেলের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসি। চিকিৎসক বলেন নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
একই গ্রামের হোসেন মিয়া জানান, কয়েকদিন ধরে পেট ব্যাথায় ভুগছেন। কিন্তু টাকা-পয়সা না থাকায় চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না।
পৌর শহরের দেবগ্রামের মো. বাবরু মিয়া বলেন, প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী আসছেন এই কেন্দ্রে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় চিকিৎসা সেবা পেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন সবাই।
সিএইচসিপি জুনুন আক্তার বলেন, এই চাকরি স্থায়ী হওয়ার আশায় অন্য চেষ্টা করিনি। চাকরি জাতীয়করণ না হওয়ায় আমরা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের অধিকাংশেরই সরকারি চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে।
উপজেলা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এসাসিয়েশনের সভাপতি এনএস আবির বলেন, আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছি। চাকরিতে যোগদানের পর থেকে সব সুবিধাবঞ্চিত হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউর রহমান বলেন, আন্দোলনের ফলে তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। রোগীদের ভোগান্তি লাঘবে বিকল্প ব্যবস্থায় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।