দেশে প্রাথমিক কৃষি পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, প্রাথমিক উৎপাদন প্রক্রিয়া, উৎপাদন-পরবর্তী সংরক্ষণে ‘গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস’ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে ‘গুড ম্যানুফেকচারিং প্রাকটিস’ অনুসরণ করা হচ্ছে না। উপরন্তু উৎপাদন-পরবর্তী কৃষি পণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে স্বল্প মূল্যের ক্ষতিকারক কীটনাশক ও প্রিজারভেটিভ। ফলে জনস্বাস্থ্য ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও আন্তর্জাতিক খাদ্যমান ব্যাহত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বিকাশমান খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের বিএমআরই (ব্যালেন্সিং-মডার্নাইজেশন-রিহ্যাবিলাইটেশন অ্যান্ড এক্সপানশন) করণের মাধ্যমে ‘রেডি টু ইট’ ক্যাটাগরির পণ্য রফতানি বাড়াতে ৮ দফা সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ‘বাংলাদেশের খাদ্যসংশ্লিষ্ট কৃষিজ পণ্যের অবস্থা এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিকাশ; সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক পথনকশায় এ সুপারিশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ‘অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’ এটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে উদ্ভিদ, মৎস্য ও প্রাণিজ খাদ্য, মধু ও মৌমাছির বিপণন, বোতলজাত পানি ও লবণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সারা বিশ্বে এগ্রো প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে ‘রেডি টু ইট’ ক্যাটাগরির পণ্যের বাজারের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি ডলার। এর বিপরীতে এ খাতে বাংলাদেশের রফতানি খুবই নগণ্য। প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে ‘রেডি টু ইট’ ক্যাটাগরির পণ্য খাতে রফতানি আয় ২০২১ সাল নাগাদ ৬০০ কোটি ডলার এবং ২০৪১ সাল নাগাদ আড়াই হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিনিয়তই দেশে এগ্রো-প্রসেসিং খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। নিজস্ব প্রসেসিং ইউনিট রয়েছে এমন প্রসেসড ফুড ম্যানুফেকচারিং শিল্পের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৭০০। এর মধ্যে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান ফল ও শাক-সবজি প্রক্রিয়াকরণ করে থাকে। বর্তমানে ম্যানুফেকচারিং পণ্যের প্রায় ২২ শতাংশ হচ্ছে এগ্রো প্রসেসড পণ্য। জিডিপি-তে এর অবদান হচ্ছে ২ শতাংশ।
‘খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ক্ষেত্রে কৃষিজ খাদ্যের মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে উৎপাদকের উদাসীনতা ও খাদ্য সংরক্ষণে অবকাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রে বিএসটিআই’র মনিটরিংয়ের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা দরকার। অন্যদিকে ‘রেডি টু ইট’ ক্যাটাগরির পণ্যের কাঁচামালসহ উৎপাদন স্তরের প্রতিটি স্তর নিয়ন্ত্রিত নয়। এসব পণ্য উৎপাদনে ‘গুড ম্যানুফেকচারিং প্র্যাকটিস’ অনুসরণপূর্বক উৎপাদনব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা এবং চুক্তিভিত্তিক চাষ চালু করা দরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৮ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিকাশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ; ভূমির উৎপাদন সক্ষমতা ও জলজ পরিবেশ নিশ্চিতপূর্বক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের চাহিদানির্ভর কৃষিজ পণ্য উৎপাদন ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সরবরাহ; প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে কৃষিজ পণ্যের এককপ্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রি ও পোস্ট হার্ভেস্টিং পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে কাঁচামালের অপচয় রোধপূর্বক প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে কাঁচামাল সরবরাহ ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতকরণ; খাদ্যের কাঁচামাল হিসেবে বিবিধ প্রাথমিক ও সেমি-প্রসেসড কৃষি পণ্য উৎপাদনে ‘গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস’ অনুসরণ, খাদ্যের বাংলাদেশ মান নির্ধারণ এবং নির্ধারিত মানের খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন নিশ্চিত করার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য মানের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টিকরণ; কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাদ্য শিল্প স্থাপন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সহজ ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, ট্যাক্স হলিডে সুবিধা ও রফতানির বিপরীতে আর্থিক প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি; কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাদ্য শিল্পের উন্নয়নে সরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য সহায়ক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষ জনবল তৈরি; সরকারি উপযুক্ত কোনো সুনির্দিষ্ট সংস্থার প্রয়োজনীয় সক্ষমতা সৃষ্টিপূর্বক বিধি-বিধানগতভাবে খাদ্য শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য দায়িত্ব অর্পণ এবং আগ্রাসী বিপণন কার্যক্রম গ্রহণ।