যে কোটা নিয়ে এত কিছু সে কোটা পদ্ধতির পুরোটায় বাতিল করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কোটা পদ্ধতি বাতিল, পরিষ্কার কথা। বারবার আন্দোলনের নামে জনগণের ভোগান্তি এড়াতে সংস্কারের চেয়ে এটা বাতিল হলেই ভালো।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার (১১ এপ্রিল) বিকাল ৫টায় অধিবেশন শুরু হয়। কোটাসংস্কার নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে বলল- আমরা তিন দিন ঘুমাতে পারছি না। লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এমনকি রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়ায় রোগীরা হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে পারছে না।’
তিনি বলেন, জেলায় জেলায় যে কোটা রয়েছে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে গেছে। আমি বলে দিয়েছি- কোনো কোটাই থাকবে না। বিসিএসএসে যেভাবে পরীক্ষা হয়, মেধার ভিত্তিতেই সব নিয়োগ দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েরাও রাস্তায় নেমে গেছে, কোটা চায় না। তাহলে কোটা পদ্ধতি থাকার কী দরকার? প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করব। আন্দোলন অনেক হয়েছে, এবার ক্লাসে ফিরে গিয়ে পড়াশোনা করলেই হয়।’
এসময় কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি শুনে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাস দেয়ার পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্দোলন যথেষ্ট করেছে, এবার তারা বাড়ি ফিরে যাক।’
আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে এতে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা ভাঙচুর লুটপাটে জড়িত, তাদের বিচার হতে হবে। লুটের মাল কোথায় আছে, তা ছাত্রদেরই বের করে দিতে হবে।’
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুঃখ লাগে- কোটা চাই না, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ক্লাস বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বসে আছে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রোগীরা পর্যন্ত হাসপাতালে যেতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা দাবি করেছে। আমরাতো বসে নেই। আমরা সোমবার কেবিনেট বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা করেছি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে বিষয়টি দেখতে বলা হলো। কেবিনেট সেক্রেটারিকে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার জন্য আমি বলেছি, তিনি বিষয়টি ব্রিফিংয়ে বলেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েরা যেভাবে গভীর রাতে হল থেকে বের হয়ে আসল। আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি। (জাহাঙ্গীর কবির) নানককে সেখানে পাঠিয়েছি। তাদেরকে বলা হলো এটা করো না। কিন্তু সারাদেশে তারা বের হয়ে পড়ল।’
এর আগে সকাল ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কোটা সংস্কার বিষয়ে কথা বলতে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। পরে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব আছে। সেখানে এই কোটা প্রসঙ্গ চলে আসতে পারে। সেখানে দেখুন প্রধানমন্ত্রী কী বলেন।’
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আন্দোলন ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।
লিখিত প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগে থেকে অবস্থান করারা অপরাধকর্মে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মধ্যে হত্যা, মারামারি, ছুরিকাঘাত, বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা এবং পিস্তল দিয়ে পরস্পরকে গুলি করার মতো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত আছে। রোহিঙ্গাদের যে কেউ অস্ত্র বা অন্য কোনো ধরনের অপরাধে জড়িত হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১১টি অস্ত্র মামলায় ২৯ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়া হত্যা, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধে জড়িতদের গ্রেফতার এবং মামলা রুজু করা হয়েছে। বর্তমানে অবস্থা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজিবি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে, মিয়ানমার হতে আগত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যাতে কোনো ধরনের অস্ত্র সঙ্গে করে নিয়ে আসতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় তল্লাশি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী কর্তৃক অবৈধ অস্ত্রসহ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নাফ নদীতে মিয়ানমার হতে আগত বোটসমূহে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তল্লাশিকালে সেন্টমান্টিনের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল হতে তিনটি সামুরাই তরবারি এবং একটি ট্রলারসহ ছয় মিয়ানমার নাগরিককে আটক করা হয়।