বগুড়ার শিবগঞ্জের উৎপাদিত আলু খুবই সুস্বাদু ও মানসম্মত। এ কারণেই এখানকার আলুর চাহিদা দেশের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি রয়েছে বিদেশে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার এই উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।আলুর গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণে অনেক রপ্তানিকারকদের নজর শিবগঞ্জের আলুর দিকে। এজন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারো বিপুল পরিমাণ আলু বিদেশ যাচ্ছে।
তবে কৃষকদের অভিযোগ মধ্যসত্বভোগীদের সিন্ডিকেটের কারণে তারা আলুর ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা এজাজ কামাল আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এ বছর উপজেলার ১৮ হাজার পাঁচশ হেক্টর জমিতে চার লক্ষাধিক টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে।স্থানীয় একাধিক এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরইমধ্যে দুই দফায় মালয়েশিয়ায় ২০০ টন আলু রপ্তানি করা হয়েছে। আরও ৩০০ টন আলুর চাহিদাপত্র (অর্ডার) রয়েছে।
মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ১৭ টি দেশে সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে এই উপজেলা থেকে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টন আলু রপ্তানি করার সম্ভাবনা রয়েছে।দেশি-বিদেশি রপ্তানিকারকদের এজেন্ট বা প্রতিনিধিরা বাজারে বাজারে গিয়ে আলু সংগ্রহ করছেন। এরপর বিশেষভাবে প্যাকিং করে সেগুলো বিদেশে পাঠাচ্ছেন তারা। প্রতি পাঁচ কেজির ছোট প্যাকেট এবং ১০ কেজির কার্টনে এসব আলু পাঠানো হচ্ছে।বগুড়ার মহাস্থানগড়, শিবগঞ্জ, কিচক, বুড়িগঞ্জ ও পিরবসহ বড় বড় বাজারে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে রপ্তানিকারকরা আলু কিনে চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে করে মালয়েশিয়ায় পাঠাচ্ছেন।
ব্রাদ্রার্স ইন্টারন্যাশনাল, আল-মদিনা ট্রেড্রার্স, মদিনা ট্রেডিং, ঢাকার বিডি ফুডস লিমিটেড ও শাহ আকতার ইন্টারন্যাশনাল নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ আলু রপ্তানি করা হচ্ছে।এদিকে আলুর বাম্পার ফলন ও দেশ-বিদেশে শিবগঞ্জের আলুর ব্যাপক চাহিদা স্বত্বেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক।সরজমিনে ঐতিহ্যবাহী কিচক বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, লাল পাকড়ি মণ প্রতি ৩০০/৩২০ টাকা, স্টিক ২৮০/৩০০ টাকা, গ্র্যানোলা মণ প্রতি ২৬০/২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকেরা খরচের টাকাও অনেক সময় তুলতে পারছে না।
প্রত্যেকবার লাভের আশায় আলু চাষ করলেও বাজার ব্যবস্থায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিন্ডিকেট চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে আলু চাষিরা। এসব বাজার নিয়ন্ত্রণকারী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা বীজ, পানি, সার ও কীটনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ চড়া দামে বিক্রি করে কৃষকদের কাছ থেকে মুনাফা লুটে নিচ্ছে। ফলে কৃষকরা যেমন একদিকে তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না, তেমনি নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবার কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে কয়েকগুণ লাভ তুলে নিচ্ছে তারা।ফড়িয়া, মহাজন, আড়তদার, মজুতদার, ব্যবসায়ী ও ঋণ ব্যবসায়ী মিলে শক্তিশালী চক্রটি সবকিছু লুটেপুটে খাচ্ছে। আর এসব কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আলু চাষিরা।
কিচক এলাকার কৃষক আব্দুল আলিম স্বদেশ নিউজ ২৪.কমকে বলেন, এবার আট বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। বীজ, পানি, সার, কীটনাশকসহ বিভিন্ন খরচ করে যে দাম পাচ্ছি তাতে আসল টাকা তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশ-বিদেশে এখানকার আলুর চাহিদা থাকা স্বত্বেও আমরা দাম পাচ্ছি না।কিচক বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আশেকুল ইসলাম, সাজু মিয়া ও মহসিন আলী স্বদেশ নিউজ ২৪.কমকে জানান, কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনে তারা বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এতে তাদের কিছু লাভ হয়।
তবে তাদের দাবি, বড় ব্যবসায়ীরা চড়া দামে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশে এসব আলু পাঠায়।শিবগঞ্জের আলু ব্যবসায়ী মছির উদ্দিন স্বদেশ নিউজ ২৪.কমকে জানান, ঢাকার একটি এজেন্সির মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১০০টন আলু তিনি মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছেন। আরও চাহিদাপত্র (অর্ডার) আছে। এতে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন।বিভিন্ন বাজার ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে। এতে তারা আলু চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। তাই আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি নজরদারী ও হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে দাবি তাদের।