জীবনানন্দ দাশের সেই কবিতা এখনও ভাস্বর। তার কথায়, ‘অতীত নিশি গেছে চলে/ চিরবিদায় বার্তা বলে, কোন আঁধারের গভীর তলে/ রেখে স্মৃতিলেখা,/ এসো এসো এসো ওগো নবীন,/ চলে গেছে জীর্ণ মলিন-/ তুমি মৃত্যুবিহীন/ মুক্ত সীমারেখা।’
শুক্রবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে কালের মহাস্রোতে ডুবে গেল আর একটি বছর। শনিবারের সূর্যোদয় হবে নব প্রত্যাশার ডানা মেলে। আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ঝলমলিয়ে উঠবে নতুন বছরের সূর্য। আজ থেকে বাংলা পঞ্জিকার পাতায় মহাকালের স্রোতে হারিয়ে গেল বঙ্গাব্দ ১৪২৪। স্বাগত ১৪২৫ বঙ্গাব্দ।
বাংলা একাডেমির বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরের প্রথম ৫ মাস (বৈশাখ-ভাদ্র) ৩১ দিনে গণনা করা হয়। আর বাকি ৭ মাস ৩০ দিনের।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে নানা অনুষ্ঠান-পূজা-পার্বণ-মেলা।
বাঙালি সংস্কৃতিতে বহুকাল ধরে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আগে পুরনো বছরের শেষ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয়। এজন্যেও আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। চলে চৈত্র সংক্রান্তির উৎসব। এ দেশে জমিদারির খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে বৈশাখী মেলার গোড়াপত্তন ঘটে। হিন্দু পঞ্জিকামতে, দিনটিকে মহাবিষুর সংক্রান্তি নামে গণ্য করা হয়। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এ দিন বর্ষ বিদায় উৎসব পালন করে। দোকানপাট ধুয়ে-মুছে বিদায়ী বছরের জঞ্জাল, অশুচিতা দূর করা হয়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মেলায় থাকে নানা ধরনের পিঠাপুলি, বাতাসা, হাওয়াই মিঠাই, খৈ-মুড়ি-মুড়কি, মাটির খেলনা, আরো কত কি! মেলাগুলো লোকজ গান-বাজনা, পালাগান, যাত্রাপালা, প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন থাকে।
পার্বত্যাঞ্চলে বৈশাখের বৃষ্টির পর ‘জুম’ চাষ শুরু হবে। জুম চাষের প্রস্তুতি হিসেবেই বিজু উৎসব। উৎসবের মূল দিনে অর্থ্যাৎ চৈত্রের শেষ দিনে ধর্ম অনুষ্ঠানে মিলিত হয় সবাই। নাচে, গানে ও নানা অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে।