ক্লাব ফুটবলে দুর্দান্ত সময় পার করছেন দু’জনই। জাতীয় দলের হয়েও এবার সেটা প্রমাণের সুযোগ ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও মোহাম্মদ সালাহর সামনে। নাটকীয়তা আর উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচটা হারতেই বসেছিল পর্তুগাল। কিন্তু তাদের যে একজন রোনালদো আছেন, সে কথা ভুলে গেলে কি চলবে? ডুবতে বসা দলকে টেনে তুললেন এই রিয়াল তারকা। যোগ হওয়া সময়ে গোল করে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রোনালদোর পর্তুগাল। আর সালাহকে পিছনে ফেলে জিতলেন রোনালদোই। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে প্রথম থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকেন রোনালদো। প্রথম দিকে কিছুটা ছন্নছাড়া ফুটবল খেললেও ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নিতে থাকে পর্তুগাল। ম্যাচের ৮ মিনিটের মাথায় মিসরের আল সাইদের নেয়া শট গোলরক্ষক বেতো আটকে না দিলে ফলাফল অন্য কিছু হতে পারত। এরপর আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে খেলা চলে।
২৬ মিনিটে রোনালদোর দুর্দান্ত শট গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন মিশরের গোলকিপার। ম্যাচের ওই সময় পর্যন্ত ভালো সুযোগ পেয়েছিল পর্তুগাল। বল দখলেও তারা এগিয়ে ছিল। কিন্তু যে গোলের জন্য এত লড়াই, সেটার দেখা না মিললে কী আর খেলা ‘জমে’? ৩৫ মিনিটে সুবিধাজনক জায়গায় ফ্রি কিক পায় পর্তুগাল। এমন জায়গা থেকে অহরহ গোল করেছেন রোনালদো। এই তথ্য মনে পড়াতে খানিকটা আশায় বুক বেঁধেছিল কি না জানা যায়নি। তবে পর্তুগিজ খেলোয়াড়দের হতাশায় ডোবান রোনালদোর সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ানো মিসরের রক্ষণভাগ। এরপর কোনো দলই গোলমুখ খুলতে পারছিল না।
৪২ মিনিটে রোনালদোর গোলে উল্লাসে মেতে ওঠে পর্তুগিজ ভক্তরা। তবে সেই ক্ষণ ধরা দিয়েও দিল না। রোনালদোর গোল অফসাইডের ফাঁদে পড়ে বাতিল হলে দর্শক-সমর্থকদের আনন্দ বাতাস বেরিয়ে যাওয়া বেলুনের মতো চুপসে যায়। এরপর গোল ছাড়াই প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয়। নিজেদের শেষ ১৫ ম্যাচের মাত্র ২টি গোল করতে ব্যর্থ হয় মিশর। অন্যদিকে পর্তুগাল ১৯ ম্যাচের মধ্যে দুটিতে। তাই বোঝাই যাচ্ছিল গোলের খেলা হতে যাচ্ছে ম্যাচটি। বিরতি থেকে ফিরে স্রোতের বিপরীতে গোল করে বসে মিশর। ৫৬ মিনিটে আবদাল্লা আল সাইদের ক্রসে গোল করে দলকে এগিয়ে ‘মিশরের মেসি খ্যাত’ মোহাম্মদ সালাহ। গোল খেয়ে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে পর্তুগাল। তবে কী করে ফিরে আসতে হয়, কী করে গোল করতে হয়, এটা রোনালদোর চেয়ে ভালো কজন জানেন। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়।
অতিরিক্ত সময়ের ৫ মিনিটই কাল হয়ে দাঁড়ায় মিশরের সামনে। ৯২ মিনিতে কোয়ারেসমার ক্রসে অসাধারণ হেডে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান রোনালদো। ম্যাচের ৯৪ মিনিটে ম্যাচের আর বাকি রইল কতক্ষণ! রেফারি যখন সেকেন্ডের কাঁটা গুনে সেটা দখছেন; দর্শকেরা যখন উঠি উঠি করছেন, তখনই চমক দেখালেন রোনালদো। এবারও কোয়ারসেমির অসাধারণ প্লেসমেন্টে ফ্রি কিক রোনালদোর হেড (২-১)। গোল…বলে যখন পর্তুগিজরা উল্লাসে মাতেন, তখন বাধা দেন রেফারি। রোনালদো অনসাইডে ছিলেন কি না, সেটা পরিষ্কার নয়? সাহায্য নিতে হলো ভিএআর পদ্ধতির। সেই পরীক্ষায় উতরে গেলেন রোনালদো, উতরে গেল পর্তুগাল। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা এর চেয়ে ‘নাটকীয় ভালো’আর হয় না।পর্তুগালের হয়ে ৮১ গোলে করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে শীর্ষ গোলদাতাদের তালিকায় ৩ নাম্বারে উঠে আসলেন বর্ষসেরা এই ফুটবলার।