রাশিয়ান সাবেক গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল তার দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটেনকে গোপনে তথ্য দিতেন। এমন বিশ্বাসঘাতকদের হত্যার ব্যাপারে এর আগে খোলাখুলি ইঙ্গিত দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে পাওয়া গিয়েছিল ব্রিটেনের নিরিবিলি স্যালিসবারি শহরের একটি পার্কের বেঞ্চে।
ব্রিটেনের মাটিতে সামরিক মানের নার্ভ গ্যাস ব্যবহার করে রাশিয়ার এই সাবেক গুপ্তচর হত্যা চেষ্টার পর এখন যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি সোভিয়েত আমলের ঠা-া যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
ব্রিটেনের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ মোট বিশটি দেশ একশ`র বেশি রাশিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।
আর সেটি হলো গুপ্তচর হত্যায় `রাশিয়ার হাত থাকার সম্ভাবনাই বেশি`, যেমনটি বলেছেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এরই মধ্যে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের জন্য পুরো বিষয়টিকে কূটনৈতিক বিজয় বলে ধরা হচ্ছে।
ব্রিটেন এতটা সমর্থন জোগাড় করে ফেলবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত সেটি কল্পনাও করেননি।
রাশিয়া সম্ভবত ব্রেক্সিট নিয়ে ব্যস্ত ব্রিটেনকে ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়া একটি দেশ মনে করেছিল আর ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ভেবেছিল কিছুটা অন্যদিকে মনোযোগী। আর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনকে ভারসাম্যহীন ভাবাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আবার অন্যদিকে মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার সম্ভাব্য আঁতাতের অভিযোগ নিয়ে সেখানে যা হচ্ছে তাতে ট্রাম্প প্রশাসন এ ব্যাপারে জড়িত নাও হতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ৪৮ জন রাশিয়ান কূটনীতিক বহিষ্কার আর সিয়াটলে রাশিয়ান কনসুলেট জেনারেলের কার্যালয় বন্ধ করে দিয়ে সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করল।
যুক্তরাষ্ট্র আলাদা করে জাতিসংঘের ১২ জন রাশিয়ান কূটনীতিককেও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে সে দেশের মাটি থেকে বিতাড়ন করেছে।
অথচ মাত্র কদিন আগেও ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনের সাথে এক সাক্ষাতের বিষয়ে কথা বলছিলেন। সেটির কী হবে এখন সেই প্রশ্নও উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক সিআইএ প্রধান মাইক পম্পেও পররাষ্ট্র দফতরের দায়িত্ব নিয়েছেন আর জন বল্টন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের পররাষ্ট্রনীতিও পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
সব মিলিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন কি তার হিসাবে কিছুটা ভুল করেছেন? যার ফলে কূটনৈতিক দিকে থেকে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে রাশিয়া।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটি আরো কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে বলেও মনে করা হচ্ছে। সোভিয়েত যুগের সেই শক্তিও রাশিয়ার নেই। সেই সাথে দেশটির অর্থনীতিও পড়ন্ত অবস্থায় রয়েছে।
কিন্তু তবুও অন্য দেশের মাটিতে গোলমাল পাকানোর এক অদ্ভুত সামর্থ্য রাশিয়ার রয়েছে।
আর সেজন্য তার নতুন অস্ত্র হল হ্যাকিং, তথ্য যুদ্ধ ও উগ্রবাদী রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসীদের ব্যবহার।