আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স- শব্দটা কম বেশি আমাদের সবারই জানা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বিষয়টা নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু মেশিনকে মানুষের বুদ্ধিমত্তা দেয়া এ নিয়ে গবেষণা কিংবা এই ধারণা নিয়ে কাজ চলে আসছে সেই ১৯৪০ সাল থেকে। আশ্চর্যজনক হলেও এইটা সত্য যে কম্পিউটার আবিষ্কারের আগেই মেশিনকে কিভাবে মানুষের মত বুদ্ধিমত্তা দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আর কম্পিউটারের আবিষ্কারের পর মেশিনে মানুষের বুদ্ধি আর চিন্তা শক্তি দেয়া- এই ক্ষেত্রে গবেষণার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেমস ক্যামেরনের ‘টার্মিনেটর’ কিংবা স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘এ আই’ – বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ভিত্তিক এই চলচ্চিত্রগুলোতে দেখানো হয়েছে কিভাবে মানুষের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মেশিন ভাল বা খারাপ ভাবে সারা দুনিয়া জয় করবে। ইংরেজ গণিতজ্ঞ এলান টিউরিং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সাইফার কোড ভাঙ্গার জন্য যে মেশিন বানান তার থেকেই মেশিন লার্নিং বা মেশিনকে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দেয়ার ব্যপারটা যে সম্ভব; তার শুরু।
সম্প্রতি, গুগলের এআই ইউনিট মেশিন লার্নিং এর সাহায্যে একটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট তৈরি করেছে যেটি তার নিজস্ব আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স চাইল্ড বানাতে পারে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট তার এআই চাইল্ড বা শিশুকে এমনভাবে জিনিস শিখাতে পারে যা মানুষের তৈরি কোড থেকে নিখুঁত। এআই শিশুটি রিয়েল টাইম ভিডিও থেকে মানুষ, গাড়ি সহ অন্যান্য জিনিস নির্ণয় করতে পারে।
‘নাসনেট’ নামের এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন শিশুকে ‘অটো এমএল’ নামের একটা নিউরাল নেটওয়ার্ক এর সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ‘অটো এমএল’ টি আসলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স প্যারেন্ট। মানুষের জন্মের পর যেমন প্যারেন্ট বা পিতামাতা একটি শিশুকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন শিক্ষা দিয়ে বড় করে তোলে এবং জ্ঞানের পরিধি প্রসার করে, গুগল ব্রেইন দ্বারা নির্মিত এই ‘নাসানেট’ আর ‘অটো এমএল’ ও অনেকটা সে ভাবেই কাজ করে। এখন পর্যন্ত জানা গেছে যে নাসা নেট বা এআই চাইল্ড ইউনিটটা ৮২.৭% পর্যন্ত সঠিকভাবে কাজ করে।
এলন মাস্ক, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরস আর মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়ে তার খোলাখুলি মতামত পোষণ করেন তার এক টুইট এর মাধ্যমে। তিনি মনে করেন যে অতিরিক্ত খাদ্য বা ওষুধ গ্রহণ যেমন আমাদের জন্য খারাপ, সেগুলো যেমন নির্দিষ্ট নীতিমালা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেরকম আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণাও নিয়ন্ত্রিত ভাবে করা উচিত।
বিভিন্ন দেশের সরকার আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স যেন অন্য বিপজ্জনক উদ্দেশ্যে যেমন, স্বচালিত অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার না করা হয় তা নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা তৈরির উপর কাজ করে যাচ্ছে। মেশিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যাতে মানুষের অস্তিত্বকে বিপদের মুখে না ফেলে তা নিয়ে খেয়াল রাখা উচিত সরকার এবং গবেষকদের। আমাজন, ফেইসবুক, অ্যাপেল সহ বিশ্বের বড় বড় টেক কোম্পানিগুলো এ আই বিষয়ক বিধিমালা নিয়ে বেশ সচেতন।
এই নাসা নেট এর দ্বারা অনেক উচ্চমানের রোবট বানানো সম্ভব যা মানুষের ভবিষ্যতকে সহজ করে তুলবে। ইমেজ প্রসেসিং আর অবজেক্ট ডিটেকশন বা নির্ণয় ক্ষেত্রে নাসা নেট অনেক বড় অবদান রাখবে বলে মনে করছেন গুগলের এ আই বিষয়ক গবেষকগণ।
এলান টিউরিং থেকে এলান মাস্ক- সবাই মেশিনকে মানুষের বুদ্ধিমত্তা আর চিন্তাশক্তি দিতে চেয়েছেন মানুষের জীবনকে সহজ করার জন্য। কিন্তু কি হবে যদি মেশিনের বুদ্ধিমত্তা মানুষকে ছাড়িয়ে যায়, কি হবে যদি যুদ্ধ বিগ্রহে ব্যবহার করা হয় এআই? আন্তর্জাতিক ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিউশনের রোবট বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স তৈরির একটা নীতিমালা রয়েছে এবং আশা করা যা যে আগামী দিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়ে গবেষণাগুলো এইসব দিক বিবেচনা করে সম্পাদিত হবে।