‘সাইবার নিরাপত্তা’ বর্তমান সময়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সাইবার নিরাপত্তা বলতে মূলত বোঝায় কিছু সচেতনতা ও উপায় যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং ডিভাইসকে – হ্যাকিং ও বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখতে পারি। আমাদের স্মার্ট ডিভাইসটিও আজ ইন্টারনেট জগতের সাথে সংযুক্ত তাই সাইবার নিরাপত্তা হল সব ধরনের সাইবার তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ডিভাইস এর নিরাপদ ব্যবহার, তথ্যকে চুরির হাত থেকে রক্ষা, বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ থাকা। একটি মাউস ক্লিক সুগম করে দিতে পারে শক্তিশালী একটি ম্যালওয়্যার এর আগমন। সাইবার নিরাপত্তার হুমকিগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে, এই জগতে নিরাপদ থাকা সহজ হবে।
নেটস্কেপ আর্বর অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক DDoS আক্রমণ ২০১৮ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে ঘটেছে। প্রতি সেকেন্ডে ১.৭ টেরাবাইটের (টিবিপিএস) রেকর্ড করা হয়েছিল, যদিও আক্রমণটি পরবর্তীতে হ্রাস পেয়েছিল। এটি ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি গিটহাবের বিরুদ্ধে আক্রমণের পরে যা ছিল ১.৩৭ টিবিবিসি স্পীড আক্রমণ শীর্ষে। ইতোপূর্বে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেনমার্কের ডিওয়াইএন প্রদানকারী ডাইনাইনের বিরুদ্ধে সর্বাধিক পরিচিত আক্রমণের ঘটনাটি ঘটেছিল, যা ১.২ টিবিবিসি স্পিডে পৌঁছেছিল। এই হামলার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিটি Memcached Server DDoS নামে পরিচিত। Memcached সার্ভার ডেটাবেস অ্যাক্সেস প্রয়োজনে মেমরি মধ্যে ডেটা সঞ্চয় করে। কারণ বেশিরভাগ কোম্পানী প্রায়ই মেমোরি সার্ভার ব্যবহার করে দ্রুত গতিতে তাদের পরিসেবাগুলোতে বড় চাহিদাগুলি মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
সাম্প্রতিককালে বিশ্বের কয়েকটি দেশে ভয়াবহ সাইবার হামলা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল-
(১) ইউটিউব এর মাল্টি ন্যাশনাল হোস্টিং সার্ভিস ভিভো হ্যাক
(২) ইরানের বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক
(৩) ফেসবুক কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গ দ্বারা ফেসবুক ইউজারদের ব্যক্তিগত তথ্য পাচার
(৩) কলোরাডো ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রান্সপোর্ট পরিবহন আইটি সিস্টেমের ডাটাবেজ হ্যাক এবং গ্রাহকদের তথ্য চুরি
(৪) সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে হ্যাকারদের কর্তৃক ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক
উপরে বর্নিত হ্যাক সমূহের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের কম্পিউটারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে, বিভিন্ন দেশের অন্তত ২ লাখ রাউটার আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সাইবার হামলায় ইরানের ডেটা সেন্টারও আক্রান্ত হয়। ডেটা সেন্টারের ওয়েবসাইট হ্যাক করে মার্কিন পতাকা রেখে সেখানে হুমকি দেয়া হয়, “আমাদের নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা করো না।” জানা গেছে, নতুন এই সাইবার হামলায় বিশ্বের প্রায় ২ লাখ রাউটার ও ডিভাইস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫ হাজার ডিভাইস এবং চীনের ১৪ হাজার ডিভাইস আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ইরানের ৩৫০০ সুইচ।
এ বিষয়ে ইরানের তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ আজারি-জাহরোমি জানান, হ্যাকাররা তাদের বেশ কয়েকটি সাইটে হামলা চালায়। প্রায় কয়েক ঘণ্টাব্যাপী বিভিন্ন নেটওয়ার্ক সাইট বন্ধ করে দেয়। তিনি জানান, হামলায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউরোপ, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, হ্যাকাররা গত বছরের জানুয়ারিতে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশে প্রায় একই সাথে সাইবার হামলা চালায়।
বাংলাদেশের হ্যাকারদের কর্তৃক ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করা ওয়েবসাইটগুলো ছিল-
বঙ্গভবনের ওয়েবসাইট (bangabhaban.gov.bd)
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাট (www.pmo.gov.bd)
জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইট parliament.portal.gov.bd)
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (www.mha.gov.bd)
বিসিএস প্রশাসনের ওয়েবসাইট (bcsadminacademy. gov.bd)
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (moa.gov.bd)
১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে এসব সাইটে ঢোকা যাচ্ছিল না। তবে ১১ এপ্রিল সকাল থেকে হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলোকে সচল করা হয়।
হ্যাক হওয়ার অব্যবহিত পর রাতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা দুটি বিষয় ধারণা করছি। একটি হলো যারা কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলন করছে তারা হ্যাক করে থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, এটা শুধু বাংলাদেশের আক্রমণ নয়, এই আক্রমণ সারাবিশ্বে হয়েছে। সিসকোতে একটা ত্রুটির কারণে এটা হয়েছে। এই সময় এবং সুযোগও কেউ নিয়ে থাকতে পারে।