দেশের জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক, সুরকার ও সংগীতশিল্পী কৌশিক হোসেন তাপস। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে দারুণ অবদান রেখে চলেছেন। সংগীত বিষয়ক দেশের একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল গানবাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও তিনি। মিউজিক কোলাবরেশন প্রজেক্ট ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর মূল কারিগরও এ মিউজিশিয়ান। শুধু তাই নয়, সেরা সুরকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এদিকে সম্প্রতি চলচ্চিত্রশিল্পে ভারতের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা ‘দাদা সাহেব ফালকে এক্সলেন্সি অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ পেয়েছেন কৌশিক হোসেন তাপস। গত ২১শে এপ্রিল রাতে মুম্বইতে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য এক আয়োজনে ‘শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক (বাংলাদেশ)’ হিসেবে তিনি এই সম্মাননা পান। এর মাধ্যমে এবারই প্রথম কোনো বাংলাদেশী সংগীত পরিচালক ‘দাদা সাহেব ফালকে এক্সলেন্সি অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করলেন। সব মিলিয়ে কেমন আছেন? অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির অনুভূতি কেমন? কৌশিক হোসেন তাপস বলেন, প্রথমত এই প্রাপ্তিটা আমার না। এই প্রাপ্তিটা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আমার স্ত্রী ও তিন মেয়েকে এই অ্যাওয়ার্ডটা উৎসর্গ করছি। গানবাংলায় ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ এর তৃতীয় সিজনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এবার কেমন হচ্ছে আয়োজন? তাপস বলেন, এবার আমাদের সঙ্গে ২৪টি দেশের মিউজিশিয়ানরা কাজ করছেন। বেসিক্যালি তৃতীয় সিজন হলেও এটি কিন্তু আসলে ৫ নম্বর সিজন। কারণ প্রথম ও দ্বিতীয় সিজনের আগে আমরা প্রি সিজন-১ ও প্রি সিজন-২ করেছিলাম। দুটো প্রি সিজন করার আমার একটাই উদ্দেশ্য ছিল যে, আমার সিজন ১ যেন সেরা হয়। ফলে এবার সিজন ৩ এ এসে আমার দায়িত্বের পর্যায়টা এমন লেভেলে এসে পৌঁছেছে যে, দর্শক এবার এমন এমন সব মিউজিশিয়ানদের দেখবেন যাদের তারা অন্য কম্পোজারদের সঙ্গে বাজাতে আশা করেন না। যেমন- এ আর রহমানের সঙ্গে শিবা মনিকে মানায়। কিন্তু শিবা মনিকে অন্য কোন কম্পোজারের সঙ্গে দর্শক দেখেননি। এবার তাকে আমার সঙ্গে দেখবেন। পাকিস্তানের মিকাল হাসান জীবনে নিজের কম্পোজিশন ছাড়া বাজাননি। এবার তিনি আমার কম্পোজিশনে বাজাচ্ছেন। ভারতও দেখেনি এমন কিছু মিউজিশিয়ানও এবার বাংলাদেশের মাধ্যমেই এশিয়াতে পা রাখছেন। তাই এটা আমার জন্য একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিউজিক কোলাবরেশন প্রজেক্ট হিসেবেই ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’কে আমি দেখতে চাই। শোনা যাচ্ছে, ভারত থেকে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর ফ্যাঞ্চাইজি চাচ্ছে। সে সম্পর্কে জানতে চাই। তাপস বলেন, হ্যাঁ, ইতিমধ্যে মুম্বই ও কলকাতা থেকে আলাদা আলাদা ভাবে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর ফ্যাঞ্চাইজি চাচ্ছে। হয়তো সেটা হয়েও যাবে। সংগীত ছাড়াও আমাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও চ্যানেল চালানোর জন্য সময় দিতে হয়। সে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমার সময়ের স্বল্পতা আছে। এ দায়িত্বগুলো যদি না থাকতো তাহলে এ বছরই হয়তো ভারতীয় ফ্র্যাাঞ্চাইজিটা দর্শকরা দেখতে পেতেন। তবে আমাদের একটু সময় নিতে হবে। ‘কোক স্টুডিও’র সঙ্গে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর তফাৎ কি বলে মনে করেন? তাপস বলেন, ‘কোক স্টুডিও’ একটি লোকাল প্রজেক্ট। আর আমাদেরটা ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট। ‘কোক স্টুডিও’ যখন পাকিস্তানে হবে তখন সেটি পাকিস্তানি মিউজিশিয়ানদের জন্য, যখন ভারতে হবে তখন ভারতীয় মিউজিশিয়ানদের জন্য, আবার ‘কোক স্টুডিও’ যখন ব্রাজিলে হবে তখন সেটি হবে ব্রাজিলিয়ান মিউজিশিয়ানদের জন্য। কিন্তু ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ হলো গ্লোবাল মিউজিশিয়ানদের জন্য। এক স্টেজে দাঁড়ানো ২৪টি দেশের মিউজিশিয়ানকে নিয়ে কোনো প্রজেক্ট পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই। দেশের একমাত্র সংগীত বিষয়ক চ্যানেল গানবাংলা। কেমন দর্শক সাড়া পান? উত্তরে তাপস বলেন, দর্শক এখন ভালো গান অনেক বেশি গ্রহণ করছে। দেশের অপরাপর অন্য চ্যানেলগুলোর তুলনায় গানবাংলার প্রতি দর্শক রেসপন্স বেশি। দর্শক সেই সাপোর্ট আমাদেরকে দেখিয়েছেন বলেই আমরা মনে করি এই ধারাবাহিকতা যদি থাকে তাহলে সামনে আরো অনেক বড় ও ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো।