গ্রামীণ জীবনযাত্রা সাফল্যময় বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র (ইউআইএসসি)। এই প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদ।
কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, হাটবাজার, আইন পরামর্শ, জম্ম সনদ, মৃত্যু সনদ, জাতীয় সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যায়ন পত্র, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, আবেদন, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি চাকরির আবেদনসহ নানা সমস্যার সমাধান খুঁজতে গ্রামের লোকজন এখন ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের উপর নির্ভর করতে শুরু করেছেন।
আখাউড়া উপজেলায় এরইমধ্যে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর ভুবন এখন গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য উম্মুক্ত হয়েছে। এখন তারা ঘরে বসেই সব সেবা পাচ্ছেন। সেবা নিতে আসা দিন দিন লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিজিটাল সেবায় বদলে যায় গ্রামীণ জীবন যাত্রা।
জানা যায়, দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা দিতে সরকার ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু করে। প্রতিটি কেন্দ্রের মধ্যে ল্যাপটপ, ফটো-কফিয়ার, মডেম, ক্যামেরা, স্ক্যানার, প্রিন্টার ও মাল্টিমিডিয়া স্কিন সরবরাহ করা হয়েছে। এগুলো পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎসহ জেনারেটরের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ফলে জনগণের সেবা প্রাপ্তির জন্য আর্থিক সাশ্রয়ে এ সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। জনসাধারণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে না।
প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পযর্ন্ত চলছে এ কার্যক্রম। গ্রামের মানুষের মাঝে নিরন্তর তথ্য প্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা। বর্তমান সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে সফল বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে দু’জন উদ্যোক্তা থাকার কথা থাকলেও কোনো কোনো স্থানে ১ জন করে রয়েছেন।
আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়টি পৌর শহরের মধ্যে রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় গ্রামের বিভিন্ন বয়সী বেশ কয়েকজন লোক এসেছেন।
মো. শরীফ হোসাইন বলেন, জমির পরচা ও ওয়ারিশ সনদ নিতে মূলত তার এখানে আসা। স্বল্প টাকায় এ সেবা পেয়ে তিনি খুবই খুশি।
মোছাম্মাৎ আকলিমা আক্তার বলেন, তথ্যসেবা কেন্দ্রে এসেছি আমার ছেলের জন্ম সনদের ইংরেজি কম্পোজ করাতে। এটি স্ক্যান করে ছেলের বাবার কাছে বিদেশে পাঠাব। কোন প্রকার দুর্ভোগ ছাড়াই অতি সহজে করতে পারায় তিনি খুবই খুশি।
উদ্যোক্তা মো. শাফায়েত হোসেন বলেন, এই কেন্দ্রে দু’জন উদ্যোক্তা থাকার কথা থাকলেও বর্তমান রয়েছেন একজন। তবে প্রক্রিয়া রয়েছে আরো ১জন নেয়ার।
তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিন প্রচুর কাজ হয়। বিরামহীনভাবে তাকেই এই তথ্যসেবার কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণকে সেবা দিতে পেরে আনন্দিত। এখান থেকে যে আয় হয় এতেই তিনি খুশি।
জানা যায়, ২০১০ সালে এ উপজেলায় ইউনিয়ন তথ্যসেবার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
এসব তথ্য কেন্দ্র থেকে ছবি তোলা, কম্পোজ, ফটোস্ট্যাস্ট, ইন্টারনেট ব্যবহার ও ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানসহ সব সুবিধা পাওয়া যায়। সেখানে পাওয়া যায় ইলেক্ট্রনিক্স জন্ম নিবন্ধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, কৃষি, শিক্ষা, মুক্তিযোদ্ধাদের ডাটাবেজ, মোবাইলে ফ্ল্যাক্সিলোড, অনলাইনে নিবন্ধনের কাজ, স্বাস্থ্যসেবা, হাটবাজার, আইন পরামর্শ, জন্ম-মৃত্যু সনদ, জাতীয় সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যায়ন পত্র, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, আবেদন, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকুরির আবেদনসহ নানা সুবিধা।
আইটি সম্পর্কিত সব ধরনের কাজ তারা এই তথ্য কেন্দ্রে করার ফলে সারা বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। গ্রামে বসবাসকারী বৃহৎ জনগোষ্ঠি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা নিয়মিত এ তথ্যসেবা পাচ্ছেন।
আখাউড়া উপজেলা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন জনগণ তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে ই-তথ্য সেবা নিয়ে থাকেন। এ সেবা চালুর পর থেকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেক কমে এসেছে।